ঝিলমিল


                    





                    কবি গুরু 








 সহজ করে কথা বলা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই ,কবি গুরুর উপর লেখা চাই – শব্দের  মিছিল  , সেই থেকে  আমায় একরাশ ভাবনায় ফেলে দিল ।  আসলে এত  বড় মাপের মানুষের  বিশ্লেষণ করার মত কিছু আমার  ক্ষুদ্র মাথায় নাই । শুধু মন সাঁয় দিল , তাই লিখতে বসা ।  

কবি গুরু হলেন ভালোবাসা -   মানুষের কল্যাণকর  উৎকৃষ্ট ভালোবাসার মধ্যে গুরুর সকল কর্ম উদ্ভাসিত হয়ে আছে যা হাজার বছর পরেও সমাধিত হয়  না । তবু বিদ্যা বলে কথা , দৌড়ালাম আমার ফেবুর প্রিয়  বন্ধু  শ্রীশুভ্র’র কাছে । যার কাছে কবি গুরু সম্পর্কিত যথেষ্ট ধারনা আছে ।  উপদেশ পেলাম গান নিয়ে লিখতে, যেহেতু আমি রবি’র গান গেয়ে থাকি । আমার গানের উপরেও সি ধরনের কোন ডিগ্রী নাই ।  -  তবু আমার শিক্ষক  ছায়ানটের  সনজীদা আপার বইকে পড়লাম ( রবীন্দ্র সংগীতের  ভাবসম্পদ ) । 

রবির গানকে কি করে সূরে বাধা হয়েছে তাই নিয়ে  নিখুঁত  চিত্র সেখানে সার্থকভাবে রচিত হয়েছে , বলা বাহুল্য যারা বইখানা নিয়ে একবার পড়েছেন চমৎকৃত বা আদৃত হবেন  ।  

গানের সুর আর বানীর সমন্বয়ের  চলনকে তিনি বলেছেন এক  দম্পতির মতন ,  সুর বানীকে নিয়ে অসীমের দিকে যাত্রা করে কিন্তু সূর বানীর উপরেই নির্ভরশীল ।  তার মানে সূর আরোপিত হয়  বানীর  কাঠামোর উপর  আস্থাকরে , তবু সূরের মৌলিক এক চলন আছে যা কিনা তার মাধুর্যময়ে শ্রুতিতে ধরা পরে । একটা দিন হাসবে না কাঁদবে  সেই দিনের জলবায়ুর  নির্দেশনার উপরেই হিসাবটা হয় ; তবে সে সময়টাতে সে  বসে সূচীকর্মে  নিপুণ দক্ষতায় সেলাই করবে,  কবিতা  লিখবে বা আনমনে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে দিনের সাথে যৌথ  রেশ রেখেই।

--  এ'রকম ভাবেই আপন আপন  ব্যাক্তিত্ব  যার যার অভিরুচি মোতাবেক রচিত হয়  ।  যা হোক গানকেও  সেভাবেই  রাগরাগিনীর /  তাল-লয় -ঠাট / খেয়ালের অনেক সূক্ষ্ম  বিষয়াদি দিয়ে  নানাভাবে বিশ্লেষন করা হয় - আমি শুধু আমার ভাষা প্রয়োগে যতটুকু অনুধাবন করেছি ততটুকুই লিখতে পারছি ।  
এখানে গল্পে গল্পে রবিকেই  ভাবছি , রবির ধর্ম  বা ঈশ্বর ভাবনা - আমার নিভৃতে বিপুলভাবে নাড়া দেয় --তিনি যেন সকল ধর্মের সারমর্মকে তুলে ধরতে পেরেছেন । তাই তিনি পৃথিবীতে নিভৃক চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন স্মিত বিনয়ের অবোগাহন দিয়েই  - 

‘’ চিত্ত যেথা ভয়  শুন্য উচ্চ যেথা শীর ‘’ -এ কথাগুলো তার দ্বারাই লেখা সম্ভব ।

 তিনি শাশ্বতের করেই মানুষকে ভাবেন - নদীর জল আর বৃক্ষের ফল খেতে ডাকা কোন  বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেনীর জন্যে নয় ,সকল মানুষের উপভোগের করেই তা সৃষ্টি । তবে তার দৃষ্টি থাকে আরও  সুন্দর  নান্দনিক করে তাকে উৎসর্গ করে চয়ন করাতে - আমরা ফল দিয়ে আচার করি যা গৃহীনির রুচিকে বৃদ্ধি করে সভ্যতাকে সাধুবাদ জানায়   -  তিনি বিশ্ব মিলনের কথা ভাবেন - হীনমন্যতা বা কুটীলতাকে তিনি  পরিত্যাগ করে গেছেন সর্বত্র  । 

আকাশ আমায় ভরল আলোয় , আকাশ আমি ভরবো আলোয়  / আকাশ ভরা সূর্য তারা  বিশ্ব ভরা প্রান / যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে /  বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা - বিপদে আমি না যেন করি ভয় / পথে পথে এমনি জাগরনি আদর্শের মোলাকাতে তার রচিত গান / কবিতা/  গীতিনাট্য  গল্প উপন্যাসে   আমাদের পথিক হৃদয় অজান্তে  ঠাই  করে নিয়েছে ।

আর  নজরুল / রবি গুরু সেই যুগেই দ্বিধাইীনভাবে  প্রাকাশ করে গেছেন যে  মানুষেরাই  ধর্মকে অধর্মের মধ্যে টেনে এনে সাধারন মানুষকে ধোঁকা দিয়ে সমাজকে শোষন করে নিচ্ছে । আমরা আজও  সমাজে সেভাবেই  নিগৃহীত হয়ে আছি - আমরা এক পৃথিবীর সমগ্র মানব সত্ত্বায় পরিচিত হয়ে পরিগনিত হতে পারছি না । শাসক শ্রেনীর চরিত্র আজো কলুষিত , দুর্বলের  উপর সবলের উৎপীরন সকল কবি মহলকে আজও যাতনা দেয় । 

কিছু রবির  কথা হৃদয়ে তুলে রেখেছি  তা হলো তার অসম্ভব দর্শনবোধ ,  জীবনের  ছোট ছোট কথা প্রকাশ করেছেন  নর -নারীর প্রেমের  মাঝে কৌতুক বেধে –
যেমন অনেক কথা যাও যে বলি  কোনো কথা  না  বলি / তুমি এসেছিলে তবু আস নাই জানায়ে গেলে   / কেটেছে একেলা বিরহের বেলা আকাশ কুসুম চয়নে --তার এমন  অনেক বিরহের গান সবার অন্তরে একি সুরে বাজে, তার সুখ - চাওয়া -পাওয়াগুলোও যে আমাদের সাধারণ জীবনের সাথে সমানতালে  বাধা  । 
ভালো লাগে , কত না গান-  দিবস রজনী  আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি  / আমার মন  বলে 'চাই, চাই, চাই গো - যারে নাহি পাই গো'  ।  
সুখের গান-  সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে  /   ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে  / ইত্যাদি । 

আমাদের দেশের   ষড়ঋতুও নর- নারীর চরিত্রে অভূতপূর্ব ভাবে  ছায়া ফেলেছে সে কথারও  প্রকাশ করে করে গেছেন । কোথাও উৎসবের ঘনঘটায় পদচারনা হয়েছে  মনুষ্য প্রকৃতির । আর পূজা পর্বের  গানে ঈশ্বর প্রেমের সিগ্ধতায় কে না মুগ্ধ হন ?  যিনি গান গাচ্ছেন ধ্যান যোগে তিনি চলে যাচ্ছেন মর্ত থেকে স্বর্গলোকে , চেতনাতে তার আত্মশুদ্ধির যোগাযোগ বাড়ছে বই কমছে  না , দুঃখকে জয় করার উপলদ্ধি এভাবেই অলৌকিক ভাবে তার বিস্তার ঘটে । চলার  ছন্দে   জীবনের  সুখ- দুঃখকে গুরুজী রুপোকের আলোয়ে প্রকাশিত করে গেছেন-তিনি দুঃখকেও বরণীয়  করে সেখানের বেদনাকেও পৃথিবীকে  অভূত সুরের লহরীতে দান করে গেছেন  -

" বেদনা কী ভাষায় রে 
মর্মে মর্মরি গুনজরি বাজে " 

--সুর আর বানীর আকুল কীর্তন বাতাসে যে হাহাকার তুলে -একজন  পাষানেরও তাতে  বুক  ভেঙ্গে  যায় - সুর আর বানী একাকার হয়ে   এক যোগে চিরোনাথের কাছে আশ্রয় ভিক্ষা মাগে -- এই গানটি  এমনি শক্তির আধারের বাহক যে শিল্পীর কণ্ঠ  আর  অন্তরের দরদ ঠিক ভাবে প্রকাশিত হলে সে ঈশ্বরের কৃপা থেকে কক্ষনো  বিমূখ  হয়ে ফিরে আসবে  না - এই গ্যারান্টি আমিও দিতে পারি ।  এলোমেলো অনেক কথার মেলবন্ধনের  ডাল পালা ছাড়াচ্ছে আমাতে করে --শুধু বলি সাগরের তীরে বসে থেকে সাগর বক্ষের গভীরতা মাপা যায় না , সাগরটা যে বড় অনুভবই করা যায় , পুরোপুরি ভাবে তাকে ব্যাক্ত করা যায় না । 

নিউজিল্যান্ড ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

সুচিন্তিত মতামত দিন