কবিতার খসড়া
এখানে রাত্রি যখন বুঁদ হয়ে আছে নেশায়,
তুমি তুষারের দেশে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনো,
তোমার হেঁটে যাওয়া দেখি, গামবুট, বাদামী ওভারকোট,
মিশ্রবর্ণা দস্তানা,কানটুপির মসৃণ আদর
তবুও কেঁপে ওঠো স্পর্শের অভাবে! হ্যালুসিনেশন?
কিন্তু একই দৃশ্য বারবার কেন আসে ,এক ধরণের স্বপ্ন?
কেবলই মেরুপথ পরিক্রমণ
পূর্ব ও পশ্চিমে যাত্রানাস্তি…..
এও এক বিস্ময়, আমি কালজয়ী কোনো বাক্য
মুখস্থ করতে পারিনি! ভালোবাসার কথাগুলি
একটু সাজিয়ে বলতে জানলে হয়তো সোনালি লাগাম ঘোড়ায় চড়ে
ইভানুশকা এসে তুলে নিতো আমাকে, কোনো আপেল বাগানে
সোনার আগুন পাখিটা গাইতো! অবিরাম নিরাময়
কোরাসের সুরে বলতো, ‘অতঃপর তারা সুখে-শান্তিতে
বসবাস করতে লাগলো! ’
আজ পুত্রের জন্যে রূপকথা কিংবা প্রাসাদ রহস্যের
কবিতা শুনতে শুনতে মনে হলো
ওখানে আমিও বায়ুছায়া অথবা যাত্রার বিবেক ।
রাতের বাতি নিভে যাবার পর কোনো কোনোদিন
পড়ার ইচ্ছেটা প্রবলতর হয়, ব্রেইল পদ্ধতিটা
না শেখার আফসোস নিয়ে ভাণ করি যেন মরকতমণি
ঘেরা একটা ঘুম এসেছে, হঠাৎ তৃতীয় পৃথিবীর
প্রভু নড়ে ওঠেন আর ইচ্ছেসন্ন্যাসের
বোঝা নিয়ে দুঃখী চেহারার ফাদার লুইজি
প্রভু সলোমনের সঙ্গীত আউড়ে যায়…
গ্রেভইয়ার্ডের সন্ধ্যা আমি দেখেছি, লাইমস্টোনের
কফিনগুলিতে ফাটল যেন কোন আত্মা
অতৃপ্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বেরিয়ে পড়েছে, এখন
এই কালো ছোপের পৃথিবীতে সম্ভোগরত আমার
কাঁধে সে তার দাঁত বসিয়ে দেবে
নিষ্ঠুর ভ্যাম্পায়ারের মতো
কঠিন শব্দার্থগুলি আজ থাক,
পেয়ালায় ঢাকা আছে দুধের পায়েস,
শিশু হই ;মুগ্ধ চোখ তুলোর পুতুলে ।
তারপর সেই রক্তচোষাদের আখ্যান শেষ হলে
আদিরসের পর্বে আচানক প্রবেশ করি, ততক্ষণে
মায়াবী পুতুল যৌবনের হাত থেকে খসে গেছে—
আজকাল সবকিছুতেই বিচিত্র এক সুড়সুড়ি!
পাশবিক গন্ধ দিয়ে তৈরী হয় ফরাসী সৌরভ
অনাকাঙ্ক্ষার মূলে ছুঁইয়ে দাও, বিশ্বজয়ী হবে…
লেহ্য-পেয় এরকম কিছু ব্যাকরণে
পড়েছিলাম নাকি চার্বাক দর্শনে? মনে রাখতে নেই
শয্যা কতবার ধুলো কুড়ালো? বহু ব্যবহারে
আত্মা মরে যায়? সাঁইজির মন্ত্রে মনকে সঁপে
দেই দেহনশ্বর সেজদায়, পূজা কিংবা ঈস্টারের
ধর্মগীতে
একদিন প্রপাতের গায়ে লেগেছিলো রঙধনু, একটা
ফড়িং পথে ঈশ্বরের আহ্বান;সেই ঈশ্বর যিনি
আমার কিংবা তোমার মতন মজুর, পদাতিক, ভবঘুরে..
