হোম, সুইট হোম

এখন বাসর তো দূর- বৌয়ের সামনে যাওয়াই মুস্কিল। এমনিতেই ওর বাবা জমিদার বাড়ির চড়াই। বিশাল প্রাসাদের ঘুলঘুলিতে ডাঁটের সাথে বাস করতেন। সে বাড়ির চড়াইনীকে সে প্রেম করে বিয়ে করেছে। এখন বাসায় গেলে প্রেম তো পরে, স্হূলকায় গিন্নী না আবার বেলনপিটা শুরুকরে। সেটা বরই লজ্জাজনক ব্যাপার হবে। চড়াই সমাজে মুখ দেখানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। আজ একটা ঘর তাই খুঁজে বের করতেই হবে।। এই অবস্হায় করার একটাই থাকে। তাই চড়াই সেদিক পানেই উড়াল দিল। বন্ধুবর বাবুইয়ের ঘরের প্রান্তে এসে চড়াই উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল, কেননা বাবুইয়ের বউ তাকে দেখলে খবর আছে। গতবার সে যখন এখানে এসেছিল তখন বেশ তর্কাতর্কি হয়েছিল বাবু্ইয়ের সাথে। সে সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন কবিবর। সে ঝগড়া নিয়ে কবিতাও লেখালেখি হয়েছিল। বাবুই সেদিন বলেছিল- “কাঁচা হোক তবু ভাই পরের বাসা। নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।” এখন সব শিল্পভিত্তিক ফ্যাশন শুরু হয়েছে। সোনার বদলে মাটির গয়না, নুতন পোশাকের বদলে ছিঁড়াফাটা জামা- এসবেরই চল এখন, সবই ফ্যাশন! বাবুইকে কনভিন্স করে একটা কাঁচা ঘর যদি পাওয়া যায়, বউকে নাহয় ফ্যাশন বলেই চালিয়ে দেয়া যাবে।।:) কিন্তু দুঃখের কারণ হল বাবুইয়ের সেই বাসাটা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাটা কি শিফট হয়ে গেছে নাকি কে জানে ! তবু সাহস করে ডাক দিতেই কোত্থেকে যেন টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে এল বাবুই।। : আরে দোস্ত !! কি খবর তোর? : ভালো নারে, তালগোলের মাঝে আছি। : তাল তো দোস্ত পুরোপুরি গোল না। একটু থ্যাবড়া। : হুম, আমিও বর্তমানে খানিক থ্যাবড়া। : তাই নাকি?? বলবি না আগে! চল। : কোথায় চলব ?? : গ্যারাজে : গ্যারাজে কেন ! : ওখানে রিক্সার চাকার পাম্পার আছে তাই; তোকে পাম্প দিয়ে একেবারে গোলগাল বানিয়ে দিব। : তোর মাথা। দোস্ত বিয়া করছি।
তাই নিয়া খানিক পেরেশানিতে আছি। : বিয়া !! দোস্ত বিয়া খানিক পেরেশানি না। বেশ ভাল পেরেশানি। উন্নতমানের পেরেশানি। বি এস টি আই অনুমোদিত। : আরে ওরকম না। একটা আবাস দরকার। : কেন ?? তোর অট্টালিকা কি হল ! : দোস্ত ওইটা হবে না। তুই একটা ব্যবস্হা কর। : হা হা হা। : হাসিস কেন? : দোস্ত তুই কাঙালের কাছে ধন খুঁজলে সে হাসবে না তো কি করবে? : মানে ! : আমার নিজেরই আজকাল ঘর নাই। : কেন রে ?? তোর না নিজের বাড়ি ! : কইস না দোস্ত জবরদখল হইসে। শিল্পপ্রেমিক মানুষেরা নিয়ে আমার বাসা ঘরের দেওয়ালে টাঙাইয়া দিসে। মিউজিয়ামেও ঝুলাইসে। তাই আমি ভাবছিলাম তোর সাথে কদিন গিয়া সাবলেট থাকব। চড়াই-বাবুই সহআবাসন। হা হা হা। : এখন কি হবে! : বুঝতেসি না। : আইডিয়া বের কর। : দাঁড়া ভাবতে দে। : তাড়াতাড়ি ভাব। বাসায় গেলে বউ প্যাঁদাবে। : এত তাড়াতাড়ি প্যাঁদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেসে !! বছর খানিক তো মধুর সম্পর্ক থাকার কথা। : আমার বউ আবার সবকিছুতেই বেশ ফাস্ট কিনা। : ভালো। ভাবির সেলনাম্বারটা দিস তো… : কেন, সেলনাম্বার দিয়ে কি হবে ?? : মিসকল দিব !! হা হা হা… : মিসকল কেন ?? : পানি সমস্যার সমাধান… মিসকল দিয়ে টাংকি মারব- টাংকি ভর্তি পানি! আর সে পানিতে মধুর গোসল… : আর, আবাসনের কি হবে ?? : চল কাঠঠোকরার কাছে যাই… ওর কাছ থেকে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিব। মানুষ ব্যাটা তো আর পুরো গাছটা ঘরে টাঙিয়ে দিতে পারবে না… হা হা হা… : হুম, তা অবশ্য ঠিক; তবে কখন যে পুরো গাছটাকেই খাট-টেবিল বানিয়ে দেয় সেটাই ভাববার বিষয় !!!
চট্টগ্রাম ।
সুচিন্তিত মতামত দিন