(১)
পরকীয়া; শব্দটা শুনলেই মনের মধ্যে অন্য রকম একটা অনুভুব ! কখনো ঘৃণার, কখনো মধুর, আবার কখনো আফসোসের! পরকীয়া সম্পর্কে চলতি বাজারে অনেক গুলো কথা প্রচলিত আছে, তার মধ্যে একটি - “ফোনের সেরা নোকিয়া আর প্রেমের সেরা পরকীয়া”। বিষয় হল - মানুষ কেন প্রেম এবং পরকীয়ায় আসক্ত হয় ?
প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উত্তর এত সোজা সাপ্টা নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি এ নিয়ে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করলে মন্দ হয় না। যদিও একটি সীমিত লেখাতেই এই সম্পর্কে পুর্নাঙ্গ বিশ্লেষণ সম্ভবপর নয় । কেননা বিষয়টি এত’ই জটিল এবং স্পর্শ কাতর। সমাজের বোদ্ধা জীবীরা রে রে করে উঠবেন জেনেও একটু সাহস করে আজকের গুটি কয়েক লাইন সমীপে – ভালবাসা থেকে , সুস্থ জীবন থেকে , আদর্শ থেকে , বঞ্চিত এই সমাজের গুমরে কাঁদা মানুষদের প্রতি ।
'পরকীয়া' শব্দটি আমার কাছে যে কোন সম্পর্কের প্রতি অশ্রদ্ধা স্বরূপ বিশেষণ । জানিনা হয়তো একদিন সমাজ আরও সভ্য হবে , তখন হয়তো একটি ভদ্র সুশোভিত পোশাকি নামে আখ্যায়িত হবে । যেমন পূর্বের ' জেলখানা ' শব্দটির বর্তমান ভদ্র নামকরণ 'সংশোধনাগার'। যেখানে সংশোধিত হচ্ছেন নিত্যদিন আমাদের সমাজের মুখপাত্র‘রা (নেতা) , তাল মিলিয়ে তাদের দোসর ,ধর্ষণকারী, লুটেরা, চোর ডাকাত প্রমুখ ।
আমি আশাবাদী সংশোধিত হবে মানুষ তার কৃতকর্মে , জীবনের মুল ধর্মে । যে ধর্ম পরস্পর পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে শেখায় , ভালবাসতে শেখায় , আস্থা ভাজনে প্রীতি হয় , জীবনের মুল্য বোধকে স্বীকৃতি দেয় এবং মায়া মমতা পূর্ণ দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ করে । এই ক্ষেত্রে 'দায়বদ্ধতা মানেই শুধু রুটিন মাফিক কর্তব্য পালন নয় ' , আবার অধিক আবেগ প্রবন মানেই 'জীবন মানে জি বাংলা নয় '।
নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই যেমন একগামিতা দৃশ্যমান, তেমনি দৃশ্যমান বহুগামিতাও। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক করার মনোবাসনা যেমন আছে , তেমনি পরিস্থিতি বিবেচনায় উঠে আসে স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের মনোবাঞ্ছা। পুরুষের মধ্যে বহুগামিতা বেশি। কারণ অতীতের শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে শক্তিশালী এবং প্রতিপত্তিশালী পুরুষেরা যেভাবে নারীর দখল নিত, সেটার পর্যাক্রমিক ছাপ এখনো ক্ষমতাশালী পুরুষদের মধ্যে লক্ষ্য করলে পাওয়া যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারীরা পরকীয়া করে না বা তাতে সহমত পোষণ করেন না । নারীর আগ্রহ ,অনুগ্রহ কিংবা চাহিদা ছাড়া পুরুষের পক্ষে (যতই চ্যাঁচ্যাঁই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আমরা ধব্জাধারি) পরকীয়া করা সম্ভব নয় এটা বলাই বাহুল্য। তাই বিবর্তন মনোবিজ্ঞানের চোখে নারীর একগামিতার ব্যাপারটি এক ধরণের ‘মিথ’ বই কিছু নয় ।
আগেই বলেছি দীর্ঘস্থায়ী বা স্বল্পস্থায়ী স্ট্র্যাটিজি নারী পুরুষ সবার মধ্যেই আছে। বহু কারণেই একটি মানুষ পরকীয়া আবদ্ধ হতে পারে ,আগ্রহী হতে পারে বহুগামিতায়। মহান মানুষ ছাড়াও পৃথিবীতে , পরকীয়া বিষয়টি সাধারণভাবে পশু পাখিদের জগতের মধ্যে’ ও প্রচলিত আছে। যেমন,স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার ( বৈজ্ঞানিক নাম Actitis macuaia ) নামে আমেরিকার মিনেসোটার হ্রদে দৃশ্যমান এক ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গী রদবদলের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যমাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। জীববিজ্ঞানী মার্ক কলওয়েল এবং লিউস ওরিং প্রায় চার হাজার ঘন্টা ধরে এই পাখিদের জীবনাচরণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে , এ ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গী রদবদল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সঙ্গী রদবদলের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে আরো আকর্ষণীয় আকর্ষণীয় খুঁজে নেয় একটি নারী স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার।