আমার সামনে অবাক কিছু চিহ্ন পড়ে আছে,
কয়েকটা ঘাস, একটা অযান্ত্রিক ফড়িং, সরু গিরিখাত,
মানচিত্র থেকে হারানো ঝর্ণা আর গিরিবাজ কবুতর,
অতঃপর এক লুপ্ত সভ্যতার কাছে পৌঁছাই, ততদিনে
পরমাণুযুগ পৃথিবীকে গ্রাস করেছে, সেই সভ্যতায়
লুকিয়ে থাকা মানুষগুলি আমাকে
একটা পবিত্র ফুলের কাছে নিয়ে যায়, “এখানেই
আমরা তোমার আত্মাকে সংরক্ষণ করেছি…”
আমার আত্মা যা রক্ষিত একটা রঙধনু পাত্রে, পৃথিবীর
অন্তিম বেলাভূমি সেখানে আড়াল করেছে
যুলকারনাইনের পদচিহ্ন অলিভের ছায়ায়, কোন ভ্রম
নয়! নিজেকে আঘাত করি ক্রমাগত, অনুভব
বাস্তবের আবাহন বয়ে আনে যদিও আমি বিক্ষত হই,
দাগ বসে যায়, কেবল অনুভূতি
উলঙ্গ শিশুটির মত খিলখিল করে হাসে…
এক শ্যামাঙ্গী অধরা হাত বাড়িয়ে ডাকে, ‘আমাকে চিনতে পারিস?’
অ্যালবামের প্রথম পৃষ্ঠায় তাঁর শুশ্রূষার মত হাসি
আমি প্রতিদিন দেখি, কি মায়া! ‘তুমি নীরু খালা’! ‘ঠিক, কিভাবে চিনলি?’
তোর জন্মের আগেই আমি মৃত…
আমি তাকে জড়িয়ে ধরতে চাই সেই ছয়মাস দিনরাত্রির
তুষার জমিনে, নর্দান আলোয় চোখ অন্ধ হয়ে আসে,
‘এখনও সময় হয়নি তোর, জলের সুড়ঙ্গে আমার
খুব কষ্ট হয়েছিলো, হৃদপিণ্ড ফেটে একটা বুদ্বুদ তারপর
বুদ্বুদের ঝড়… তখন ভালোবাসার মানুষটা আমাকে
বুকে টেনে নিলো,’ তার কথা মায়াবী বাষ্পের মত আমাকে
ঘোরনগরে নিয়ে যায়…
‘আমার ভালোবাসার মানুষটা…
ক্যাম্পের অন্ধকার ঘরটায় ওরা তাকে খুঁচিয়ে হত্যা
করেছিলো, তুলে নিয়েছিলো চোখ, নখগুলি… তুই জানিস না?
একাত্তরে তোর জন্ম হয়নি কিন্তু একটা যুদ্ধের
নিষ্ঠুরতাকে জানতে যুদ্ধ দেখা কি জরুরী? সৈনিকের জীবন!’
অনন্তর এক পিচ্ছিল নগরীর জনসমুদ্রে হাবুডুবু, আমাদের
জন্য উনিশ শ একাত্তরকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে
পাঠ্য কিতাবে, মনুমেন্টে, যাদুঘরে এবং বিকৃতির এক
আদিপুরুষ ক্যান্টনমেন্টে বসে যুদ্ধ এবং যোদ্ধাকে বিভক্ত করার
পথ তৈরি করে গেছে;বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা তার যোদ্ধা খেতাব ফেলে
পুজো করে পান্তা লবণের !
ভাবনার সুতো মর্ত্যলোকেই পুড়ুক, আমাকে দশটি
আদেশের মর্মার্থ বলুন মহামান্য মোজেস; তুর-দহণে
বিলীন আপ্তবাক্য, তবে কি সন্তের জীবন নির্বাচিতের জন্যেই
কেবল? প্রভু কার নির্বাচন! প্রভুর সন্তানেরা!
লঘুত্বের সীমা দ্রাঘিমাংশের নীচে খসে পড়ে, আর আমরা পাপ পাপ
বলে শ্লোগান দিতে থাকি পূণ্যপ্রার্থনায়,
কোষের হিরোয়িক ঝিল্লিতে একটা
বদমাশ পাগল ঈশ্বরের সঙ্গে পাশা খেলার ধৃষ্টতা দেখায়
একজন বর্ষবিশেষ পাগল আমাদের তিনপুরুষ পুরোনো
তালগাছটার নীচে রোজই পেচ্ছাব করতে করতে বলতো, ‘এত জল
দেই তবু ফল দিস না ক্যান!’ দ্বিতীয় পুরুষ থেকে পরাগায়িত
না হওয়ার কষ্টে যে ধুকছে তাকে স্বপ্ন দেখাতে এসে
এক পাগল ও একটি কুকুরের গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে, এই
ট্রায়াঙ্গেল আসলে একটা জীবনের প্রতীক, বাকি সব অসাড় এবং
ধূর্ত চাওয়াগুলির দিকে ছুঁড়ে দেই বহুরঙা জল
এবার কুরুক্ষেত্রবোধন হোক
তোরা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে চিনবি না কোনদিন।
সৃষ্টির রহস্য আমাকে এক ধূপছায়ার আবরণে বন্দী করে, কেবল
একটি শুক্রানুর কাছে পরাজিত ডিম্বানুই কি প্রথম সোপান?
পাঠ্যপুস্তকের মত করে নয়, কেউ আমাকে সহজ করে বলো,
জিজ্ঞাসা নিয়ে দাঁড়িয়েছি, ‘বাবা, বলো আমাকে, মা, বলবে
বিষয়টা কতগুলি স্তর পার করে? বড় দি !’ কেউ বলে না
বরং চারফুটি মেয়েটার দিকে সবাই একটা কয়লার আগুন
চোখে তাকায়, আমি নিষিদ্ধ ঝোপের দিকে পা বাড়াই…
একদুপুর রোদঝাপি নিয়ে কেউ একজন
হাত টেনে বলে, আয়, আমরা শীতবুড়ি খেলি, তুই শীত,
আমি রোদ্দুর, তারপর স্বপ্নভাঙার আখ্যান শুরু হয়..
যে ঘরটায় চাবি দেয়া পুতুলগুলি
থাকতো তারা রক্তমাংসের হয়ে উঠতে শুরু করে!
কালভেদী পথে সুচতুর এক স্বর্গারোহণ ক্রোমোজোমিক আকর্ষণকে
নিউট্রাল করে দিতে থাকে, পাপিয়া মিস্ আশ্চর্য সুন্দরী
ছিলেন বলে তাকে আমরা ইংরেজ বলতাম, একদিন হাসপাতালের
সাদা বিছানায় শুয়ে পাপিয়া মিস্ আমাদের মাথায় হাত
ছুঁইয়ে বললেন, ‘তোরা কেউ সন্ধ্যাবিলের পথে যাবি না বল্,
আমাকে দিব্যি দিয়ে বল্, এই আমার দেহে যখন ক্ষয়ে যাচ্ছে রক্তের
লালকণা, আমি তোদের তিনজনকে আমার নির্মোহ আত্মা ভাগ
করে দিলাম, নরকদর্শনে ভয় লাগে তাই যখনই
পারিস একটা লাল গোলাপ দিস আমার কবরে ।’
কারো কথাই আমরা রাখতে পারি না, মানুষ অতীত হয়ে গেলে
স্মৃতি ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে তারপর বেঁচে থাকার
আনন্দ নিয়ে আমরা পান করি, বসন্তোৎসবে যাই, পার্টির রহস্য
আলোয় অচেনা মানুষটার কোমর জড়িয়ে ধরে নাচি, আমাদের দেহে
পরমপিতা সাংঘর্ষিক বিক্রিয়া তৈরী করে আর ভাটির
সমতলে বিগত মুখগুলো অপেক্ষা করে থাকে।
