ঝিলিমিলি



মেয়েদের রাজত্ব আজ , পুরানো দিনগুলোকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার দিনকাল আজ, অবদান রাখছে মেয়েদের শিক্ষার আলোকবর্তিকা, শিক্ষিত হয়ে সমাজে পুরুষের মতই পাশাপাশি  শিরদাঁড়া সোজা করে সম্প্রতিকালে  চলতে শিখেছে মেয়ে জাতি  –কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে নিরাপত্তাকে জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে নিজেকে সংপৃক্ত করে নিয়েছে এই নারী জাতি। কিন্তু শুরুতে এত সহজ ছিল না,অনেক আটঘাট বেধে মেয়েদের নিজেদেরকেই সংগ্রাম করে যেতে হয়েছিল মুক্তির প্রয়াসে , পুরুষশাসিত সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াবার সাহস বা শক্তি সে যুগে ছিল না, নারীজাতি মানুষ নামক ব্যাক্তিবর্গ হলেও।তাদের জন্য ছিল আলাদা নিয়ম কানুন, সামাজিক বা ধর্ম কর্মের কায়দা ধরে-  মেয়েরা তাই ঐ একই আবর্তে নিষ্পেষিত হত।তারা পুরুষের ভোগের নিমিত্তে থাকত, স্বাধীনস্বত্বা বলে কিছুই ছিল না। 

আমি আজ বাংলাদেশের ঠাকুর পরিবারের মেয়েদের  জীবন সম্পর্কে সংগত কারণেই উল্লেখ করে জ্ঞানদানন্দিনীর সংগ্রামী চেতনার মনকে তুলে ধরার সামান্য চেষ্টা করছি , যার উদার আর স্বাধীন চেতনা আমাকে সত্যি বিস্মিত করেছে প্রথমদিকের একজন একনিষ্ঠ বা বলিষ্ট নারী কর্মীর উজ্জ্বল প্রবর্তিকা হিসাবে  । এবং প্রাসঙ্গিকক্রমে নেপথ্যে বিবেকবান পুরুষদের সাহায্য নারী মহলকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে যথেষ্ট ছিল সে কথাও স্বীকার্য বলে দাবী করতে হবে। আর সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস নিয়ে গবেষণার তাগিদ, কি করে সেই অন্ধকার যুগে পশ্চিমের হাওয়া লাগিয়ে পুবের তরীখানায় হাল ধরে নিজেদেরকে গন্তব্যের দিকে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল।

একটা বিরাট হাওয়া লেগেছিল  বাংলাদেশের জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। রবীন্দ্রনাথ শুধুই নয়, দ্বারকানাথের আমল থেকেই এই পরিবারের জীবনাপাতে বিশেষ এক মৌলিক ঢঙ ছিল – প্রাচ্য এবং প্রতীচ্যের সুন্দর এক সমাবেশের ছায়া ফেলেছিল বিভিন্ন আঙ্গিকের সূত্র ধরে(সঙ্গীত- নাটক- শিল্পকলা- দর্শন –ইত্যাদির ভাব বিনিময়ের অবদান দ্বারা )। যে ঘরে নতুন আলো জ্বলেছিল, সে আলো শুধুমাত্র পুরুষের শৃঙ্খলাবিদ্ধ হয়ে থাকল না , নারীরা  পরোক্ষে আর প্রত্যক্ষে অনুসন্ধানী চোখে দিব্যজ্ঞান প্রাপ্ত হল –নারীরা মনুর বিধান আর মুসলমানি আব্রু রক্ষার  তাগিদ নিয়ে এতদিন সমাজে নিজেদেরকে ঘরের আসবাবে পরিণত করে ফেলেছিল –ঠাকুর বাড়ির মেয়েরাও সেই চিত্র ধারণ করে আসছিল এতকাল যাবত । সদর আর অন্দর মহলের কড়া শাসন তো ছিল, ভেতর বাড়িতে নিঃসম্পর্কিত মানুষের ঢুকা নিষেধ ছিল। ঘেরাটোপ-ঢাকা পালকিই ছিল একমাত্র বাহন – যেতেন কোথায়,  আর কিভাবে তার সমাধান ঘটত শুনলেও আজ হাসির উদ্রেগ করে --   কালে ভদ্রে গঙ্গাস্নানে যাবার অনুমতি পেলেও  বেহারারা পালকিসহ জলে চুবিয়ে আনতেন, নেহায়েৎ অতি জরুরী পারিবারিক বা সামাজিক কোন বিয়ে, পৈতা ,অন্নপ্রাসন বা শ্রাদ্ধ জাতীয় অনুষ্ঠানে যাবার অনুমতি পেতেন । 

কিন্তু যে নারীরা মশাল জ্বালিয়ে প্রথম পথ দেখিয়ে চলছিলেন তারা ছিলেন প্রথম যাত্রী, আর পুরো বিপদসংকুল দায়িত্ব তাদেরকেই একা বহণ করে যেতে হয়েছিল, আজকের এই মসৃণ পথ তখন ছিল কণ্টকাকীর্ণ । নেপথ্যে নবজাগরণের অনুকুলের হাওয়ায় পাল তুলে চিন্তা চেতনাকে প্রসারিত করেছিলেন অবশ্য পুরুষরাই প্রতিনিধি হয়ে । ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামমোহন ,মৃত্যুঞ্জয়সহ  আরও অনেকে স্ত্রী শিক্ষায় উৎসাহী  ছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বিলাতে বসে দেশের নারীদের স্বাধীন করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। হেমেন্দ্রনাথ বাড়ির মেয়ে বউদেরকে যথার্থ নিয়মে শিক্ষা দিতেন, জ্যোতিন্দ্রনাথ শুনাতেন দেশ বিদেশের নানান কাহিনী।–হিন্দু পরিবারের নারীদের কড়া বাধা নিষেধ উপেক্ষা করার সুযোগ যেখানে ছিল না ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের সে সকল বাধা শিথিল ছিল  ব্রাক্ষ্যধর্ম বলেই – হিন্দু ব্রাহ্মণদের চোখে ঠাকুরবাড়ি ছিল “পিরালী” –খানিকটা একঘরের মত স্বতন্ত্র । তার উপরে দেবেন্দ্রনাথ ব্রাক্ষ্যধর্ম গ্রহণ করলে অনুশাসন নামক ব্যাপারটি সেভাবে আর টিকেনি। সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী । জ্ঞানদানন্দিনীর বাবা অভয়াচরণ এই পিরালী বংশে বিবাহ দিয়ে পৈতৃক গৃহ থেকে পরিত্যাক্ত হন ।  মহর্ষির পাঁচ জামাইয়ের মধ্যে চার জনই ছিলেন ঘরজামাই, তারা সবাই কুলিন বংশের । একমাত্র স্বর্ণকুমারীর স্বামী জানকীনাথ ঘোষাল  পিরালী দেবেন্দ্রনাথের কন্যাকে বিবাহ করে সাময়িকভাবে তার পৈত্রিক সম্পত্তি হারিয়েছিলেন ।