আগেই বলেছি দীর্ঘস্থায়ী বা স্বল্পস্থায়ী স্ট্র্যাটিজি নারী পুরুষ সবার মধ্যেই আছে। বহু কারণেই একটি মানুষ পরকীয়া আবদ্ধ হতে পারে ,আগ্রহী হতে পারে বহুগামিতায়। মহান মানুষ ছাড়াও পৃথিবীতে , পরকীয়া বিষয়টি সাধারণভাবে পশু পাখিদের জগতের মধ্যে’ ও প্রচলিত আছে। যেমন,স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার ( বৈজ্ঞানিক নাম Actitis macuaia ) নামে আমেরিকার মিনেসোটার হ্রদে দৃশ্যমান এক ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গী রদবদলের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যমাত্রায় পাওয়া গিয়েছে। জীববিজ্ঞানী মার্ক কলওয়েল এবং লিউস ওরিং প্রায় চার হাজার ঘন্টা ধরে এই পাখিদের জীবনাচরণ পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে , এ ধরণের পাখিদের মধ্যে সঙ্গী রদবদল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সঙ্গী রদবদলের মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে আরো আকর্ষণীয় আকর্ষণীয় খুঁজে নেয় একটি নারী স্পটেড স্যাণ্ড পাইপার।
মানব সমাজেও কিন্তু এ ব্যাপারটি লক্ষ্য করলে খুঁজে পাওয়া যাবে। বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে অন্য কাউকে অধিকতর আকর্ষণীয়, সুদর্শন কিংবা কাংক্ষিত মনে হলে, কিংবা বর্তমান সঙ্গীর স্ট্যাটাসের চেয়ে উঁচু সামাজিক পদমর্যাদাসম্পন্ন হলে কেউ কেউ তার সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ।
আমি মনে করি এটা শুধু মাত্র যৌনতা , লোভ এবং সাময়িক প্রশান্তি । আমি এও মনে করি , একটি বন্ধন বা স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করা’ র পূর্বে, যে কোনও নারী বা পুরুষ স্বাভাবিক ভাবে আকর্ষণীয় বা সুদর্শন এর থেকেও বেশি আস্থা রাখেন পূর্বের ভুল ত্রুটি সরিয়ে রেখে , একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস এবং একাগ্রতার প্রতি । যেখানে থাকবে প্রেম , ভালবাসায় আচ্ছাদিত জীবনের প্রতিক্ষণ , মানসিক শক্তি , ভরসা , এবং অটুট বন্ধন । স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পরে বিশ্বাস এবং একাগ্রতার স্খলনেই যেখানে মন ভাঙার সুত্রপাত , সেখান থেকেই নতুন করে এই বাঁচার মৌলিক চাহিদা’ ই সমাজের ভূষিত ভ্রু কোঁচানো নামকরণ 'পরকীয়া' ।
অনেকেই বলবেন , সংসার ,ধর্মে আরও ধৈর্য , আরও বিনয় আরও সংযম রাখা উচিৎ , রাখা উচিৎ নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে রাগ ক্ষোভ অভিমান প্রশমিতে। বলতে তো আমারও ইচ্ছে করে , যখন একটি নারীর বিনয় , শ্রদ্ধা , সহমর্মিতা বার বার তার সঙ্গী বা জীবন সঙ্গীর দ্বারা প্রতারিত হয় , সমাজের চোখ অন্ধ অবতারে নিবেদিত থাকে , বার বার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় , তখন কিন্তু উল্লেখিত নারীর সমাজের বোদ্ধাদের রচিত বানী মাথায় আসে না । মাথায় আসে না সমাজের বোদ্ধা সেটা কি ? আদৌ খায় না মাথায় দেয় । তদ্রুপ , একটি পুরুষের ক্ষেত্রেও সম ভাবনা বিবেচ্য।
অনেকেই বলবেন , এটাই কি বাঁচার মুল পথ পরিবর্তে ? অনেকেই বলবেন একই গৃহে থেকে এমন বহির্ভূত সম্পর্ক এক ধরনের দ্বি – চারিতা ? প্রয়োজনে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে , ডিভোর্স করা যেতে পারে ! এই ক্ষেত্রে – ‘’ যেতে পারে , হতে পারে ‘’ সেই আমাদের নিত্য দেখা চাকুরীজীবী এবং অবস্থা সম্পন্ন মানুষদের পথ চলিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা রাষ্ট্রের কাছে বিভিন্ন দাবি আদায়ের মিছিলের মতো । দাবী কি আদৌ গৃহীত হয় ? সংশোধিত হয় মানুষের বাঁচার পন্থা ? আমরা কি দেখতে পাই দাবীর স্বপক্ষে ভুখা মানুষের কন্ঠ ?
