
‘বলহরি হরিবোল, বলহরি হরিবোল’, সকালবেলার ঘুমটাই মাটি। উঠে বসলাম । কার ঘরে সর্বনাশ হল কে জানে? ঘড়িতে দেখলাম সবে ভোর চারটে। একতলায় ঘর, উঠে গিয়ে জানলায় দাঁড়ালাম। চার কাঁধে দুলকি চালে দুলতে দুলতে সাদা কাপড় ঢাকা ন্যাতানো রজনীগন্ধার মালা সাজানো খাটিয়া একটা মৃতদেহ নিয়ে এগিয়ে যচ্ছে শ্মশানঘাটের পথে। চারবাহক ছাড়া সামনে একজন খই ছড়াচ্ছে আর পিছনে একজন মাতালের মত টলতে টলতে যাচ্ছে, মত কি, মাতালই মনে হচ্ছে। তার পিছনে রাস্তার রাতজাগা গোটা দুই তিন কুত্তা। ভোরের মিঠেল বাতাসে ফুল-ধূপ চন্দনের গন্ধ ভেসে আসতে সাড় ফিরল। দুইহাত জোড় করে প্রণাম করতে যাবো দেখি মধুগোয়ালা সাইকেলে দুধের ক্যান নিয়ে আসছে।
- ‘ও মধুকাকা কে গেল গো?’
- ‘কে আবার ঐ হাড়বজ্জাত মদনামাতালটা।‘
- ‘সেকি, কি হয়েছিল ? পরশুও তো রাস্তায় মাতলামো করে গালি খাচ্ছিল।‘
- ‘কি বলবো ছোটবাবু’, মধুগোয়ালা সাইকেল থেকে নেমে জানলার কাছে এগিয়ে এসে গলা নামিয়ে বললো, ‘ঐ হাড়কাটা গলির সোনাবিবির ঘরে পরশু রাতে মদ গিলে সে কি বেসামালদশা,পরদিন সকাল থেকেই বমি দাস্ত।বিকালে ও পাড়ার মেয়েগুলো মিলেই হাসপাতালে নিয়ে গেছিল। রাতেই পটল তুলেছে।‘
- ‘তা বলে এত বড় ঘরের ছেলে এভাবে হাঘরের মত’…
তীব্র ঘৃণায় মুখ কুঁচকে মধুকাকা বললো,
- ‘ ঘর? থুঃ … থুথু ফেলি অমন বড় ঘরের ছেলের মুখে, একটা শুয়োর কোথাকার ।যেমন বাপ দাদা তেমন তাদের বাঁশঝাড়।তাও যে শ্মশানে পোড়াতে নে যাচছে লোকে তাই ঢের, আমি পারলে তো ভাগাড়ে ফেলে আসতাম।‘
-
মধুকাকার রাগ অযৌক্তিক নয়, ওনার বড়মেয়ে ফুলমতিয়া কিশোরী বয়সেই এলাকার পূর্বতন জমিদার বাড়ীর সেজ শরিকের মধ্যমপুত্র মদনমোহনের যুবাকালের বিলাসের দোসর হয়ে আত্মহত্যা করেছিল শুনেছি। কম লোকের সর্বনাশ তো করেনি এই মদনমোহন ওরফে মদনামাতাল। মৃতব্যাক্তি স্বর্গলোকযাত্রী, প্রণম্য, প্রনাম করতে হাতটা বুক অবধি উঠেছিল, আর উঠলো না, তখনই এক দমকা বাতাসে ফুল-ধূপ চন্দনের গন্ধ ছাপিয়ে উৎকট পচা মরার গন্ধ ভেসে এলো। অসহ্য গন্ধটা চাপা দিতে ভ্যাপসা গরমেও রাস্তার দিকের জানলাটা বন্ধ করে দিলাম।।
- কলকাতা -
সুচিন্তিত মতামত দিন