শ্রীশুভ্র



"গণতন্ত্র ও প্রহসন!"









ক্ষমতা দখলের এই লড়াইয়ে যে ভাবে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তাতে এই প্রশ্ন মনে আসা খুবই স্বাভাবিক যে; এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদৌ কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব! বা সেই গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের কি আদৌ কোনো উপকার আছে! যে গণতন্ত্র কতগুলি রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাদের আখের গুছিয়ে নেবার প্রক্রিয়া ছাড়া আর বিশেষ কিছুই নয়, সে গণতন্ত্রে জনসাধারণের কিই বা এসে যায়? কারণ গণতন্ত্র কেবলমাত্র একটি সংবিধান নয়! নয় শুধুই সংসদীয় নির্বাচন পদ্ধতি! নয় নিছক কোনো মন্ত্রীসভা! গণতন্ত্র এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যেখানে শাসন ক্ষমতার একক জনগণ! শুধু এবং কেবলমাত্রই জনগণ! অথচ কাঁটাতারের দুই পাড়েই সেই গণতন্ত্র আজ বিপন্ন!সমসাময়িক সময়ের প্রেক্ষিতে কাঁটাতারের দুইপাড়েই অশান্ত বাংলা! দুইপাড়েই গণতন্ত্র সঙ্কটাপন্ন! রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শহীনতা, প্রশাসনিক দূর্বলতা, ক্ষমতার কেন্দ্রে অধিকার দখলের উদগ্র ব্যাগ্রতা সীমাহীন পর্যায়ে!

সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলা মৃত্যুমিছিল গণতন্ত্রকেই সংশয় সংকটাপন্ন করে তুলেছে! রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে উলুখাগড়ার মতো প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের! দলীয় পতাকার রঙ ধুয়ে একাকার মানুষের তাজা রক্তে! ভোটযুদ্ধে কে কত অঞ্চলের উপর প্রভুত্ব করার ঠিকেদারী পাবে লড়াই তাই নিয়ে! এই মৃত্যুযজ্ঞের ভিতের উপর যে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা সেই গণতন্ত্রে সমাজিক মঙ্গলসাধন কখনোই সুনিশ্চিত হতে পারে না!
গত শতকের মধ্যভাগে মাও সে তুং বলেছিলেন ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল! বিশেষ করে বৃটিশ ও মার্কিণ সাম্রাজ্যবাদ বিগত প্রায় পাঁচশ বছর ব্যাপী সারা বিশ্বে মাওয়ের এই কথাটিকেই আক্ষরিক অর্থেই সত্য করে তুলেছে! কিন্তু গণতন্ত্রের উৎস তো বন্দুকের নল নয়! বোমাবাজি নয়! বিপক্ষ গোষ্ঠিকে ভীতি প্রদর্শন করা নয়! অগ্নিসংযোগ কিংবা বাইক বাহিনীর পেশীর আস্ফালন নয়! গণতন্ত্রের উৎস কেবল মানুষ! মানুষের রায়! মানুষের নির্বাচন! আর নির্বাচনের সেই পরিকাঠামোয় আজকে ক্ষমতার উৎসই হল মানুষের ভোট! তাই রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে যেনতেন প্রকরণে সেই ভোট দখল! সেই ভোট দখলের লড়াইয়ে মানুষেরই অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠেছে আজ দুই বাংলায়!

সাধারণত গণতান্ত্রিক নির্বাচন কাঠামোয় নির্বাচক অর্থাৎ সেই জনগণের নির্বাচনের ক্ষেত্রটি অতি সঙ্কুচিত! যেমন পশ্চিমবঙ্গে হয় সিপিএম নয় তৃণমূল, বাংলাদেশে হয় আওয়ামী নয় বিএনপি! বাকি দলগুলি রয়েছে উপগ্রহের মতো! আসন সমঝতার নামে ক্ষমতার প্রসাদ প্রাপ্তির দিকেই তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিসীমা! ফলে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক সুফল পৌঁছায় না জনগণের দরজায়! আর প্রধান বিবাদমান গোষ্ঠীগুলি প্রধানত সহিংস বাতাবরণ তৈরী করে জনগণের মনে ভীতির সঞ্চার করেই জনগণের ভোট টেনে নেয় নিজের দিকে! তৃণমূল স্তরে যার যেখানে যতটুকু ক্ষমতা, সে সেখানে নানা উপায়ে জনমানসে ভীতির সঞ্চার করে এই বাতাবরণ সৃষ্টি করে যে ভোট না দিলে ফল ভালো হবে না!

এই প্রেক্ষাপটেই সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে এত রক্তক্ষয়! বাংলাদেশেও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কতজন ভোটযুদ্ধে বলি হবেন তা আগাম জানা না গেলেও দেশবাসী যথেষ্টই আশঙ্কিত! রাজনৈতিক দলগুলি ও তাদের নেতানেত্রীদের ক্ষমতাচর্চার লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এদেশের গণতন্ত্র! ভোট তার ক্রান্তিলগ্ন! কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দেশবাসীকে বাঁচাতে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন, তা কিন্তু কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোতেই সম্ভব! ফলে দেশবাসীকে বাঁচাতে গণতন্ত্রকেই আগে রক্ষা করতে হবে বর্তমান প্রহসন থেকে! আর সেই কাজে গণতন্ত্রই সবচেয়ে বড়ো আয়ুধ! শুধু প্রয়োজন সুযোগ্য নেতৃত্বের! শুধু প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের!
শুভোবোধের জাগরণের!

বর্ধমান ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.