সরদার ফারুক






কবিতা নিয়ে – 






কেমন কবিতা আমরা পছন্দ করি ? কী রকম হওয়া উচিৎ কবিতার শরীর ? আমার মনে হয় এই প্রশ্নগুলো আমাদের সবাইকে ভাবায় । আধুনিক কবিতার মৃত্যু ঘোষণা করে এসেছে পোস্টমডার্ন , নিও মডার্ন কবিতা । ডিকনস্ট্রাকসন(বিনির্মাণ) , ডি হিউম্যানাইজেশনও(বিমানবিকীরণ) এখন পুরোনো হয়ে গেছে ।পাশ্চাত্যের নানা কাব্য আন্দোলনে আমরা আলোড়িত হই , চলে অন্ধ অনুকরণের মহড়া । আমি দরোজা জানালা বন্ধ করে রাখার পক্ষে নই , তবে নিজস্ব নিরীক্ষার প্রয়াস নেয়ার প্রয়োজন ভুলতে পারিনা ।

কবিতার বিষয়বস্তু নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই । মানুষের মৌল আবেগগুলো চিরন্তন , যদিও সমস্যাগুলোর চেহারা বদলায় , নতুন নতুন দর্শনের আবির্ভাব ঘটে । প্রকরণ ও প্রকাশভঙ্গিতেই সবচে’ বেশি পরিবর্তন লক্ষ্্য করা যায় ।পরিবর্তন যাই হোক - আমার পর্যবেক্ষণে কবিতা ক্রমশই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ।হাজারো কবিযশোপ্রার্থীর অবিরল সাধনা সত্ত্বেও পাঠক কেবল দূরে সরে যাচ্ছেন । কবিতার বই ছাপানোর কথা শুনলে প্রকাশক আঁতকে ওঠেন ।তবু নিজের খরচে অসংখ্য বই বেরুচ্ছে , আর কবিরা দেদার সেসব বই পরিচিতজনদের বিলিয়ে দিচ্ছেন । এই আলোচনায় আমি কারণগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা করবো না - কেবল চিত্রটাই তুলে ধরছি । জানি অগ্রসর কবিতাপাঠে পাঠকের যে যোগ্যতা অর্জন আবশ্যক , সে যোগ্যতা এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও বিরল - তবু প্রকৃত পাঠকদের অনেকেও কবিতা পাঠ থেকে আনন্দ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলেই আমার মনে হয় । 

পাশ্চাত্য কবিতা ভাবনা থেকে আমরা অনেক কিছুই সার্থক ভাবে নিয়েছি ।ফল্ট (চ্যুতি), এসট্রেঞ্জমেন্ট (অপরিচিতিকরণ ) শিল্পের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে ।তবু ভারতীয় কাব্যতত্ত্বে বর্ণিত -‘ রসাত্মক বাক্যই কাব্য ’ এই সংজ্ঞাকে আমি কখনোই ভুলতে পারিনা ।কবিতা কি আজ তার রস হারাচ্ছে ?বলতে পারবোনা , তবে কবিতার শরীর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ছবি ও সঙ্গীত ।হারিয়ে যাচ্ছে গন্ধ , বর্ণ , স্পর্শ সহ অন্যান্য সংবেদন । নানা নিরীক্ষার ফলে এক ধরনের চিন্তার উল্লম্ফনকে কবিতা বলে অভিহিত করা হলেও , সেগুলো পাঠককে স্পর্শ করতে ব্যর্থ হচ্ছে ।যদিও টি এস এলিয়ট কবিতাকে ভেবেছিলেন -“ it touches before being understood . ” খুব নিচু স্তরের একজন কবিতা পাঠক হয়েও আমার বলতে ইচ্ছে করে -

১/ কবিতায় ছবি , সঙ্গীত (গীতলতা) ফিরিয়ে আনতে হবে ।ছন্দ ,স্পন্দ , প্রয়োজনে অন্ত্যমিল ,অনুপ্রাস সব কিছু দিয়ে কবিতাকে স্মরণযোগ্য করে তুলতে হবে ।

২/কবিতায় স্পর্শ , ঘ্রাণ সহ সকল সংবেদন স্পষ্ট করতে হবে ।

৩/ সব মিলিয়ে পাঠককে আমূল নাড়িয়ে দিতে হবে শব্দের শক্তিতে । আমরা জেনেছি ‘ শব্দই ব্রহ্ম্ ’।
 শব্দে শব্দে বিবাহ দিতে হবে যথাশব্দের ব্যবহারে । কোন শব্দের সাথে কোন শব্দ অনিবার্য , আমরা তা খুঁজে বের করব ।

৪/ বাকসংযম অনিবার্য , যে কথা দুই লাইনে বলা যায় , সে কথা দশ লাইনে বলবো না ।

৫/রহস্য ও ব্যঞ্জনা - একাধিক পাঠে ও পাঠকবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন অর্থের সম্ভাবনা থাকবে কবিতায় ।

৬/মৌলিক আবিষ্কার ও উন্মোচন থাকবে কবিতায় ।

৭/আমাদের ঐতিহ্য , ইতিহাস , জীবন সংগ্রাম , যাপিত অভিজ্ঞতা সবই উঠে আসবে শিল্পিতভাবে ।

৮/কবিতা কোন মতবাদিক আদর্শের দাসত্ব করবেনা , যদিও জীবনলগ্ন দর্শন আবশ্যিকভাবেই উঠে আসতে পারে ।

১০ / সব মিলিয়ে তৈরী হতে হবে এক অভূতপূর্ব রস - কবিতার রস ।


ঢাকা ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.