         
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিয়ের পাত্রী খুঁজে পেলে মহর্ষি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন –কারণ পিরালী বংশে সহজে কেউ মেয়ে দিতে চাইতেন না কুলীন বংশ জাত থেকে । অথচ ঠাকুর বাড়ির শিক্ষা, সংস্কৃতির ভিত্তির স্থাপন যা কিনা কোন ধার করার নিমিত্তে সৃষ্টি হয়নি ,নিজস্ব অভিমত বিশ্লেষণ শেষে আভিজাত্যের বৈশিষ্টে সংরক্ষণ করা হত, ক্রমে ক্রমে সমাজ সংস্কারে তা অনুসরণ যোগ্য হয়ে উঠেছিল। তাই যোগ্যতায় ধনে- মানে- শিক্ষায় ঠাকুর বাড়ির সমতুল্য আর কোন বাড়ি কোলকাতাতেও তেমন ছিল না, ধর্মীয় ও সামাজিক বাধার কড়া শাসনকে ঠাকুর পরিবার উপেক্ষা করতে পেরেছিল বলে আধুনিকতার ছুঁয়ায় সেভাবে বিশিষ্ট হয়ে উঠতে পেরেছিল । 

উনিশশতকে সমাজ সংস্কারের প্রধান কথাই ছিল নারী মুক্তি –আধুনিক অর্থে নয় , তখন নারী শিক্ষা , নারীর অধিকার এবং নারীর প্রগতির দিকেই মনীষীদের দৃষ্টি পড়েছিল। মেয়েদের জীবন চলার ক্ষেত্রে লাগাম  ছাড়া অন্তরায় ছিল, তাই প্রতি পদে পদে শৃঙ্খলকে তাদের হিসাব করে চলতে  হত। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অসমবিবাহ, সতীদাহ প্রভৃতি সামাজিক অত্যাচার ছাড়াও বহুবিধ ন্যায্য অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হত । মেয়েদের লেখাপড়া করাও একটা দুষকর্মের মধ্যে পরত, কথিত ছিল মেয়েরা শিক্ষা দীক্ষা পেলে বিধবা হবার সমূহ সম্ভাবনা  । তাদের জামা জুতো পড়া, বাইরে বেড়ানো, গান গাওয়া, গাড়ী চড়া, অনাত্মীয় পুরুষের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ছিল ।

তবে যে আলো পথ দেখিয়েছিল মুক্তির দ্বারটিকে খুলে দিতে, তার পূর্ব সূচনা ছিল দ্বারকানাথের পিতার আমল থেকেই । বৈষ্ণবীর কাছ থেকে অন্দর মহলের মেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পেতেন, দ্বারকানাথ যখন পাঠশালায় তখন তার দশ বছরের দিদি রাসবিলাসী বানান করে অন্দর মহলে পড়ছেন রূপ গোস্বামীর ‘হরিকুসুম স্তব’—এই কথাটা একটা তাৎপর্য রাখে । সামান্যতম হলেওজোড়াসাঁকোর বাড়ির পূর্ব ইতিহাস খানি যতটুকু বইপত্র অবলম্বনে জানি, ব্যাক্ত করি। পুরুষোত্তমের বংশধর পঞ্চানন এসেছিলেন কলকাতার ভাগ্য ফেরাতে আর সেই সূত্র ধরে তাঁর নাতি নীলমনি কোন শুভক্ষণে কলকাতার একপ্রান্তে বসবাস শুরু করেছিলেন। গৃহবিবাদ আর মন কষাকষির ফলে মূল কুশারী বা ঠাকুর পরিবার ক্রমেই নানা শরিকে ভাগ হয়ে যেতে শুরু করলেন তৎকালীন ।পাকাপোক্ত ভাবে পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে ১৭৮৪ সালের জুন মাস নাগাদ নীলমনি চলে আসেন  জোড়াসাঁকোতে। স্ত্রী ললিতাদেবী, তিন পুত্র ও কন্যা কমলমণিকে নিয়ে। এ অঞ্চল মেছুয়াবাজার নামে পরিচিত ছিল। নীলমনির ভাই দর্পনারায়ন থেকে গেলেন পাথুরিয়াঘাটার সাবেক বাড়ীতেই ।  জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ী সকলের প্রধান আকর্ষণ হয়েছিল প্রিন্স দ্বারকানাথের আমলে তাঁর রুচিশীল মনন বিকাশের দ্বারা , তিনি সেকালকে তুলে ধরেছিলেন পশ্চিমের চিন্তা চেতনার আবর্তে , ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সকল সংস্কারকে আবর্জনাতুল্য করে ছুঁড়ে ফেলাতে  ।

স্বর্ণকুমারী ও জ্ঞানদানন্দিনীর কথা সবাই জেনে থাকবেন। তাঁদের প্রপিতামহী অলকা সুন্দরী  ও পিতামহী দিগম্বরীর দৃঢ়চেতা চারিত্রের কথা উল্লেখ করা হলে পুর্ব কথাকে আরও সবিস্তারে টানা  যাবে। দ্বারকানাথ মাত্র তেরো বৎসরে পিতৃহারা হন। উইলের নির্দেশ মোতাবেক দ্বারকানাথের প্রাপ্ত বয়সের অবর্তমানে তাঁর মাতা  অলকা সুন্দরী সুনিপুন হাতে কর্তিত্ব করে যান। ধর্মের ব্যাপারেও তাঁর মতামত স্বাধীন ভাবে ব্যাক্ত করার ব্যাপারে পিছ পা ছিলেন না । রামলোচনের দীক্ষা গুরু ছিলেন হরিমোহন গোস্বামী , তাঁর স্ত্রী অলকা কাত্যায়নী দেবি ছিলেন অলকাসুন্দরীর দীক্ষা গুরু । তিনি মা গোসাইয়ের অবাধ যাতায়াত পছন্দ করতেন না । মৃত্যুর সময়ে অলকাসুন্দরী তাঁর স্বাধীন চিন্তা ব্যাক্ত করেছিলেন, গঙ্গায় অন্তর্জলি যাত্রায় সম্মতি দেন নি যদিও কেউ তাঁর কথায় কর্ণপাত করেন নি তবু তিনি বলেছিলেন দ্বারকানাথের কথা, সে বাড়ীতে থাকলে কেউ তাকে উপেক্ষা করতে পারত না। এবার আসি দিগম্বরীর কথায়,যিনি ছিলেন অপরূপ লাবণ্যময়ী তেমনি একধারে ত্যাজস্বীনির  স্বত্বাধিকারিণী ছিলেন ।মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি দ্বারকানাথের ধর্ম পত্নী হয়ে জোড়াসাঁকোর বাড়ীর শ্রীবৃদ্ধি করে চলেন। একমাত্র দিগম্বরীর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল প্রশ্ন তুলতে শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সমাজের কাছে  –কূলধর্ম ত্যাগী স্বামীকে ত্যাগ করা উচিৎ কিনা?

গল্পের খানিকটা সবিস্তারে আবারও উল্লেখ করছি কেন এই প্রশ্নের অবতারণা হয়েছিল ? দ্বারকানাথ নবযুগের ভাবনার সঙ্গে নিজের চালচলনে নতুনত্বের চমক আনলেন, সাহেবি পোশাক পড়া আর ব্যাবসার কাজে কর্মে এসে মাংস এবং শেরি খাওয়ার অভ্যাস করলেন । ফলে বিধর্মীর সংস্পর্শে এসে তাঁর দেহ অপবিত্র হওয়ার বিধায় শুদ্ধাচারী ব্রাহ্মণ রাখলেন মোটা মাইনে দিয়ে পূজা আচার্য বা অন্যান্য যাবতীয় কর্ম করার জন্যে। প্রথম দিকেই মনের মত বেপরোয়া প্রমোদে তিনি ঢেলে দেন নি, ধীরে ধীরে তাঁর শিল্প রুচির সঙ্গে বিলাসী বাবুদের মত দিলদরিয়া জীবন বোধ আনার জন্য অতিরিক্ত ব্যয়  করেন। ১৮২৩ সালে বেলগাছিয়ায় ৫ নং বাড়ি তৈরি করেছিলেন বিলাসবহুল বাড়ি। সে সময় তিনি ছিলেন গভর্ণর দেওয়ান, সেও সুবাদে অনেক উন্নতি ঘটেছিল। দিগম্বরীর চোখে ধরা পড়ে হঠাৎ করে, তিনি কিংকর্তব্যহীন হয়ে জপতপ ভুলে গেলেন, ভাবলেন সব বুঝি রটনা।শুনছেন, ছড়া গাঁথা হয়েছে –

কি মজা আছে রে লাল জলে
জানেন ঠাকুর কোম্পানি ।
মদের গুণাগুণ আমরা কি জানি
জানেন ঠাকুর কোম্পানি ।

দিগম্বরী নিজের চক্ষে সরোজমিনে যেয়ে হাজির হলেন বিপথগামী স্বামীকে ফিরানর জন্যে, এতদিনের চেনা মানুষ কি করে বদলাতে পারে ভাবতে পারছিলেন না। দেখলেন ঝলমলে ঘরে সাহেব –বিবির সাথে একাসনে পানাহারে মত্ত তাঁর স্বামী। মুসলমান বাবুর্চির রান্না টেবিলে পরিবেশন করা হচ্ছে। এই কাহিনী অলকাসুন্দরীর মৃত্যুর পরে ঘটে, মায়ের মৃত্যুর আগে দ্বারকানাথ বিজাতীয় খাদ্য স্পর্শ করেননি।দিগম্বরী তাঁর কর্তব্যে সচল রইলেন শান্ত চিত্তে – পণ্ডিতদের বিচার মতে স্বামীকে ভক্তি বা সেবা যত্ন করায় ত্রুটি কর না তবে তাঁর সঙ্গে একত্রে সহবাস ইত্যাদি নিষিদ্ধ। সেই মোতাবেক দিগম্বরী স্বামীর শয্যার কাছে গিয়ে মাটিতে প্রণাম রেখে আসতেন, ওদিকে দ্বারকানাথ একেবারে নির্বিকার রইলেন বাড়ীর সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে তিনি বৈঠকখানায় বসবাসের ব্যাবস্থা নিলেন , আর বাড়ীর দক্ষিণে আলাদা করে বাবুর্চিখানাও তৈরি হল। বৈষয়িক ব্যাপারে বা অন্য কোন কারণে দিগম্বরী যখন স্বামীর সাথে কথা বলতেন সাত ঘড়া গঙ্গা জলে স্নান করে নিজেকে শুদ্ধ করে নিতেন , রাত দিনের কোন পার্থক্য থাকত না নিয়ম কানুন মানার ক্ষেত্রে  । কিন্তু অচিরেই এ’সকল অত্যাচারে জ্বর বিকার হয়ে দিগম্বরীর জীবনপ্রদীপ অকালেই নিভে গেল। দ্বারকনাত স্ত্রীর অকস্মাৎবিয়োগ ব্যাথায় ম্লান হয়ে থাকতেন, যেদিন টেগর কোম্পানির একটি মূল্যবান জাহাজ সাগরে ডুবে গেল দ্বারকানাথ বুকভাঙ্গা নিঃশ্বাস নিয়ে বলতেন লক্ষ্মী চলিয়া গিয়াছে, অলক্মীকে এখন
আটকাইবে  কে ?  দিগম্বরীর পরবর্তীতে ঠাকুর পরিবারের ছেলের বউদের এমন তেজশক্তি দেখা যায় নি।
 

দেবেন্দ্রনাথের স্ত্রী সারদার সমস্ত কাজ কর্ম ছিল স্বামীকেন্দ্রিক । গিরীন্দ্রনাথের স্ত্রীর যোগমায়ার বরং তাঁর শাশুড়ির মত সনাতন ধর্মেকর্মে নিষ্ঠা ছিল। সারদা আর যোগমায়া ছাড়াও বাড়ীর অন্যান্য মেয়েরাও লেখাপড়া করতেন । সংস্কৃত রামায়ন মহাভারত পড়ে শুনাবার জন্যে মাঝে মাঝে ডাক পরত ছেলেদের। সত্যেন্দ্রনাথের ভাষায় যোগমায়া ছিলেন আমাদের একপ্রকার শিক্ষয়িত্রী। কারণ যোগমায়া ভালো বাংলা জানতেন আর তাঁর বিভিন্নমুখী বইয়ের সংগ্রহ শালাও ছিল। জ্ঞানদানন্দিনীর কথায় তাঁর শাশুড়ি সারদার প্রকৃতি ছিল স্নিগ্ধ রূপিণী –কেউ তাকে স্তুতি করলে আনত নয়নে থাকতেন । যোগমায়ারও গুণের শেষ ছিল না- শিক্ষা-দিক্ষার রুচিতে সে যুগে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন । দেবেন্দ্রনাথ ব্রাক্ষ্যধর্ম গ্রহণ করার পর বাড়ীতে লক্ষ্মী জনার্দনের পূজা বন্ধ করতে উদ্যত হলে যোগমায়া চাইলেন গৃহ দেবতা লক্মীজনার্দনকে । তাই যোগমায়া তাঁর দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে রইলেন দ্বারকানাথের বৈঠক খানার মহর্ষির সেই ৬ নং বাড়ীতে । ঠাকুরবাড়ি ছাড়াও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো হত । গ্রামাঞ্চলে আর পাঁচ জন পূথিপত্র নিয়ে বসতে পারত না । তবে সুদূর পল্লী গ্রামের গৃহ বঁধু রাসসুন্দরী একটু –আধতু লেখা পড়া শিখেছিলেন, তিনি ঠাকুর বাড়ীর কেউ নন তবু বাঙালী মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম আত্ম জীবনী লিখেছিলেন।

আগেই বলা হয়েছে পড়াশুনা করা মেয়েদের জন্য এত সহজের ছিল না, রাতের আঁধারে ঘরের দরজা বন্ধ করে শিখতে হত । জ্ঞানদানন্দিনীর মাকেও হিসেব কিতাব , চিঠিপত্র একই পদ্ধতিতে লুকিয়ে ছাপিয়ে করতে হত । শিবনাথ শাস্ত্রীর মা গোলকমণি দেবীও নানা উপায়ে লেখাপড়া শিখেছিলেন । পাবনার প্রমথ চৌধুরির দিদি প্রসন্নময়ী তো ছোটবেলায় বালকবেশে কাছারি বাড়ীতে সরকারের কাছে পড়তে যেতেন । তাঁর পিসিদের মধ্যে তিনজন ভগবতী ,কৃষ্ণসুন্দরী ও মৃন্ময়ী  লিখতে পড়তে পারতেন কিন্তু ছোট পিসি  বাল্যবিধবা কাশীশ্বরী ছিলেন বিদুষী মহিলা। প্রসন্নময়ি বলেছেন কাশীশ্বরী তীর্থ ভ্রমণ করে ফিরে এসে হটিতর্কা লঙ্কার সেজে মুণ্ডিত মস্তকে গ্রামে এক পাঠশালা খুলেছিলেন। হটি বিদ্যালঙ্কার, হটু বিদ্যালঙ্কার কিংবা চণ্ডীচরণ তর্কালঙ্কারের মেয়ে দ্রবময়ীর কথাও স্মরণীয়। কিন্তু এসব স্কুলে বেশীর ভাগ মেয়ে পড়ার সুযোগ পেত না। 

তুলনামূলকভাবে কলকাতায় মেয়েদের পালা করে বৈষ্ণবীরা লেখাপড়া শিখাত । জোড়াসাঁকোর বাড়ীতে মেয়েদের পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে । পরবর্তীতে বৈষ্ণবীর স্থান অধিকার করে ইংরেজ গৃহশিক্ষিকারা।  নবকৃষ্ণ , রাধাকান্ত, বৈদ্যনাথ রায়, প্রসন্ন কুমার ঠাকুর প্রভুত রাজা মহদোয়গণও নিজেদের অন্তপুরের নিভৃতে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাবস্থা করেছিলেন । প্রসন্নকুমারের মেয়ে হরসুন্দরী আর পুত্রবঁধু বালাসুন্দরী নানান বিদ্যায় পারদর্শিনী হয়ে উঠেন। জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুরের স্ত্রীর অকাল মৃত্যু না হলে তিনিই হয় তো বাংলাদেশে  নারী স্বাধীনতার সূচনা করে যেতেন ,তিনি সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত গভর্নরেসের কাছে লেখাপড়া করতেন, ইংরেজি বলতে বা লিখতে পারদর্শী ছিলেন। বৈদ্যনাথের স্ত্রীকে পড়াতেন সেন্ট্রাল ফিমেইল স্কুলের মিসেস উইলসন । ঠাকুর বাড়ীতে এসেছিলেন বিদেশিনী শিক্ষয়িত্রী মিসেস গোমিস । বেশ রমরমা ভাব তখন, স্ত্রী শিক্ষাকে কেন্দ্র করে তোড়জোড় করে একটি ভালো স্কুল খোলার কথা চিন্তা করলেন জেনানা মিশনের উদ্যোক্তারা । 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছাড়াও রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়,রামগোপাল ঘোষ, মদনমোহন তর্কালঙ্কার সহ আরও অনেকেই স্কুল খোলার পক্ষপাতি ছিলেন। সকল বাধা বিপত্তিকে মোকাবেলা করে বেথুন স্কুলটি স্থাপিত হয় ১৮৪৯ সনে, প্রথমে স্কুলের নাম ছিল হিন্দু ফিমেল স্কুল । দেশীয় পণ্ডিতদের সাহায্যে স্কুলটি স্থাপন করেন জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বীটন ।খুব স্বাভাবিকভাবে সকলেই ভেবেছিলেন ঠাকুর বাড়ীর কোন মেয়েই হয় তো এই স্কুলের প্রথম ছাত্রী হবেন , কিন্তু তা না হয়ে প্রথম ছাত্রী হিসাবে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের দুই মেয়ে কুন্দমালা ও ভুবনমালা ছিলেন আর সেই কারণেই মদনমোহনকে নিজের গ্রামের সমাজচ্যুত হতে হয়। ঐ দুজন ছাত্রীর সাথে আরও  উনিশটি মেয়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। ক্রমেই কুৎসা ছড়িয়ে কাগজে পত্রে স্কুল সম্পর্কে বিষিয়ে তোলা হল, কোমলমতি মেয়েদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলা হল, পুরুষদের কামস্পৃহা চারিতার্থ করার জন্যে এ’সকল স্কুল নামক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে বলে বিবৃতি দেওয়া হল। অথচ ১৮১৯ সালে ফিমেল স্কুল ছিল “জুভেনাইল স্কুল” নামে । প্রথমে সেখানে ছাত্রী ছিল আটটি,পরে হয়েছিল বত্রিশে। তথ্য অনুযায়ী ১৮২১-এ মেরী অ্যান কুক কলকাতায় এসে বেশ কিছু অবৈতনিক স্কুল খুলেছিলেন বলেও জানা যায়। যা হোক ১৮৭২ সালে ছাত্রীর সংখ্যা ছ’শতে  দাঁড়ায় । ১৮৪৭ সালে প্রথম হিন্দু ছাত্রীদের জন্যে খোলা হয় একটি স্কুল, কলকাতার কাছেই বারাসতে । তবু বেথুন স্কুলকে নিয়ে অনেক ওজর আপত্তি উঠেছিল, তাই ছাত্রী সংখ্যা কমে গিয়ে সাত জনে গিয়ে দাঁড়াল । পক্ষে এবং বিপক্ষের তর্কাতর্কির সেকি আলোড়ন । ধনী- মানি- সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিরা ইতস্থত করতে লাগলেন। তাই উদাহরণ স্বরূপ  দেবেন্দ্রনাথ পাঁচ বছরের মেয়ে সৌদামিনীকে স্কুলে পাঠানোর ব্যাবস্থা করলেন । সৌদামিনী তাঁর খুড়তুতো বোন কুমুদিনীর সাথে স্কুলে যেতেন যেন দেখাদেখি আরও মেয়েরা স্বেচ্ছায় ভর্তি হতে আগ্রহ প্রকাশ করে । আর পরবর্তী কালে সেই ১৮৫১ সালেই ছাত্রী সংখ্যা রাতারাতি বেড়ে গিয়েছিল। বেথুন স্কুলকে নিয়ে বলতে গেলে আরও সময়ের ধার নিতে হবে বলে, আমি সংক্ষিপ্তাকারে স্কুল কলেজের ইতিহাসের খানিকটা রঙ দিলাম –হ্যাঁ একটি হাস্যোরসও ছিল – সৌদামিনীর গায়ের ধবধবে রঙ দেখে পুলিশ এসে স্কুল থেকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল- ভেবেছিল, বুঝি বা  চুরি করা ইংরেজের মেয়ে হয়ে থাকবে । সৌদামিনীর কাছে থেকে আমরা দেবেন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পাই ।


দেবেন্দ্রনাথ খুব বেশী কড়া মানুষ ছিলেন না যতক্ষণ না ঘটনা মন্দের দিকে যায় ততক্ষণ কিছু বলতেন না আর তিনি ছিলেন মিতব্যায়ী স্বভাবের । সৌদামিনীর কারণেই তাঁদের পারিবারিক অনেকখানি আদর্শের নিতীকথা গল্পের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে বলাই বাহুল্য। সৌদামিনীর ছোট বোন সুকুমারী অল্প বয়সে মারা যান । দেবেন্দ্রনাথ সুকুমারীকে বিয়ে দিয়েছিলেন ১৮৬১ সালে। উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে তিনি ব্রাক্ষ্য বিবাহের প্রথম প্রচলন করলেন । -এই বিবাহে পৌত্তালিক অনুষ্ঠান ছাড়া হিন্দু রীতি নীতি পালিত হয়েছিল। এভাবে মেয়ের বিয়ে দেওয়া এবং হিন্দুমতে পিতৃশ্রাদ্ধ না করায় দেবেন্দ্রনাথ তাঁর আত্মীয় পরিজনদের কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন । পাশে রইলেন শুধু গিরিন্দ্রনাথের পরিবার এবং তাঁদের তিন পিসি জাহ্নবী, রাসবিহারীও দ্রবময়ী –নারী হয়েও সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন । এই পরিবারকে ত্যাগ করতে পারলেন না কাকা রমানাথ ঠাকুর ও দুই জ্যাঠতুতো দাদা । অর্থাৎ নীলমণির পরিবার এক অদৃশ্য বাধনে বাধা রইল ।    


সৌদামিনী-সুকুমারীর বোন স্বর্ণকুমারী বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক লেখিকা । তাঁর আর এক দিদি শরৎকুমারী রান্না ঘর ও রূপচর্চার বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তবে বাড়ীর মেঝবউ জ্ঞানদানন্দিনীর কথা গর্ব ভরে সবাই স্মরণ করে থাকে , কারণ মেয়েদের বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে মুক্তির পথ তিনিই দেখিয়েছিলেন। মহর্ষি পরিবারের প্রথম বউ ছিলে দ্বিজেন্দ্রনাথের স্ত্রী সর্বসুন্দরী ।তিনি ছিলেন ঘরোয়া ধরণের, তাঁর নয়টি সন্তান ছিল, ছেলেমেয়েদের সেবাযত্ন আর সংসারের কাজে তাঁর সময় চলে যেত আর তাঁর স্বল্পায়ু ছিল। কাজেই তাঁর কথা খুব একটা উল্লেখিত হয় নাই কারও লেখার মাধ্যমে। নারী মুক্তির সকাশে জ্ঞানদানন্দিনীর একচ্ছত্র অবদান তাঁর সাবলীল চারিত্রিক বৈশিষ্টের জন্য সম্ভব হয়েছিল । তীক্ষ্ণ জেদি একরোখা মেজাজ ও অদম্য প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে তিনি মেয়েদের অগ্রগতির অনেকটা পথই খুলে দিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই,সি,এস,। সবচেয়ে বড় কথা স্বামী হিসাবে তিনি জ্ঞানদানন্দিনীর সকল কাজে সর্বদা উৎসাহ উদ্দীপনা দিতেন।–জ্ঞানদানন্দিনির বাবা গৌরিদান করেছিলেন সাত বছরের মেয়েকে। ঠাকুর পরিবারের সদস্যা হিসাবে তিনিও পরিবারের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে তাকে নবীন মাত্রায় প্রাণ দিলেন। সত্যেন্দ্রনাথের চিন্তা চেতনাকেই জ্ঞানদানন্দিনী পরিণতি দিতে সচেষ্ট বা সদাপরিকল্পিত ছিল।

বাংলায় স্ত্রী স্বাধীনতার পথিকৃৎ সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর সহধর্মিণী বালিকা বঁধুকে সব বিষয়ে ভারতীয় নারীর আদর্শ করে তুলতে চেয়েছিলেন। বিলেতে গিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ দেখেছিলেন বিলাতি সমাজের মেয়েদের জীবনকে আর তুলনামুলক বঙ্গীয় মেয়েরা সেখানে পরে পরে মার খাচ্ছে।  সত্যেন্দ্রনাথ স্বপন দেখলেন নারী জাগরণকে নিয়ে, সবিস্তারে তিনি তাঁর স্ত্রীকে চিঠি লিখেন কোথায় ব্যাবধান এই পুব পশ্চিমের নারীদের জীবন ধারায়, ধীরে ধীরে তিনি স্ত্রীকে গড়ে তুললেন মানবিক বিকাশের দিশারী হতে। যে মেয়েরা “জীবন উদ্দানের পুস্প” তাঁদের আলো বাতাস থেকে বঞ্চিত করে ঘরের মধ্যে শুকিয়ে মারলে কি মঙ্গলের সম্ভবানা?   বিলাত থেকে জ্ঞানদানন্দিনী নতুন কথা শুনেন , তাঁর বুক কাঁপে । স্বাধীনভাবে বিবাহ করার  প্রথার কথা, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধাচারন –ইত্যাদি অনাচারের কথা চিঠিতে ছত্রে ছত্রে জ্ঞানদানন্দিনীকে বলেন।  সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর  অর্ধাঙ্গিনীকে প্রথম প্রস্তাবে বিলাতে নেবার সুযোগ পাননি। বাড়ীর বউ বাইরে কোনদিন গিয়েছে এমন নিয়ম ছিল না স্বামী বেচারা চাকুরী সূত্রে বাইরে গেলেও। 

জ্ঞানদানন্দিনী প্রথমটায় তাঁর দেবর হেমেন্দ্রনাথের কাছে পড়াশুনা শিখলেন। ইতিমধ্যে দেবেন্দ্রনাথ মেয়েদের শিক্ষার অগ্রগতির জন্যে ব্রাক্ষ্য সমাজের নবীন আচার্য অযোধ্যানাথ পাকরাশীকে গৃহশিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করেন। সেই প্রথম অনাত্মীয় একজন পুরুষ ঠাকুর বাড়ীর অন্তপুরে প্রবেশ করলেন। ধাপে ধাপে ঠাকুর বাড়ীতে নিয়মের শৃঙ্খল ভাঙতে লাগল । জ্যোতিন্দ্রনাথ একসময় পূর্বের কথা স্মরণ করে বলেছিলেন আজ যা অতি সাধারণে বিবেচ্য- মেয়েদের বাইরে যাওয়া, যানবাহনে চলাচল বা নারী পুরুষের কথা বলা তা কিন্তু পূর্বে অস্বাভাবিক কাহিনীই  ছিল। হয় তো মনে হবে জ্ঞানদানন্দিনী এমন কি আর করেছেন শুধুমাত্র স্বামীর স্বপ্নকে সফল করা ছাড়া ?কিন্তু প্রথম নারী হিসাবে মেয়েদের সমকক্ষ্য হওয়ার ভাবনা নিয়ে সকল আড়াল ভাঙ্গা সহজ ব্যাপার ছিল না বরং এ কাজে মন প্রাণ ঢেলে তিনি মাঠে নেমেছিলেন ।

এবার সত্যেন্দ্রনাথের একটা সরস গল্প বলে নেওয়া যাক । বিয়ের কিছুদিন পরের কথা।  সত্যেন্দ্রনাথের প্রাণের বন্ধু  মনমোহন ঘোষ , তাঁর ইচ্ছা হল বন্ধুর স্ত্রীকে দেখার।  তারা স্বামী স্ত্রী শলাপরামর্শ করে অনেক রাতের বেলায় মানুষের চোখের আড়ালে(অন্দরমহলে নিয়ে আসে বন্ধুকে)ব্যাপারটা সমাধান করেছিলেন বিশেষ কায়দায় -যেন কাজটি ছিল রোমাঞ্ছকর আর অনেকটা দুসাহসিকের মতন। যা হোক শশুরবাড়ীর সীমানা থেকে বেরিয়ে আসার অনুমতি এক পর্যায়ে দেওয়া হল জ্ঞানদানন্দিনীকে ।সত্যেন্দ্রনাথ স্ত্রীকে বোম্বাই নিয়ে যাবেন, সত্যেন্দ্রনাথ বিলাত থেকে ফিরে এলে তার কর্মস্থল ছিল মহারাষ্ট্রে । স্বামী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকার স্বাধীনতা পেল নতুন কর্মস্থল বোম্বাইয়ে –এ যেমন নতুন এক প্রকাশ। তিনিই প্রথম জোড়াসাঁকো থেকে অন্য বাড়ীতে উঠে যান স্বামী- পুত্র- কন্যাকে নিয়ে , বাঙালী জীবনে এর আগে এই স্বাতন্ত্র দেখা যায় নাই । তাই মেয়ে বিয়ে হলেও জামাইকে ঘরজামাই হিসাবেই রাখা হত। আধুনিক জীবনের পারিবারিক ছকটি জ্ঞানদানন্দিনী  নিজের হাতে গড়ে দিলেন। কিন্তু পারিবারিক বন্ধনে তিনি ছিলেন অটুট – সকল সদস্যই বিপদে বা আনন্দে যেয়ে হাজির হতেন মেজবউঠানের কাছেই ।

কিশোর রবীন্দ্রনাথ বিলাতে গিয়ে উঠেছিলেন তাঁরই কাছে । পারবারিক সকল কাজে তাঁর যোগসূত্র ছিল খুব আন্তরিকে বাধা । সুশীলার মৃত্যুশয্যায় জ্ঞানদানন্দিনী ছিলেন। প্রফুল্লময়ীর বুকভরা কান্না জ্ঞানদানন্দিনীর কাছে করে শান্তি পেতেন- প্রফুল্লময়ীর কথায় উনি মায়ের মত তাকে শান্তি দিতেন। আর মৃণালিনীর প্রীতিটি সন্তানের আগমনের সময় জ্ঞানদানন্দিনী পাশে থাকতেন । ব্যাক্তি জ্ঞানদানন্দিনী ছিলেন অতীব সামাজিক, অমায়িক আর উদার চেতার এক দৃষ্টান্ত। মাতৃহীন দুটি অনাথ শিশুকে রবীন্দ্রনাথ কোথায় রেখে যাবেন , অবনিন্দ্রকে ছবি আঁকার উৎসাহ কে দিবেন এমনকি প্রতিমাকে আর্টের টিচার খুঁজে দেবার দায়িত্ব সেই মেজোবউদির উপর একনিষ্ঠ ভাবে দায়িত্ব পড়ে যেত। সেই জ্ঞানদানন্দিনী যখন ঘরের বাইরে স্বামীর সঙ্গে বোম্বাই বসবাস করতে যাবেন, প্রশ্ন উঠলো গাড়ী করে  তিনি বাড়ী থেকেই উঠবেন কিনা ? মেয়েদের জন্যে প্রচলিত পালকি চড়েই তাকে ঘরের থেকে বের হতে হল –মহর্ষীর চোখেও ভালো লাগছিল না এই ভেবে কুলবঁধু কর্মচারীদের সামনে পায়ে হেঁটে দেউরি পাড় হোক । সাবেক পালকি জ্ঞানদানন্দিনিকে বোম্বাইগামী জাহাজে পৌঁছে দিল এরপর আর কোনদিন তাকে পালকি চড়তে হয় নাই । সমাজে মিশতে গিয়ে পরিধানে কি থাকা উচিৎ এই নিয়ে নতুন উদ্ভাদন শুরু হল। ক্রমান্বয়ে তারও সুরাহা হল ।বাইরে বেরোবার জন্যে জ্ঞানদানন্দিনী মেয়েদেরকে দিলেন রুচিসম্মত সাজ । তিনি সত্যেন্দ্রনাথের কথানুযায়ী গিয়েছিলেন লাটভবনে নিমন্ত্রণ রাখতে ।তাকে দেখে সবাই ভেবেছিলেন ভুপালের বেগম। ভোজসভায় ছিলেন পাথুরিয়াঘাটার প্রসন্নকুমার ঠাকুর । তাঁদের ঘরের বউ হিন্দুরমণী হয়ে গভর্নরের হাউজে, স্বচক্ষে দেখে সনাতনপন্থী প্রসন্নকুমার রাগে দুঃখে সেখান থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ নির্ভীক চিত্তে ছিলেন এবং গর্ববোধ করছিলেন একমাত্র বঙ্গবালা হয়ে  তাঁরই স্ত্রী ইংরেজ মহিলাদের মাঝখানে বসে প্রতিনিধিত্ব করছেন ।

এভাবে একটি দুটি করে অনেক অবরোধের দরজা খুলে যেতে লাগল । জ্ঞানদানন্দিনী শুধুমাত্র মেয়েদের পথের কাঁটা ঘুচিয়েছিলেন তা কিন্তু নয় উনি পুরুষের মনের বাধাও দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জ্যোতিন্দ্রনাথ তাঁর সমোবয়সী দেবর ছিল , কিন্তু সে তাঁর বড় দাদা দ্বিজেনের মত রক্ষণশীল ছিলেন, জ্ঞানদানন্দিনী আর সত্যেন্দ্রনাথের পরিচর্যায় তারা নব্যপন্থী হন। তারপর সেই যুগে তিনি সামান্য ইংরেজী বিদ্যার পুজি নিয়ে একাকিনী দুই তিনটি শিশুকে নিয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিলেতে গিয়েছিলেন, যেখানে ছেলেদেরই একা যেতে ভয় করে থাকে । কিন্তু এই বিলেতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল স্ত্রীস্বাধীনতার সাথে পরিচয় ঘটাতে আর দেশে এসে তিনি সে মোতাবেক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তবে তিনি প্রাচ্যের যতটুকু প্রয়োজন বলে মনে করেছেন ততটুকু গ্রহণ করেছেন, বাঙ্গালী রমণীর নিজস্ব মূল্যবান ঐতিহ্যকে তিনি অগ্রাহ্য করেন নাই ।

শুরুতেই জ্ঞানদানন্দিনীর প্রভাব পরেছিল ঠাকুর বাড়ীর সকল সদস্যের চরিত্রের মধ্যে –পিছনে নয়, সামনে এগিয়ে যেয়ে নিজেকে আবিষ্কার করে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার উদ্দাম স্পৃহায় সকলকে আলোড়িত করে চলল। জ্যাোতিন্দ্রনাথ সেই অর্থে প্রথম জীবনে গোঁড়ামির পরিচয় দিলেও সাবেকী সংস্কার ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। কাদম্বরীকে ঘোড়ায় চড়া শিখিয়েছিলেন গঙ্গার ধারে নির্জনে আর শিক্ষাপর্ব শেষ হলে কাদম্বরী গড়ের মাঠে স্বামীর সাথে হাওয়া খেতে যেতেন । তাঁর অশ্বারোহণ বেশ আলোড়ন জাগিয়েছিলেন তা নিয়ে আর স্ববিস্তারে নাই বা লিখলাম । তবে কাদম্বরীকে প্রথন অশ্বারোহিনী বঙ্গললনা বলা চলে ।ঠাকুর পরিবারে পরবর্তী সময়ে মেয়েরা তরতর করে উপরের সিঁড়ি বেয়ে উঠবেন বলাই বাহুল্য । আমি শুধু গোড়াপত্তনের কথাগুলোকে স্মরণে আনার চেষ্টা করছি কিভাবে নারী জগোরণের পথটাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল আর পিছনের দিকে যেয়ে নারীদের স্বাধীন মতামতকে টেনে আনি যদিও অনেক সময় কোন যুক্তিতে সেগুলো সে আমলে টিকে নাই, তবু সেগুলো ছিল নিভৃতে করা প্রতিবাদ। আমি বলব কৃতদাস প্রথা ছিল, সেখানে নীরবে তারা যে চোখের জল ফেলেছিল , তা ছিল এক ধরণের সুক্ষ্ম প্রতিবাদ আর সেই প্রতিবাদই তাঁদের মুক্তি দেবার পথ বাতলিয়ে দিয়েছিল।

জ্ঞানদানন্দিনী বেশবাস বা  সাজ পরিচ্ছদে আধুনিকতার ছোঁয়া আনা ছাড়াও বিলাত থেকে দুটো জিনিষের আমদানি করেছিলেন- জন্মদিন পালন আর সান্ধ্যভ্রমণ । এবার আসি বাঙ্গালীর প্রিয় শাড়ির ইতিহাসকে নিয়ে। বোম্বাই গেলে দেশী ধাঁচে শাড়ি পরার বদলে নিয়ে তিনি পারশি মেয়েদের শাড়ি পরার মিষ্টি ছিমছাম ধরণটি গ্রহণ করেন ।বোম্বাই থেকে আনা বলে ঠাকুরবাড়িতে এই শাড়ী পরার ঢঙের নাম ছিল, ‘বোম্বাইদস্তুর’ কিন্তু বাংলাদেশে তাঁর নাম হল ‘ঠাকুর বাড়ীর শাড়ি’। শাড়ীর সঙ্গে জ্ঞানদানন্দিনী শায়া সেমিজ ব্লাউজ জ্যাকেট পরার প্রচলন করেন। তবে এখনকার আধুনিকেরা যেভাবে শাড়ী পরেন তা জ্ঞানদানন্দিনীর দান নয়, বোম্বাইদস্তুরে যেসব অসুবিধা ছিল তা দূর করার চেষ্টা করেন কুচবিহারের মহারাণী কেশব-কন্যা সুনিতা দেবী । তিনি শাড়ীর ঝোলান অংশটি কুচিয়ে ব্রোচ আটকাবার ব্যাবস্থা করেন। যা হোক বুদ্ধিমতি জ্ঞানদানন্দিনী শাড়ী পরার ধরণ শেখানর জন্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণও দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে শাড়ি মানানসই করে পরার একটা ঢঙ স্বাভাবিকভাবেই স্থান পেয়ে যায় , আমি তো বলতে চাচ্ছি প্রথম দিকের চিন্তাভাবনার কথাগুলোকে কুড়িয়ে নিয়ে । কথায় কথা বাড়ে। সব ফেলে দিয়ে আবারও হিন্দু সমাজের সেকালে সংস্কারে যাই। হিন্দুদের সেলাই করা জামা কাপড় পরে কোন শুভ কাজ করতে নাই । 

১৯০১ সালের কথা, গগনেন্দ্রনাথ তাঁর ন’বছরের কন্যা সুনন্দিনীকে সম্প্রদান করতে যাচ্ছেন – সব সময় কড়া অনুশাসন, কিছুতেই যেন মুসলমানি পোশাক সনাতন ঘরে না ঢুকতে পারে  সে তো সবার জানা সিদ্ধ কথা । কিন্তু দেখা গেল বরপক্ষ থেকে দারুণ আপত্তি সেলাই করা জামায় সম্প্রাদন চলে না । তাঁর পিতা হেসে বললেন আমার মেয়ের শরীরে আসলে কোন জামাই নাই দেখুন। শিল্পী গগনেন্দ্র এমন ভাবে শাড়িটা দিয়ে তাকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন সেই সাজানোর ঢঙটি সকলের পছন্দ  হয়েছিল । সব কিছুতে সুন্দর মাত্রা দেবার অভিপ্রায় একালের মানুষের মত সেকালেরও ছিল – তাই ধর্মীয় অনুশাসন ভঙ্গ কবেই যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছিল শিল্পবিহঙ্গের।

জ্ঞানদানন্দিনীর ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রের পরিচয় বিভিন্ন বিষয়ে ছড়িয়ে ছিটে আছে। শুধু বড়দের নয় ছোটদের কথাও এত বড় বাড়িতে জ্ঞানদানন্দিনী ছাড়া আর কেউ ভাবেন নাই । তাঁদের সুপ্ত প্রতিভা জাগাবার উদ্দেশে ‘বালক’ নামে পত্রিকা বের করলেন । তদানিন্তনকালের অনেক মহোদয়ের কৈশোরে সাহিত্য চর্চায় সেই পত্রিকায় হাতে খড়ি হয়েছিল। জ্ঞানদানন্দিণী নিজেই তাঁর সম্পাদিকা ছিলেন । শুধু পত্রিকা নয় ছেলেদের ছবি আঁকায় উৎসাহ দিতে বসিয়েছিলেন একটা লিথো প্রেস। বেশীরভাগ খরচ দিতেন নিজে। নাতি সুবীরের জন্যে দুখানি রূপকথারনাট্য রূপ দিয়েছিলেন –‘সাত ভাই চম্পা’ ও ‘টাক ডুমাডুম’ - এগুলো তাঁর ছোট হলেও চিন্তা চেতনার অবিস্মরণীয় দান । সেভাবেই জ্ঞানদানন্দিনী সব কাজেই পটু ছিলেন, অভিনয় করার কালেও তাঁর ডাক পরত, দেওরদের মাথায় পাগড়ি বেঁধে দেবার জন্যে তাঁরই ডাক পরত আর নাটকের মহলা দেবার জন্যে সবাই তাকেই খুঁজত । এই অভিনয়কে কেন্দ্র করে অনেক অপ্রতিভ রটনাও হয়েছিল। ঝড়  তুলেছিল বঙ্গবাসী পত্রিকা। নাটকে পাত্র পাত্রীদের তালিকার সূত্র ধরে ব্যাক্তিগত পরিচয় তুলে ধরে প্রশ্ন করা হয়েছিল , বলা হয়েছিল দেবর বউদি (রবীন্দ্রনাথ ও জ্ঞানদানন্দিনী)কি করে রাজা রাণীর অভিনয় করতে পারে স্বামী স্ত্রীর মত। দেবদত্ত ও নারায়ণী সাজেন ভাসুর ও ভ্রাতৃ বধূ (সত্যেন্দ্রনাথ ও মৃণালিনী)। কিন্তু জ্ঞানদানন্দিনী এসব ছোটখাটো কথার প্রতি কর্ণপাত করেননি, করলে অনেক আগেই তাকে ওখানেই থেমে থাকতে হত।

নিজের লেখা ছাড়াও অন্যকে উৎসাহ দেবার ঝোঁক তার বরাবরের। তিনি জ্যোতিন্দ্রনাথকে দিয়ে শকুন্তলা পড়ান, জ্যোতিন্দ্রনাথ পড়ে মুগ্ধ হন –তার আগে তিনি একটিও সংস্কৃত নাটক পড়েননি। জ্যোতিন্দ্রনাথের সংস্কৃত নাট্য অনুবাদের মূলে ছিলেন এই মেজোবউঠান।রবীন্দ্রনাথকে ছোটদের জন্যে লিখতে উৎসাহ দিয়েছিলেন এই জ্ঞানদানন্দিনী । তাঁর ‘বালকে’র জন্যেই কবি ছোটদের লেখায় হাত দিতে বাধ্য হন । একবার বোম্বাই থেকে ফিরে জ্ঞানদানন্দিনী  এসে জোর করেই একজন ফোটোগ্রাফ ডাকিয়ে এনে শাশুড়ি, জা, ননদ ও বাড়ীর অন্যান্য মেয়ে বউদের ফটো তুললেন। সেদিনের সেই ছবি থেকে আমরা  বিশ্বকবির পরিবারের একটা সমূহ চিত্র পাই –তা না হলে হয় তো সে সকল পরিবেশ ক্ষণকালেই  হারিয়ে যেত, ধারণা করার মত কোন অবলম্বন হয় তো পেতাম না।

জ্ঞানদানন্দিনীর সব কাজে জড়িয়ে থাকতেন সর্নকুমারী, ঠাকুর বাড়ীর অন্দর মহলের উজ্জ্বলতম তারকা। ঠিক সে সময়ের কথা, প্রথম সার্থক বাঙলা উপন্যাসখানি (দূর্গেশনন্দিনীর অমলিন স্মৃতি)লিখে বঙ্কিম ঔপন্যাসিক জীবন শুরু করেছেন, চারদিকে নাটক – প্রহসন আর নকশার ভিড় । ১৮৭৬ সালের ডিসেম্বরের মাসে ‘দীপনির্বাণ’ নামে এক উপন্যাস অষ্টাদশী তরুণী সর্নকুমারীর রচনায় প্রথম প্রকাশিত  হল। মেয়েদের জন্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়ে গেল। সত্যেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন এ নিশ্চয় তার ভাই জ্যোতিন্দ্রনাথের লেখা–তিনি তার ভাইকে অভিনন্দন জানান বিদেশ থেকে। কেউ কেউ ভেবেছিলেন মহিলার নাম দিয়ে হয় তো পুরুষই লিখে থাকবেন।তারপর একসময় দেখা গেল কলিকাতার কোন এক যুবক সভায় একজন মহিলা সভানেত্রীত্ব করছেন। এভাবে মেয়েদের মেধা একে একে আবির্ভাব হতে শুরু করল । 

আসলে ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা আধুনিক চিন্তাধারার কথা অনেক আগে থেকেই ভাবনায় মজুত করে রেখেছিলেন, আর সবসময় কি করে জীবনের কালো অধ্যায় থেকে আলোর ফলনে নিজেদেরকে প্রসারিত করতে পারবেন সে দিকে মূল লক্ষ্য ছিল বলে তাঁদের পরিবারের অনেক সদস্যাই আজ নানা বিভাগে বিখ্যাত হয়ে পৃথিবীতে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন ।  

তথ্যসূত্রঃ ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহল - চিত্রা দেব 

নিউজিল্যান্ড।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.