
চতুর্মুখে নারীবাদ
শিবমন্দিরের পাশে, বটগাছটার নীচে,
কালীবুড়ির প্রাণহীন দেহটা একাই বৃষ্টিতে ভিজছিল,
শেষসময়ের জলটুকু দিতেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছিল,ভরা ফাগুনেও।
শুনেছিলাম, বুড়ির নাকি চার ছেলে,কিন্তু ভাগের মা আর গঙ্গা পায়নি।
শিবমন্দিরের আশেপাশে ভিখারীরা গঙ্গাযাত্রার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিল।
কালীবুড়ীর জন্য কোন নারীবাদী স্লোগান কিন্তু নেই।
আমাদের বামুনদিদি, কাকভোরে গোসাবা থেকে আসে,
পাঁচ পাঁচটা মেয়ে বলে বংশরক্ষার জন্য ওর বর আরেকটা বিয়ে করেছে।
বামুনদিদি উদয়াস্ত রক্ত জল করে খাটে ছয়টা মুখে অন্ন তুলে দিতে,
এখনও সেই মানুষটার কল্যাণে হাতে শাঁখা, মাথায় সিঁদুর,
কিন্তু আত্মসম্মান হারিয়ে সতীনকাঁটায় মাথা নোয়াতে রাজি নয়,
আমাদের বামুনদিদি কিন্তু নারীবাদ কথাটা জানে না।
ক্লাশ নাইনে পড়া আশিয়া,স্বপ্ন দেখতো টিভির ‘অফসর বিটিয়া’ হওয়ার।
অভাবের সংসারে লাউডগার মত বাড়ন্ত মেয়ে,মা বাপের কপালে ভাঁজ,
পড়ার তো ইতি বটেই, সাথে নগদ দেনমোহরে দোজবরে বিয়ে,
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পোয়াতী মেয়ে,খেটে খাওয়া ঘরে
আধপেটা খাওয়া শীর্ণ শরীরে মা হওয়ার ঝক্কিটা আর সইলো না।
ছবির আশিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি, ও নারীবাদ কথাটা শুনেছিল কিনা।
আদিবাসী মেয়ে নেলী, মায়ের সাথে ফি রবিবার হাটে আসতো সব্জি বেচতে,
কালো পাথরে খোদাই করা দেবশিশু,সর্বশিক্ষা অভিযানে ক্লাস ‘থিরি’ সবে।
এক বর্ষাদিনে বাড়ী থেকে ধানক্ষেতে যেতে হারিয়েই গেল মেয়েটা।
মাছি ভনভন উদাম দেহটায় দগদগ করছিল
কতগুলো মানুষরূপী নারীমাংসলোভী শেয়াল কুকুরের দাঁত নখের চিহ্ন।
কুঁড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই ‘মেয়ে’ হবার মাশুল! নারীবাদ নেলীর জন্য নয়!
আচ্ছা,কালীবুড়ির ছেলেরা, বামুনদিদির বর,
আশিয়ার পরিবার বা ঐ নরপিশাচগুলো,যারা মিশে আছে তোমার আমার,
আমাদের পাড়া পড়শীর ভীড়ে,মুখোশের আড়ালে,
তারা কি কোনো নারীর সন্তান নয়?
কোনো নারী কি তাদের ভাই বলে রাখী পরিয়ে দেয় নি কোনদিন?
তারা কি কোনদিন প্রেম নিবেদন করেনি কোনো নারীকে?
তাদের কি কোন নারীর কন্যাসন্তান কোনদিন বাবা ডাকেনি?
ওরাও কিন্তু নারীবাদ মানেনা।
কলকাতা ।
durdanto ------- naribad
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন