
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সঙ্গীতে যে জোয়ার এনেছিলেন , কবি নজরুল গীতিকার নজরুলরূপে সেই প্রবাহমান ধারাকে প্লাবনে পরিনত করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে জনসাহিত্য সংসদের উদ্বোধনী সভায় সভাপতির ভাষণে নজরুল বলেন- ‘সাহিত্যে আমার দান কতটুকু জানা নেই, তবে এটুকু মনে আছে সঙ্গীতে আমি কিছু দিতে পেরেছি।’এই ‘কিছু’ আসলে নজরুলের বিনয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি দিয়েছেন অনেক-অপরিমেয়। বাংলা সঙ্গীতকে বহুরূপে ঝংকৃত করেছেন, প্রাণবন্ত করেছেন।
কবি নজরুল তার সৃষ্টিকর্মে সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সঙ্গীত সৃষ্টিতে রেখেছেন অসামান্য পান্ডিত্য। সঙ্গীত দিয়েই সঙ্গীতজ্ঞ নজরুলের সৃষ্টিশীল জীবনের শুরু এবং সঙ্গীতই তাঁর অমরত্বের অন্যতম প্রধান উপাদান। কাব্য ও বানী মূল উপজীব্য হলেও, নজরুল গীতির প্রকৃত সৌন্দর্য প্রতিভাত হয় সুর বৈচিত্রে। নজরুল তাঁর সীমিত কর্মজীবনে তিন হাজারেরও বেশী গান শুধু রচনাই করেননি, এর অধিকাংশই ছিল তাঁরই সুরারোপিত। এই একটি জীবনে তিনি একাধারে রচনা করেছেন কাব্য সঙ্গীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীত–শ্রমিক-কৃষকের গান, সম্প্রীতির গান, জাগরণের গান,গজল,নাত, হামদ, কাওয়ালী, ইসলামী ভক্তিগীতি, শ্যামাসঙ্গীত, কীর্তন, ঝুলন-সঙ্গীত, ভাওয়াইয়া, হাসির গান, কৌতুকগীতি, কাব্যগীতি, লোকগীতি – ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, ঝুমুর, সাঁওতালী, কাজরী, বাউল, মুর্শিদী এবং আরও নানা বর্ণের গান।শিশুদের জন্যে সঙ্গীত, এমনকি বাউল সঙ্গীত রচনা করেছেন তিনি। তাঁর ‘নবরাগমালিকা’, ‘হীরামনি’, সম্পূর্ণ শাস্ত্রসম্মত। বাংলা গানে সার্থক ঠুংরী রচনা তাঁর অবিনশ্বর কীর্তি। এ শ্রেণীর গানে তিনি ভৈরবী, পিলু, খাম্বাজ, কাফি, দুর্গা, মান্তু, আশাবরী, যোগিয়া, মুলতান, সিন্ধু, কালাংড়া প্রভৃতি রাগ রাগিনী ও দাদরা, কাহাররা, যৎ লাউনী, একতাল, কাওয়ালী, আদ্ধাকাওয়ালী, তেওরা প্রভৃতি বিভিন্ন তাল ব্যবহার করেছেন। নতুন কিছু রাগও তিনি সৃষ্টি করেছেন। নজরুল বলেন, ‘বেনুকা ও দোলনচাঁপা দুইটি রাগিনীই আমার সৃষ্টি।’ তাছাড়া তিনি নির্ঝরিণী, বেণুকা, মীনাক্ষী, বনকুন্তলা, সন্ধ্যামালতী, আশাভৈরবী মীনাক্ষী, আশা ভৈরবী, অরুণ, যোগিনী, সন্ধ্যামালতী, উদাস ভৈরবী, অরুণ রঞ্জনী প্রভৃতি রাগ সৃষ্টি করেছেন।
তাই গান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী নজরুল অকপটে বলে গেছেন, ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দেবো না ভুলিতে’ কিংবা ‘আমায় নহে গো ভালোবাসো, শুধু ভালোবাসো মোর গান’।
মোহিত লালের ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায় তাঁর বিরুদ্ধে নানা ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ করে লেখা প্রকাশ করা হয়। তবুও নজরুল আঘাতের পরিবর্তে পালটা আঘাত না করে তাঁদের প্রতি আরও নমনীয় হলেন। এইসময়েই তিনি শ্রীযুক্তা গিরিবালা দেবীর কন্যা প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন। করুণাময় গোস্বামী (১৯৭৮:৭৮-৮০) বলেন, নজরুল এক পর্যায়ে কালী-সাধনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। আজহার উদ্দিন জানিয়েছেন: ‘বাড়ীর চিলে কোঠায় কালী প্রতিমা স্থাপন করে সকাল সন্ধ্যা মন্ত্রজপ করতে শুরু করলেন। কোন কোন বার নিরম্বু উপবাস করে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে পূজা গৃহে দিন দুই কাটিয়ে দিতেন।’ কমলা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন: ‘গিরিবালা দেবীর ঠাকুর ঘরে দশভূজা শ্যামা মূর্তির পট ছিল। রাঙাদির (প্রমীলা) অসুখের শুরুতেই নজরুল সকালে স্নান করে পট্টবস্ত্র পরিধান করে চণ্ডীপাঠ করতেন।’এরপরও যারা বলবেন যে, শ্যামা সঙ্গীত রচনা কবির প্রাথমিক সময়ের ফরমাশি লেখা, তাদের ন্য আমি একটা কথাই বলতে পারি,” বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।“
নজরুল কোনদিনই "ধার্মিক" (Religious) ছিলেন না; তিনি ছিলেন "আধ্যাত্মিক" (Spiritual)! তাই তিনি শ্যামাসঙ্গীত-ও লিখেছেন, আবার ইসলামিক গজল-ও।
যদিও’ নজরুল রচিত ইসলামী সঙ্গীতের সংখ্যা কোন বিচারেই ৩০০ এর অধিক নয়, অপরদিকে হিন্দু ঐতিহ্য আশ্রিত তাঁর গানের সংখ্যা সর্ববিচারে সহস্রাধিক এবং উভয় ক্ষেত্রের গানেই তাঁর মমত্ববোধ, প্রেমভক্তি সমভাবে লক্ষণীয়।ইসলামী গানগুলোর মধ্যে ‘আল্লাতে যার পূর্ণ ঈমান/ বক্ষে আমার কাবার ছবি/ বাজলো কিরে ভোরের সানাই/ আয় মরু পারের হাওয়া/ দিকে দিকে পুনঃ জ্বলিয়া উঠিছে/ আল্লাহ আমার প্রভূ/ তওফিক দাও খোদা ইসলামে/ তোরা দেখে যা আমিনা/ সাহারাতে ফুটলোরে/ ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ/ মরুর ধুলি/ মোহাম্মদ মোর নয়নমণি/ আমি যদি আরব হতাম/ আমার মোহাম্মদের নামের ধেয়ান/ মোহাম্মদ নাম যতই জপি/ এই সুন্দর ফুল/ হে প্রিয় নবী/ দে যাকাত/ নূরের দরিয়া/ এ কোন মধূর শরাব দিলে?’ ইত্যাদি উল্লেখ করা যায়। একইভাবে সনাতন ঐতিহ্য আশ্রিত গানের মধ্যে এল নন্দের নন্দন/ আমার হাতে কালি মুখে কালি/ বল্রে জবা বল/ ব্রজগোপী খেলে/ আমি কি সুখে লো গৃহে রব/ শ্যামা নামের লাগলো আগুন/ হে পার্থ সারথী’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
অসীম প্রাণশক্তির অধিকারী আবেগী ও সংবেদনশীল এই কবির এমন আন্তরিক উপলব্ধি ও উদারতা সত্ত্বেও হিন্দু বা মুসলমান কোনো সমাজের কাছেই সহজে সাদরে গৃহীত হননি। মুসলমান সমাজের অভিযোগ ছিল, নজরুল ধর্মদ্রোহী_ তাই কাফের, আর হিন্দুসমাজ জাতপাতের অহঙ্কারে তাঁকে উপেক্ষা-অবহেলায় নিন্দা-সমালোচনায় দূরে সরিয়ে রেখেছিল। 'জাতের নামে বজ্জাতি'কে বরদা্স্ত করেননি কখনও।
“কেউ বলেন আমার বানী জবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিম কে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালি কে গলাগলি তে পরিনত করার চেষ্টা করেছি। সে হাত এ হাত মেলানো যদি হাতাহাতি থেকে অশোভন হয়ে থাকে তাহলে ওরা আপনিতেই আলাদা হয়ে যাবে। আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে তাদের কোন বেগ পেতে হবেনা, কেননা একজনের হাতে আছে লাঠি আরেকজনের আস্তিনে আছে ছুরি।“
নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ও মমত্বশীল থেকেও ভিন্ন সম্প্রদায়কেও যে আপন করে গ্রহণ করা যায়, তার দৃষ্টান্ত নজরুলের জীবন ও সাহিত্যে হামেশাই পাওয়া যায়। তিনি গান লিখেছেন_ 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/ মুসলিম তার নয়নমনি, হিন্দু তাহার প্রাণ।' এই গান আবার তিনি গাইয়েছেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও মৃণালকান্তি ঘোষকে দিয়ে। প্রিয় পাঠকের মনে পড়বেই 'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার' কাব্যগীতির এই পংতি দুটির কথা :'হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোনজন/ কাণ্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র।' বিপরীতমুখী এই দুই সম্প্রদায়ের অনৈক্য, বিরোধ, দ্বন্দ্বের কারণ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে নজরুল নিরন্তর ভেবেছেন রবীন্দ্রনাথের মতোই। তাঁর 'রুদ্রমঙ্গল' বইয়ের 'হিন্দু-মুসলমান' নামের প্রবন্ধের প্রস্তাবনায় তিনি বলেছিলেন :'একদিন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল আমার, হিন্দু-মুসলমানের কথা উঠেছিল। আমার বারে বারে গুরুদেবের ঐ কথাটাই মনে হয়। সঙ্গে সঙ্গে এ প্রশ্নও উদয় হয় যে, এ-ন্যাজ যাদের গজায় তা ভিতরেরই হোক আর বাইরেরই হোক তারাই হয়ে ওঠে পশু।' নজরুল এসব 'পশু'র 'ন্যাজ' কাটতে কসুর করেননি।
বাঙালির সাহিত্যচর্চায় নিজের জাত বা সম্প্রদায়, ধর্ম বা সংস্কৃতির গণ্ডি পেরিয়ে অপরের আঙিনায় চোখ ফেরানোর দৃষ্টান্ত অতি বিরল। এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেক অভিমান অনেক তর্ক আছে। কি রবীন্দ্রনাথ, কি শরৎচন্দ্র_ মুসলমান সম্প্রদায়ের ক্ষোভ-মেশানো অভিযোগ থেকে এঁদের কেউই রেহাই পাননি। কিন্তু অভিযোগ-কৈফিয়তের এসব উতোর-চাপানের পরিপ্রেক্ষিতে নজরুল ছিলেন ব্যতিক্রম। শুধু ব্যতিক্রম নন, বিরল ব্যতিক্রম। নজরুলের কবিতা ও গানে হিন্দু পুরাণ-ধর্ম-সমাজ-সংস্কৃতি যেভাবে রূপায়িত-চিত্রিত হয়েছে, তার তুলনা হয় না। তিনি কখনও প্রাণের আবেগে_ অবশ্য বেশিরভাগ সময়েই গ্রামোফোনের প্রয়োজন মেটাতে অনেক ইসলামী গান লিখেছেন। পাশাপাশি অসংখ্য শ্যামাসঙ্গীত ও বৈষ্ণবগীতিও রচনা করেছেন। রামপ্রসাদ ও কমলাকান্তের পর নজরুলের মতো এত মনোহর, এত হৃদয়গ্রাহী শ্যামাসঙ্গীত আর কেউ রচনা করতে পারেননি। বিস্ময় জাগে মনে যখন জানা যায়_ 'তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে/ মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে', 'আমি যদি আরব হ'তাম_ মদিনারই পথ/ এই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হজরত'; পাশাপাশি 'কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন', 'মহাকালের কোলে এসে গৌরী হ'ল মহাকালী,/ শ্মশান-চিতার ভস্ম মেখে ম্লান হ'ল মার রূপের ডালি'_ এসব গানের জন্ম একই স্রষ্টার হাতে। শুধু কি তাই! 'ওরে নীল যমুনার জল, বল্্ রে মোরে বল্্ /কোথায় ঘনশ্যাম আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম', 'ব্রজ-গোপী খেলে হোরি'_ এসব বৈষ্ণব-আঙ্গিকের ভক্তিগীতি সেও তো নজরুলেরই লেখা। নজরুলের এই যে দুই সম্প্রদায়ের রাখিবন্ধনের প্রয়াস, তা একেবারে ব্যর্থ হয়নি। সম্প্রদায়-নির্বিশেষে তাঁর গান ও কবিতার আবেদন কাল থেকে কালান্তরে প্রবহমান। শোষিত-অসহায় মানুষের আশার বাণী যেমন ধ্বনিত হয়েছে তাঁর রচনায়; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর সাহিত্য তেমনি আমাদের প্রেরণা ও পাথেয় হতে পেরেছে।
নজরুলের গানের সবচেয়ে সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হলো এর বৈচিত্র্য। এ বিষয়ে নজরুল পুত্র কাজী অনিরুদ্ধের ‘নজরুল গীতি’ নামক নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃত করা যায়, ‘নজরুলগীতির কত বৈচিত্র্য। নিষ্ঠাবান বৈষ্ণবের সাধনার ধন যে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা, অপত্য স্নেহের মধুর অভিব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা আর গোষ্ঠলীলা, প্রেমলীলা আর শ্রী রাধিকার বিরহ কথাকে তিনি সঙ্গীতরূপ দিয়ে আগ্রহী মানুষকে তৃপ্ত করেছেন। শাক্ত যিনি তিনি শ্যামা মায়ের পায়ের তলায় নিজের মনটিকে একটি রাঙ্গা জবা করে অর্পণ করতে পারেন। শ্যামা সঙ্গীতের খেয়ায় তার মন চলে যায় অনন্তলোকে। মুসলমান যিনি তিনি ঈদের বাঁকা চাঁদ প্রথম দেখার আনন্দে আত্মহারা হয়ে মোবারকবাদ জানাবার ভাষা খুঁজে পান এই নজরুল গীতির ভাণ্ডার থেকে। প্রেমিক যিনি তিনি প্রেমের বিচ্ছিন্ন স্তরে সুখ-দু:খের অনুভূতি পাবেন তাঁর গানে। প্রেমের গানের পবিত্র সুর ধারায় অবগাহনে আনন্দ পাবেন। কাজী নজরুলের দেশাত্মবোধক গান সারা বাংলা তথা ভারতের নিপীড়িত জনগণের অন্তরমথিত বাণী। তাঁর হাসির গান সেকালের সামাজিক অবস্থা উপলব্ধি করা যায়, যা সুতীক্ষ্ম শ্লেষে ভরা।’ দু:খের সঙ্গে বলতে হয় এ নিবন্ধ শেষ করার আগেই কাজী অনিরুদ্ধের জীবনাবসান হয়।
বেগম মাহমুদ নাহারকে লেখা চিঠির এক জায়গায় কবি লিখেছেন, তোমরা ভালবাস আমাকে নয়, আমার সুরকে, আমার কাব্যকে। তোমরা কবিকে জানতে চাও না নজরুল ইসলামকে জানতে চাও?”এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাধ্য আমার নেই। আমার কাছে কবি নজরুল ইসলাম এক অমর কবি, বিদ্রোহের কবি বিদ্রোহী কবি। নজরল ইসলাম নাম তো অনেকেরই হতে পারে, কিন্তু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কোন জুড়ি নেই, হতে পারে না। ক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে সীমিত পরিসরে কবিরচনার অংশমাত্র উল্লেখ করে নজরলের কাব্য প্রতিভার সম্যক মূল্যায়ন অসম্ভব। প্রবন্ধের শেষে এ মহান কবির মর্মস্পর্শী সেই আবেদনের প্রতি বিদগ্ধ পাঠকের সদয় দৃষ্টি আরেকবার আকর্ষণ করি –
‘আমায় নহে গো ভালবাস ,শুধু ভালবাস মোর গান’।।
- কলকাতা -
সুচিন্তিত মতামত দিন