সন্মিলিত মানুষের গন দাবী যেখানে ভূলুণ্ঠিত হয় প্রতিদিন , সেখানে একটি অসহায় নারী বা পুরুষ কতটা বেগে জীবনের কথা তুলে ধরতে পারেন । কতটা তাদের কথায় শ্রদ্ধা রেখে একটি বলিস্ট পদক্ষেপ নিতে পারেন গুণীজন !
যতটা অনুভব করা যায় –
১) সমাজের এক পেশে বি -মাতৃ সুলভ আচরণে উল্লেখিত নারী পুরুষের সার্বিক আবহাওয়া বেশির ভাগ’ ই অনুকুলে থাকে না ।
২) আবার কোন পক্ষে অনুকুল হাওয়া বইলেও অন্য পক্ষের গতি শ্লথ থাকে চুরান্ত আবেগে । এই ক্ষেত্রে জন্ম দেওয়া সন্তান তার ভবিষ্যৎ এমন কি পূর্বের বাঁধনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত কিছু মায়া থমকে দেয় আরও একটি নব জীবনের দোর গোরায় ।
৩) সামাজিক মর্যদা , অর্থনৈতিক সমস্যা প্রভূত সমস্যায় জেরবার হয়ে যাবার মৃদু ভয় আশাঙ্খা পর্যদুস্ত করে ।
৪) পুনরায় সঠিক সঙ্গী নির্বাচন , সামাজিক সঙ্গতি এবং মুক্ত কাননে আরও একবার পা ফেলার সাহস অনেকের থাকে না বলেই হয়তো অনেকেই নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হন না । কিন্তু বিপরীতে যারা সাহসে পদক্ষেপ গ্রহন করেন নতুন করে বাঁচার – সমাজ সভ্যতা তাদের স্বাগত না জানিয়ে পরকিয়া লেবেল সাটিয়ে দেন । ব্যাপারটা এমন , আদা তুই খেয়েছিস – ঝাল তুই বোঝ ।
৫) বিবিধ
আমার মনে হয় যারা পরকীয়া সম্পর্কে আবদ্ধ তাদের কে খারাপ প্রজাতির ভাবার কোন কারণ নেই । উল্লেখ্য শুধুমাত্র শাররিক সম্পর্কের জন্য , বা অর্থ প্রতিপত্তের লোভে একটি সম্পর্ক কখনই সমর্থন যোগ্য নয় । মানসিক , প্রভূত সামাজিক শিক্ষা এমন কি শাররিক চলন বলনে মননে কোমলতা , সঙ্গীর জন্য উদ্গ্রিবতা , বোধ বিশ্বাস না থাকলে এই সম্পর্ক দিনের পর দিন গুমরে গুমরে কাঁদবেই । যেমন বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে আর সুশীল সমাজ হাসে ।
বাহ্যিক সম্পর্কে আবদ্ধে থেকেও আন্তরিকতার সহিত , বিনয়ের সহিত সংসার – স্ত্রী , স্বামী - সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন এমন পুরুষ / নারীর সংখ্যাও এই ঘুনে ধরা সমাজে কিন্তু কম নয়। এর পাশাপাশি রয়েছে আরও একটি পদক্ষেপ লিভ ইন । জানিনা কি ভাবছেন বোদ্ধা রা ।
প্রেম করা বা প্রেম নিবেদন করা সে কি সমাজের ছাড়পত্র পাওয়া ? যৌনতা তো এখানেও অবাধ ! পরকীয়া যেমন , তেমনি প্রেম । লুকিয়ে ঝুকিয়ে করতে হয় বলেই হয়ত এত গভীরতা এত আকর্ষণ এত ভরসার স্থল । যদিও এখন প্রেমের গভীরতা মাপার আগে শরীরের গভীরতা মাপা হয়ে যায় তাই প্রেম আর গভীরে যেতে পারে না, শিকড় সহ উঠিয়ে আরেক জায়গা লাগানো হয়। তাহলে কি প্রেম’ ও এক সময় পরকিয়ার মতো এমন স্পর্শকাতর হয়ে যাবে?
ভালো লাগলো। এই বিষয়ে আরো কিছু জানার আগ্রহ থাকলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে । আশাকরি আগামীতে আরও কিছু জানাতে পারব ।।
মুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন