গরীব ফেরিওয়ালার মেয়ে তুলসী। বয়স বাইশ পার হয়ে তেইশ। গরীবের ঘরের জোয়ান মেয়ে। কথায় বলে যৌবনে কুক্করীও সুন্দরী।তাই কোন সাহসে বাড়ী থেকে এখনও এ মেয়ের বিয়ে দেয় নি, এ নিয়ে পাড়ায় পাঁচজনের কানাকানি কথা হয়। আসলে এমনিতেও কুড়ি পাড় করা একটা মেয়েকে ঘরে রাখা গ্রামীন সংস্কৃতিতে যথেষ্টই বেমানান। সে সব কথা তুলসীর বাবা বৈজু বা মা কমলার কানে যে পৌঁছয় না, তা নয়। তবু তাদের ভাবান্তর বিশেষ হয় না। হয়েই বা লাভ কি? যে মেয়ের বিয়ে নিয়ে একেবারে ভাবে না তেমনটি নয়। কিন্তু ভালো ছেলের বাজার মূল্য বেশ চড়া। তুলসীর মা কমলার এক সময় খুব শখ ছিল মেয়েকে লেখাপড়া শেখাবে। মেয়ে চাকরি বাকরি করবে। কিন্তু অনেক কষ্টে এইট পাশ করানোর পর তুলসীকে আর কিছুতেই স্কুলমুখী করা যায় নি। একটা ভালো ছেলের বাজার দর বেশ চড়া। এমনিতেই বৈজুর ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে সাইকেলভ্যানে করে ‘হরেক মাল দশটাকা’ বিক্রি করেই দিন কাটে। বাকি রাস্তার ধারের ঘর লাগোয়া জমিটায় বিভিন্ন সময়ে অবস্থা বুঝে শাক লংকা লাউ কুমড়ো সীম বরবটি লাগায় কমলাবালা। কিছুটা নিজেরা খায়, কিছুটা বেচে। ঘরে বসে মা মেয়ে আসন বানায়,পুরানো ছেঁড়া শাড়ী এ ওর বাড়ী ঘুরে কমদামে কিনে এনে কাঁথা বানায়,ডাল বেটে বড়ি দেয়,হলুদ লংকা জিরে ধনে পাটায় পিষে গুঁড়ো করে, বৈজু সেসবও ভ্যানে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেরি করে।
সারাদিন মায়ের সাথে খাটাখাটনি করে তুলসী। ভালমন্দ তো দুর অস্ত, রোজ যে পেটপুরে খেতে পায় দু’বেলা, তাও নয়। তবু রূপ যেন মেয়ের ফেটে পড়ে। এজন্য ওকে নানা রকম কুপ্রস্তাব আর বদনজরের শিকার হতে হয়েছে ছোট থেকেই। এখনও হতে হয়। কিন্তু তুলসী মুখ বুজে সহ্য করে । কি আর করবে? তুলসী গ্রামের মুসলমান ছেলে হাসান আলিকে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকে একসাথে খেলাধূলা করে বড় হয়েছে ওরা। একসাথে গ্রামের প্রাইমারী স্কুলেও পড়েছে। ধর্মের প্রাচীর তাদের ভালোবাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি । কমলাবালা জানে সবই। বেশ কয়েকবার মেয়েকে বুঝিয়েছে, হাসানের সাথে যেন সম্পর্ক না রাখে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাদের এ অসম প্রেম চলছে প্রায় বছর পাঁচেক ধরে। হাসান কলকাতায় কি যেন একটা কোম্পানিতে পিয়নের চাকরি করে । টাকা পয়সা বৈজুদের তুলনায় বেশভালোই রোজগার করে। দু তিনমাস পর পর গ্রামে আসে। আসার সময় তুলসীর জন্য স্নো,পাউডার, লিপস্টিক, রঙচঙে ছাপা সুতি বা সিন্থেটিক শাড়ী,ম্যাচিং ব্লাউজ, টিপ, রাংতামোড়া লজেন্স কি সস্তার চকলেট, শহরের টাটকা গসিপ, এসব নিয়ে আসে। তুলসীকে কথা দিয়েছে বছর খানেকের মধ্যে ঘরে হাসানের ছোট পিঠোপিঠি দুই বোনের শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার ব্যবস্থাটা পাকা করে নিয়েই ওরাও বিয়ে করে নেবে। এভাবেই আশা নিরাশায় ওদের একঘেঁয়ে গতনুগতিক দিনগুলো কাটতে থাকে ।
এরই মধ্যে ওদের গ্রামে একটা স্পঞ্জ আয়রন ফ্যাক্টরী বসার কথায় গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবন বেশ ঢেউ উঠলো। বৈজুর একচিলতে চাষের জমিসহ একফালি খড়ে ছাওয়া বসতবাড়ীটাও বেশ দামী হয়ে উঠল।গুজব ওঠে স্পঞ্জ আয়রন ফ্যাক্টরী বসাতে জমি দিলে জমির দাম তো নগদে পাওয়া যাবেই সাথে পরিবারের একজনেরও চাকরী পাকা।বৈজুর পরিবারে ঐ তো সাকুল্যে তিনটি মানুষ, তায় প্রৌঢ় বৈজু আদৌ ওর নিজের রুজি রোজগার ছেড়ে এই বয়সে ফ্যাক্টরীর কাজে লাগবে কিনা সন্দেহ, তাই রূপকথার রাজকন্যা ও আধা রাজত্বের লোভে তুলসীর দরও হু হু করে বাড়তে লাগলো। গ্রামের মুদি গনেশের ছেলে নকুল, পানের দোকানের নিরাপদ, সব্জিওয়ালা পরানবুড়োর ভাইপো প্রকাশ,বিধু ময়রার নাতি গোপাল,প্রাইমারী স্কুলের মাস্টারমশাই সুরেন সাধুখাঁ-র বখাটে ভাই নরেন, পানু স্যাকরার বেকার শালা অতুল, কে নেই সে লাইনে। বৈজুর সমবয়সী খগেন স্বর্নকার তো দুই বউ মরার পর আর বিয়ে করবে না বলে প্রতিজ্ঞা অবধি করেছিল, সে অবধি তুলসীকে বিয়ে করতে রাজী যদিও ওর প্রথমপক্ষের ছেলে বৃন্দাবনকে বৈজুর ঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে সবাই দেখেছে। কিন্তু বৈজু বা তার মেয়ে বউয়ের ভাবান্তর বিশেষ বোঝা যায় না। ফিসফাস রটনা অতএব গুজগুজ গুজব থেকে সাট বাঁধা কোঁদলের রূপ নেয়। হাসান তুলসীর লোকলজ্জার মাথা খাওয়া প্রেমকাহিনী পল্লবিত হতে হতে ঘরে ঘরে একদম ছিছিক্কার পড়ে যায়।
গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তুলসীর বাবা বৈজু আর হাসানের বাবা তায়েব আলি ডেকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ দিয়ে কড়া করে সাবধান করা হয় যে দেশ-গাঁয়ে এই বেলেল্লাপনা একদম বরদাস্ত করা হবে না। হয় ভালোয়ভালোয় নিজেদের ঘরে আগল দাও নয়ত ‘ফল ভালো হবেনা’। শেষ কথাটার ভয়ঙ্কর মানে সবাই জানে। তায়েব হাসানকে ঘরে ফিরতে মানা করে খবর পাঠায়, বৈজু তুলসীর ঘর থেকে বার হওয়া বন্ধ করে দেয়। এতদিনে মেয়ের বিয়ে-থা নিয়ে নড়েচড়ে বসে। জাত-বেরাদরের মধ্যে পাত্র খোঁজাখুজি শুরু হয়। গাঁয়ের মাতব্বরদের টনক নড়ে। তলে তলে ওরাও তৈরী হয় নিজেদের মত করে মাতব্বরী ফলাতে।
গ্রাম পঞ্চায়েতের ধমকানিতে বৈজু যে তুলসীর সাততাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলবে এটা হাসান বুঝতেই পেরেছিল, কিন্তু ওর তুলসীকে অন্য কেউ বউ সাজিয়ে ঘরে নিয়ে যাবে এটা ও ভাবতেও পারেনা। তুলসীও সেটা সহজে মেনে নেবে না বা নিতে পারবে না এটাও ও জানতো।যা চাপা অভিমানী মেয়ে, কিছু একটা অনর্থ না বাঁধিয়ে বসে। হাসান ওর বাবা তায়েব আলির বারন শুনে অবস্থার গুরুত্ব বুঝে আরও মরীয়া হয়ে পড়ে। তুলসীকে যে ভাবেই হোক গ্রামের বাইরে নিয়ে না আসলে মারাত্মক কিছু একটা ঘটে যাবে। এই মানসিক টানাপোড়েনে একটা ভীষণ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে হাসান। সমবয়সী খালাতো ভাই সামশেরকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে তুলসীকে খবর পাঠায় তুলসী যেন তৈরী থাকে। কোন বাড়ী থেকেই যখন মেনে নিচ্ছেনা আর পঞ্চায়েতও যখন বাড়ীর লোক ডেকে শাসানি ধমকানি দিচ্ছে তখন ওরা ঘর পালিয়ে আগে বিয়েটা সেরে নেবে। সিধে কলকাতায় হাসানের অস্থায়ী ডেরায় উঠবে। সেখানেই সংসার পাতবে, পরে সব ঠান্ডা হয়ে গেলে অবস্থা বুঝে না হয় ফেরত আসার কথা ভাববে। সেইমত সহকর্মী দিনকর মাঝির বাইকটা ধার নিয়ে গ্রামের পথে রওনা দেয় হাসান। যেভাবেই হোক সন্ধ্যার আগেই পৌঁছাতে হবে ওকে। রাতের আঁধারেই তুলসীকে নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হবে। ভাবতে ভাবতে দাঁতে দাঁত চেপে চলতি বাইকটার স্পীড বাড়ায় হাসান। ওদিকে অনেক কষ্টে এর তার চোখ এড়িয়ে কোনমতে তুলসীকে হাসানের আসার খবরটা পৌঁছে দিয়ে হাসানের অপেক্ষায় থাকে সামশেরও।
ধীরেধীরে সময়ের সাথে ফুরিয়ে আসে দিনের আলো। আজানের রেশ মিলাতে না মিলাতে সন্ধ্যার শাঁখ বেজে ওঠে এ ঘরে সে ঘরে। তুলসী মায়ের চোখ এড়িয়ে দুয়ার পার হয় ত্রস্ত পায়ে, হাতের পুঁটুলীতে দু একটি দরকারী জিনিষপত্র। পুর্বনির্ধারিত বোসের মাঠের দিকে রওয়ানা দেয়। খোলা আকাশ। খোলাপ্রান্তর। খোলা মাঠ। যেন মিশকালো চাদরে, সাদা চুমকি, ছটফটে তারা, শান্ত তারা, মিটমিটে তারা। বাতাসে কোথা থেকে গন্ধহীন বুনো পাতার গন্ধ, ম ম শীতের রাতে ঘাসের গন্ধ, গরুর ফেলে যাওয়া গোবরের গন্ধ। পায়ে চোরকাঁটা। তার মধ্যেই পথ চলা। সমশেরের জিম্মায় বাইক রেখে মাঠের ধারের ঝুপসি আমগাছের নীচে জমাট বাঁধা অন্ধকারে মিশে দাঁড়িয়েছিল হাসান। তুলসীকে দ্রুতপায়ে দূর থেকে আসতে দেখে কয়েক পা এগিয়ে এসে পায়ে চলা পথের ওপর এসে দাঁড়ালো। তুলসী প্রায় দৌড়ে এগিয়ে আসে গিয়েও হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। পিছনে ঝোপে খসখস শব্দটা খেয়াল করে চকিতে ঘুরে দাঁড়ল হাসানও কিন্তু দেরী হয়ে গেছে ততক্ষনে। মাথায় ভারী একটা কিছুর আঘাতে কাটা কলাগাছের মত লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। হাতের পুঁটলীটা ছুঁড়ে ফেলে আর্তচিৎকার করে ছুটে এল তুলসী কিন্তু হাসানের কাছে পৌঁছনোর আগেই কয়েকটি পুরুষালী হাত ওর মুখ চেপে ধরে পাঁজাকোলা করে জাপটে তুলে নিয়ে সরে গেল আরো ঘন অন্ধকারে থাকা কালকাসুন্দার ঝোপ পেরিয়ে নদীর তীরের নির্জনে। সবকিছু অত্যন্ত তাড়াতাড়ি, প্রায় নিমেষের মধ্যে ঘটে গেল ঘটনাটা | রাত্রির ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে, গ্রামের নির্জন রাস্তায় প্রায় নিঃশব্দে অন্ধকার চিড়ে চলে গেল কয়েকটি মানুষ। | তারপর যেন কিছুই হয়নি, এমনভাবে নিঃসারে অন্ধকারে থমথমে মুখ লুকিয়ে পড়ে রইলো অন্ধকার রাস্তাটি, একটি জ্ঞানহীন শরীরকে বুকে নিয়ে। যার দু’পাশের ঝোপঝাড়ের গাছের পাতাগুলো শুধু একটু আগে চলে যাওয়া মানুষগুলোর গায়ের ছোঁওয়ায় হাওয়ায় অল্প অল্প দুলছিল… ক্রমশঃ তাও থেমে গিয়ে একেবারেই স্থির আঁধারের পটচিত্র হয়ে দাঁড়াল নির্জন পথটি|
অন্ধকার নদীতীরে ঝোপের আড়ালে পোড়োবাড়ী। ভয়ে বিবর্ণ একটি মেয়েকে ঘিরে মুখেচেনা পাড়াতুতো দাদা কাকা মামা শ্রেণীর কয়েকটি কয়েকটি না মানুষ। নারীমাংসের সন্ধানে ক্ষুধার্ত কিছু নরপশু।
- বড় গরম উঠেছে না? আজ টের পাবি, বিভৎস শব্দ তুলে হেসে উঠলো এক একুশোর্ধ্ব,
পরপরই মেয়েটির বুক থেকে আঁচলাটা ছিনিয়ে নিয়ে এক ত্রিশোর্ধ অশ্লীল ঈঙ্গিত করে বললো,
- হাসান একা খাবে কেন? আমরাও তো আছি।
মেয়েটি ভয়ে আর্ত হয়ে গেলো আরো- ভয়ে কথাও বন্ধ হয়ে গেছে।
- পঞ্চেৎ তো বলেই দিয়েছে তোদের একত্তরে দেখলেই ঘোমটাটানা বেবুশ্যপনা ঘুচিয়ে দিতে। আজ দ্যাখাবো মজা।
মেয়েটা দৌড়ে পালাতে চায়, কিন্তু পায়ে জোর পায় না। সব জোর যেন ঘাম হয়ে ঝরে পা বেয়ে বেয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। চিৎকার করতে চায়, মাঝপুকুরে ডুবে যাওয়া ক্ষীণ স্বরটুকু সে নিজেই শোনে।চল্লিশোর্ধ তৃতীয়জন কিছুই বললো না আর- শুধু পায়ে পায়ে সে এগুতে থাকলো মেয়েটির দিকে, মুখে তার ক্রুর হাসি। মুখে যৌনতার গন্ধমাখা চাঁছাছোলা বিশেষণ। সর্বশক্তি দিয়ে আঁচলটা বুকের ওপর চেপে ধরে শ্লথ পায়ে পিছু সরছিলো মেয়েটি- হঠাৎ নিশ্চল হয়ে গেলো সে, পেছনের কঠিন দেয়ালটা পিঠের সঙ্গে ঠেকে গেছে । গায়ের ওপর অশালীনভাবে একজনের হাত এসে পড়ল, মুখের ওপর মদের তীব্র কটুগন্ধ মেশা নিঃশ্বাস। আঁচলটা সরে গেছে হাত থেকে। শীতার্ত অশীতিপর বৃদ্ধার মতো থরথর করে কেঁপে উঠলো সে অস্বাভাবিকভাবে- চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেল । চতুর্থজনের সবল দুহাত চেপে বসেছে গলায়, স্রেফ ঘড় ঘড় টাইপের একটা আওয়াজ ছাড়া আর কিচ্ছু বেরুলো না গলা থেকে তার।
মেয়েমানুষেরও বোধহয় বিড়ালের মত নয়টা প্রাণ থাকে। নয়তো ঐ অতগুলো নরপশুর প্রতিশোধ নেবার বীভৎস মানসিকতার পাশবিক অত্যাচার সয়েও মানুষ যে বাঁচে তার প্রমান তো তুলসী নিজে। ওদের দেরী দেখে সামশের খুঁজতে এসে হাসানের ঐ রক্তাক্ত অবস্থা দেখে লোকজন জড়ো করে ফেলেছিল , সবাই তো আর নামানুষ হয়না, মান-হুঁশ কিছু মানুষের থাকেই। তারাই সোরগোল খোঁজাখুঁজি করে নদীর তীরে অর্ধঅচেতন অবস্থায় তুলসীকে পেয়েছিল। সেখান থেকে হাসপাতাল,হাসপাতালে কতগুলো দিন যে কাটিয়ে এল, তারপর আবার ক’দিনের জন্য মানসিক হাসপাতাল, তারপর পুলিশী জেরা, খবরের কাগজের লোকজন, আইন আদালত। সে স্মৃতি সত্যিই মনে পড়েনা আর।ক’টা দিন তার এই তেইশ চব্বিশ বছরের জীবন কাহিনীর পাতা থেকে যেন বেমালুম উবে গেছে। তবে মন্দের ভালো, কিছু মানুষ এখনও সঙ্গে আছে। বাবা মা তো বটেই তার মনের মানুষটাও কিন্তু তার সঙ্গ আর ছাড়ে নি। শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তুলসী আত্মহত্যার কথা ভাবতে পারে নি। সব শারীরিক মানসিক যন্ত্রণা সয়ে গেছে। গত ছয়টা মাস অনেক খারাপ সময় গেছে তুলসীদের। এমনও দিন গেছে যখন আইন আদালতের খরচা মিটিয়ে বাজার করার টাকা ছিলো না। চা-বিস্কুট, মুড়ি দিয়ে দিন পার করেছে ওরা দুজন। তারপরও কারো কাছে একটাবারও হাত পাতেনি। অন্যায়ের সাথে কোন আপোষও করেনি। দোষীরা ধরা পড়েছে। তারা এখন পুলিশ হেফাজতে। মামলার শুনানী চলছে। এখন গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বাইরের জগতটার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে তুলসী হাসান। তুলসীর ভালোত্ব, নির্দোষিতা প্রমাণ করতে জনে জনে পায়ে তেল দিতে হয় না বা প্রমাণ করতে হয় না ওদের। ওদের আর কিছু হারাবার ভয় নেই । বেশি কিছু চাওয়ারও নেই। এখন শুধু চায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে দ্বিতীয় আরেক তুলসীকে শাস্তিবিধানের আগে সমাজের তথাকথিত সমাজরক্ষকরা নিজেদের ভয় পাওয়া চেহারাটা দেখতে পায়। ওরা চায় একটুখানি সহযোগিতা, আশপাশের মানুষের কাছ থেকে একটু ভালোবাসা। আর চায় ওদের ছোট্ট একটা সুখের সংসার। আর কিছু না।
উড়িষ্যা ।
সুচিন্তিত মতামত দিন