সেই মানুষগুলি, যারা আগুনের পাশে গোল হয়ে বসে
স্মৃতিচারণে মগ্ন হয়, যাদের উজ্জল দিনের ছবিগুলিকে আস্তাকুড়ে
ছুঁড়ে তাদেরকে পরিবার থেকে বিযুক্ত রাখতে ভালোবাসি;
বৃদ্ধাশ্রম শব্দটা মগজে নাড়াচাড়া করি, আমাদের মিশকালো
পৃথিবীর কোথাও পরিতৃপ্ত উল্লাস নেই, আমরা মূলত বিবর্তিত
মাখলুকাত যারা চারদেয়ালে নানারঙের ডিসটেম্পার করি,
ড্রয়িংরুমে বাঘছাল সাজাই, অবোধ্য পুস্তক এবং সাহিত্য আসরের
ন্যাকা বৈষ্ণব
ছেলেবেলায় মা চুলে হাত না বুলিয়ে দিলে ঘুম আসতো না, আর ঐ
গল্পগুলি! কোন শাপে নদের চাঁদ কুমির হয়ে গিয়েছিলো, বেহুলার
বাসরে কিভাবে প্রবেশ করলেন মা মনসা কিংবা একটু পানির জন্য
সাফা-মারওয়া করছেন নির্বাসিতা বিবি হাজেরা, শিশু ইসমাঈলের
গোড়ালির আঘাতে পাথুরে মরুতে জলের নহর, আমিও এসব শোনাইনি
আত্মজাদের! ওরা বিশ্বাসই করতে চায় না, রোজ দুই মাইল হেঁটে
স্কুলে যেতাম, আমাদের কোন ইউনিফর্ম ছিলো না, আমরা অনেকেই
হয়তো রাবারের চপ্পল পায়ে দিতাম কিন্তু অনেকে খালি
পায়েই চলে আসতো, অনেকগুলো বাঁশের সাঁকো পেরোতে হতো, হঠাৎ
বৃষ্টি এলে কখনো কারো ঝাড় থেকে ছিঁড়ে নিতাম কলা পাতা বইগুলি ঢাকতে,
আমাদের সুদৃশ্য কোন ব্যাগ ছিলো বইখাতার জন্যে, আমরা সন্ধ্যায়
হারিকেনের আলোয় পড়তাম আর আমাদের ঘড়ি যেহেতু ছিলো সূর্য
তাই রাতে সময়ের হিসেবটা কষতে পারতাম না
এসব বলতে বলতে আমি আর মহাশ্বেতা মগ্ন হই স্মৃতির খেলায়।
মহাশ্বতা এখন ডাক্তার কিন্তু এখনও সেইরকম গাট্টা না বসিয়ে ও কথা
শুরু করতে পারে না, উনিশ শ আশি সালে ধর্মপটুরা
ওদের ঘর পুড়িয়ে দেয়, আর ধর্ষিতা মহাশ্বতা ওর পরিবারের সাথে পালিয়ে
যায় ভারতে, সেই অপমান আমার থিকথিকে হৃদপিণ্ডে
ভোজালি চালাতে থাকে, আমি কিংবা মহাশ্বতা অথবা মহাশ্বেতা ও আমি
একটাই শরীর হয়ে যাই যেখানে পাশবিক চিহ্ন আকৃতি রেখে গেছে
আর মনের ভিতর কুৎসিত আঁচড়, যমদূত আসার পরেও হয়তো সে
পুং গোত্রীয় ভেবে আমরা শিউরে উঠবো; মৃত্যুযন্ত্রণার কথা ভেবে নিশ্চই নয়,
মহাশ্বতা এখনো এই দেশে আসে কিন্তু পিতৃভিটায় সে কখনই যায় না ।
আমাদের পিতৃভিটা আসলে কোথায়? অ্যালেক্স হ্যালির ‘দ্য রুটস’ পড়তে
বসে ভাবি, আমরা অনার্য, আমাদের রক্তে ইংরেজ, ফরাসী, পর্তুগীজ, আরব
কিংবা আরাকানী রক্তের মিশেল আছে, বহুকাল আগে আমাদের পূর্বপুরুষ হয়তো
কোন সম্ভ্রান্ত সনাতন ছিলেন অথবা হরিজন, এমনও হতে পারে
মিশনারীর কোন প্রভুভক্ত সন্ন্যাসিনীর হঠাৎ মতিভ্রমের ফল আমি!
প্রভু আমাকে প্রজ্ঞা দাও, পরিমিতি ও তোমায় প্রেমের দীক্ষা,
মিস মার্থা ওলসেন হয়তো কখনও ভাবেননি তিনি কোন মানবের
প্রেমিকা হবেন, কোন মানব সন্তানকে ধারণ করার পর
পাপবোধ তাকে দ্বিখণ্ডিত করায় সন্তানের মুখ তিনি দর্শন করেননি! হয়তো
প্রভুর সেবায় জীবনের স্খলন মোম ও ধূপে ধুয়ে গেছে! কিন্তু অভিশাপ?
কোন শিশুর অবুঝ দীর্ঘশ্বাস ইথারীয় বার্তার মত বিশ্ব ছুঁয়ে
মহাকাশের দিকে ছুটে যায় যদি ঈশ্বর কোন পাত্রে তা ধারণ করবেন?
পাপ কি? পূণ্য? ঈশ্বরের বার্তাবাহক যা বলবেন, ঘুরেফিরে তা একই ।
কে তুমি অপেক্ষমান মৃত্যু নদীর ওই পাড়ে? কে তুমি? ‘মরণের আগে পরে’
এইরকম কিতাব আমিও পড়েছি, বলুন প্রফেট, আপনি শক্তিমান এবং জ্ঞানী,
নিশ্চই নিজ দেহ ত্যাগের পর সত্যটা আমাদের জন্য উম্মোচিত
করার ক্ষমতা রাখেন? এখানেও বাতাস আশ্চর্য নীরব! দেয়াল বধির…
দেহকোষের ক্ষয় মৃত্যুকে আহ্বান করে কিন্তু যেইসব দেহ এখনও কচি শর্ষে
ডগার মত সতেজ, তারা কেন স্বপ্নকে বাতাসে ওড়ানোর
আগেই হারিয়ে যাবে? এখানে এসে আমিও কি অনিশ্চিত বুড়োটার মত
বলবো, ‘সবই কপালের ফ্যার, তকদিরের ল্যাখন কাইট্টা
কোন ঘর বান্ধিমু!’ আত্মার খাদ্য নেই,আমি তৃষ্ণার্ত বরং সন্ধিঘরের
দিকে যাই, আমার আত্মা নির্বাণ লাভ করুক ।
এইসব অদ্ভুত গল্পের ফাঁক গ’লে একটি সুরভিত বীজের অঙ্কুরোদগম
ঘটে; ভাদ্রের খরায় বাসন্তিমেদুর প্রেম, বহুকাল আমি ঈশ্বরকে
ভুলে ছিলাম, মনে পড়ে ধ্যান-পাঠ-অভ্যেস-মুগ্ধতা-বিস্ময়-ক্ষমতা এইসব
যা আটকে ছিলো ধূর্ত মাকড়সার জালে, হয়তো আমি মুক্ত হতে চাইনি
কারণ আকাশ দেখতে চাইলে তা কেবলই খণ্ডিত হয়ে যেতো
ধূসর গ্রীলের জানালায়… অতঃপর আমি ছায়াগালিচায় শুয়ে পূর্ণাঙ্গ
আকাশ দেখলাম অজড় ভয়কে পৌনঃপুনিক চপেটাঘাত করে
সেই নক্ষত্রের বুটিক রাত্রিনীলে ছেলেবেলা নির্লোভ ঘুমায় এবং
শ্যামল দত্ত, হ্যাঁ, যার কথা কোনদিনই কাউকে বলা হয়নি, এ ও এক দূরুহ
পণ, গোপনীয়তা জরুরী! কেবল এটুকু বলা যায়, আর সব
গল্পের মতই এটা এক ত্যাগের বর্ণনা, আমরা ধর্ম নয়
নিজেদের ত্যাগ করেছিলাম ধর্মের জন্য…. বছরের দীর্ঘ রাত
সুবহে সাদিকের বুকে খসে পড়ে, আমি আলাদা উপাখ্যানের
সূচনা পর্ব অসমাপ্ত রেখে তন্দ্রাঘোরে হারিয়ে যেতে থাকি ।
- ঢাকা -
সুচিন্তিত মতামত দিন