
জল-যুবতীর নদী হওয়ার গল্প
১ ।
ক্ষমার মত লাল এই গোধূলিবেলা । চোখের পাতায় তার কল্প, না কি কল্পদ্রুম ! সব আলো মিশে যেতে থাকে ঘরে ফেরা পাখির ডানার ঐ পালকে কবিতার অক্ষর নয়, আমি আঁকি ছায়া । কেউ দেখবে না, জানি, তবু ভাবি, একদিন, সে এসে ছুঁয়ে দেখবে এই ছায়া । ঢেউ এর মত সে খুলে নেবে একটি একটি করে বৃষ্টিপাতা !
অপেক্ষারত আমি ও এই ছায়া।
২।
খুব চাই, প্রতিদিন ভুলে যাও আমাকে। প্রথম থেকে, প্রতিদিন আমার সাথে পরিচয় হোক। নতুন ভাবে, আলাপে, গল্পে, কৌশলে। যতবার মুগ্ধ-চোখ আমাকে দেখে নেবে ততবার আমি জন্ম নেব। অথচ রাতের ঘুমগুলি ঝরে পড়ছে ঘড়ির ডায়াল থেকে। রেডিয়ামের উজ্জ্বল চোখ বেয়ে নেমে আসছে কিছু দূঃস্বপ্ন। আর ভোর-মেঘেদের সার্কাস খেলায় রূপালী ফিতায় ভর করে নামছে জলরাশি। গন্তব্যে ছুটতে চেপে বসা গাড়ির কাঁচে বিন্দু বিন্দু যে জলমুক্তা, তাকে সফল-ঘাম ভাবতেই আলোর শব্দে ফুটে উঠছে সহস্র ফুল। ঝর্ণায় গলছে বরফ; পথে পথে...
৩।
রঙিন প্রস্তাবের ঘুড়ি উড়ছে। জ্যোত্স্নার ঢেউ খুলে, রোদের ঝাঁঝে স্নান। যেন ঝরছে নীরব মাধুর্য। নিঃশব্দে গন্ধের উৎস খোঁজে অসামান্য অশ্রু। ফুটে ওঠে মুখ, চোখের জলে। ভালোবাসাহীন মুখ, দীর্ঘ ভালোবাসা। সন্ধান ফেরা বা যাওয়া, কিংবা অতীত বাস। বিন্দু-রেখায় পায়চারী করা ভবিষ্যতের আগে পায়ের নীচে পিষে যাচ্ছে, বর্তমান। রঙিন পাতা ভরে চিঠি আসে, রোজ, অসুখবার্তা, রঙিন, উড়িয়ে দিই...
৪।
ভূঁইচাঁপা নয়, পায়ে মাড়িয়ে যাকে চলে গেলে, সে আসলে তৃনলতা, গন্ধ নাও, দেখবে, তার শরীরে লেগে আছে মাটির গন্ধ, নাভিমূলে জেগে ওঠে শব্দের নিঃশ্বাস, খসে পড়ে সন্ধ্যাতারা, তাকে রেখে, পা বাড়িয়েছ অন্ধকার পথে, গ্রীবায় সেতার বাজাও, তৃষ্ণার্ত আঙুলে খোঁজো লাভাস্রোত, স্তব্ধ চোখে খুঁজে নাও উৎসমুখ, এ কেমন শিল্পবোধ! জলের অতল থেকে তুলে আনো আলো, আমি স্পর্শপ্রিয়, তোমার আঙুল থেকে তুলে আনি ঝরাপাতা, শুকোই রোদ্দুরে।
৫।
ছায়াহীন শব্দেরা হেঁটে বেড়ায় এখানে-সেখানে। শব্দভেদী বান ছুটে যায়, বৈরিতার কেচ্ছা আর কায়া ভেদ করে তালি-মুখর দর্শক সারিতে। শব্দ জাগানো যে অচীন হাওয়া, সেও বাজী ধরা ঘোড়ার মতো গোপন মন্ত্রণা করে। সুরে সুরে ডেকে যাওয়া মেঘেদের গানে উড়ে আসে ঝরাপাতারা। চলে একসাথে, আয়ুর পাহাড় ধরে, বহুদূর...।
উদাম নদীটি পোষাকের লোভে পড়ে নেয় রূপালী বালির আস্তরণ, জল তবু চুপ। অথচ কোন কালে কথা দেয়া আলভোলা পথিক অকারনেই ডেকে যায় জল-যুবতীকে। হয়তো কথা ছিল মরে যাবার, একসাথে, এর কোমল কিনারে। যেখানে অবিমিশ্র জল আর বালি। শর্তময় আকাশ দুলে ওঠে পায়ের তলায়। আত্মার ঝাপটানো ডানায় সে খুঁজে পায় তার নিজস্ব দর্পণ; পুনরায়। জল-যুবতীর নদী হওয়ার গল্পটা নিছক একটা শাব্দিক কাল্পনা ছিল!.
৬ ।
উড়ে চলা পাখিদের ছায়ার নিচে গুনে গুনে পথ চলি। আর ভাবি, কাঠঠোকরা কেন গাছের শরীর গুনে গুনে কাটে না! দূর থেকে ভেসে আসা, বাষ্পের দলে যোগ দেয় শহরের যত দীর্ঘশ্বাস। মায়ার-ছায়া বনসাই হয়ে দুপুরের কাছে বসে। অতিথি কক্ষের সামনে অপেক্ষাবন্ধু আর আমি, একসাথে, লুকানোমুদ্রা গুনবো। আর, দীর্ঘদেহী বিকেল এলেই বেদনাসংগ্রহের ঝোলা খুলে, বিছিয়ে, অংক কষে কষে শালিকনৃত্য বেছে নেবো। খড়কুটো ভর্তি ঠোঁটের শিল্পে বন্দী, যে গাছের মগডাল, তার ছায়াও ম্লান হয়ে আসে...
বরিশাল ।
সুচিন্তিত মতামত দিন