খুচরো জ্ঞান
শব্দের মিছিলের ১ম বর্ষ পুর্তি উপলক্ষে নতুন এক বিভাগ প্রকাশিত হল । যার পোশাকি নাম '' সবজান্তা '' ।
উল্লেখিত বিভাগে প্রতি সংখ্যায় কল্যাণকর বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক মুক্ত আলোচনা নিয়েই মূলত আলোকপাত । এই প্রচেষ্টা একান্তই ভালো লাগলে মন্তব্যে আমাদের আবদ্ধ করবেন আগামীর সফল প্রকাশনার লক্ষ্যে ।
জ্ঞানের বিতরণে আজ আমরা ঝালিয়ে নেবো - গরমে স্বাস্থ্য সচেতনতা , পর্যাপ্ত ঘুম এবং শরীরের কাঠামো মজবুত করণে করনীয় সমূহ ।
~~~~~~~~~
প্রচণ্ড গরমে সবারই ত্রাহি অবস্থা। এ সময় সুস্থ থাকতে হলে শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গরমে শরীর অল্পতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কোনো কাজ করতে গেলে হাঁপিয়ে উঠি আমরা। মনমেজাজও হয়ে ওঠে খিটখিটে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জল খেতে হবে। ডাবের জল কিংবা ফলের জুসও খেতে পারেন। ঘরে তৈরি স্যালাইন খেলেও ভালো।

গরমে ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। গরমের সময় বিভিন্ন কারণে ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার প্রচুর পরিমাণ ঘাম তৈরি হয় বলে ঘর্মগ্রন্থিকে ফুটো করে অনেক পরিমাণ ঘাম ত্বকের নিচে জমা হয়। এতে জ্বালাপোড়াও হয়। এভাবে ঘামাচি বাড়তে থাকে। তেল বা নিম্ন মানের লোশন ব্যবহারেও ঘামাচি বাড়ে। ঘামাচির হাত থেকে বাঁচতে বিশেষ ধরনের ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব বেশি জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হলে হাউড্রোকর্টিসন (১ শতাংশ) ব্যবহার করুন।
গরমে পেটের বিভিন্ন রোগ হয়। এর মধ্যে ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড অন্যতম। এসব থেকে বাঁচতে জল অবশ্যই ফুটিয়ে পান করুন। কারণ, জল ও খাবার থেকেই এসব রোগ ছড়ায়।
রাস্তার ধারের খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। বাইরে খেলে থালা-গ্লাস পরিষ্কার আছে কি না, আর খাবারটা টাটকা আছে কি না সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। রাস্তায় গাজর, শসা, লাচ্ছি, আখের রস ইত্যাদি খাওয়া উচিত নয়। স্বাভাবিক ভাবে উচিৎ নয় সফট ড্রিঙ্কস বা চকলেটেও ।
পাশাপাশি , গরমে শিশুদের প্রতিও বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এ সময় শিশুদের যথাসম্ভব ঠান্ডা স্থানে রাখুন। তাদের সুতির ও ঢিলেঢালা পোশাক পরান। বেশির ভাগ শিশুর প্রচুর ঘাম হয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেতে দিন।
শুধু জল খেতে না চাইলে ডাব বা বিভিন্ন ফলের জুস বানিয়ে দিন। এ সময় শিশুদের নিয়মিত স্নান করাতে ভুলবেন না। প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতেই পারে।
তবে একটু সতর্ক হলে গরমের এই খরতাপের সময়টাও ভালোভাবে আর নীরোগ শরীরে কাটাতে পারি আমরা।
জিমে না গিয়েও ওজন হ্রাস
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মেদবিহীন ছিপছিপে সুন্দর স্বাস্থ্য সবার প্রিয়। আমরা কম বেশি সকলেই চাই নিজের সুগঠিত, সুগড়ন ও কার্যক্ষম শরীর। এই প্রত্যাশা পূরণ সহজ কাজ নয়। সংযম এবং নিয়মিত শরীর চর্চায় ব্রত শক্ত মনের মানুষই স্বাভাবিক ওজন ও সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে থাকেন। এজন্য অহেতুক জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেইপাশাপাশি এজন্য খুব বেশি প্রচেষ্টা বা জোগাড় যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না।
বাড়িতে ব্যায়াম পদ্ধতি:
• বাড়িতে কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন। এতে সময় একেবারেই কম লাগে। অথচ আপনি ফিট থাকতে পারবেন এবং অতিরিক্ত মেদ শরীরে জমা হবে না
• বাড়িতে যতো সময় অবস্থান করবেন সেই সময়ে শুয়ে বা বসে না থেকে হাঁটা চলাও যে ব্যায়াম তা অনেকে ভাবেন না। আপনার বাড়িতে যদি সিড়ি থাকে তাহলে কারণে অকারণে দৈনিক কয়েকবার ওঠানামা করতে পারেন। আরো ভালো হয় যদি হালকা জিনিসপত্র বহন করা যায়। এত আপনার মাসল টোনড হবে ।
( তবে ভেজা পায়ে সিঁড়িতে উঠে বিপদ ডেকে আনবেন না আমার । সেই সাথে শাররিক কোন পুরনো অসুবিধে থাকলে সিঁড়ি পরিহার করা ভালো । অন্তত যাদের কোমরে বা মেরুদন্ডে আঘাত আছে )
• বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং ব্যায়াম, যেমন- আর্ম স্ট্রেচিং বা লেগ লিফটিং করতে পারেন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং বিভিন্ন অংশের ফ্যাট ঝরে যায় ।
• হার্ট সুস্থ রাখার জন্য জগিং খুব ভালো ব্যায়াম। বাড়ির যে কোনো জায়গায় আপনি স্পট জগিং করতে পারেন। তবে এ সময় উপযুক্ত জুতো পরবেন, যাতে পায়ের ওপর স্ট্রেস না পড়ে ।
• দু’হাত সোজা করে উপরের দিকে রাখুন। পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে যতোটা পারেন লাফান। কোনো বিরতিছাড়া এভাবে এক মিনিট লাফাবেন। এক মিনিট ব্রেক দিয়ে দিয়ে দুই থেকে তিনবার সাইকলটা রিপিট করুন।
• পুশ-আপ্স করতে পারেন। এই ব্যায়াম আবার চেস্ট ও আর্ম মাসলের শক্তি বাড়ায়। মাটির ওপর উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ুন। তারপর দুই হাতের সাহায্যে মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। লক্ষ্য রাখবেন যেন আপনার হাটুতে ভাজ না পড়ে। শুরুতে ৫ থেকে ১০ টা পুশ আপ্স দেয়ার চেষ্টা করুন। সকালে এক সেট এবং বিকালে এক সেট পুস-আপ্স করতে পারেন।
• পেটের মাসলের স্ট্রেংথ বাড়ানোর জন্য সিট-আপস জাতীয় ব্যায়াম করতে পারেন। মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাটু ভাজ করুন। ডান হাত বা কাঁধের ওপর এবং বা হাত ডান কাঁধের ওপর রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে শরীরের ওপরের অংশ মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করুন। মাঝামাঝি অবস্থানে যেতে কয়েক সেকেন্ড থাকুন। পরে ক্রমশ শোয়া অবস্থায় ফিরে যান। শুরুতে ৩ থেকে ৫টা সিট আপ্স যথেষ্ট হবে।
কতিপয় বদঅভ্যাস গুলি ত্যাগ করতে হবে।
প্রথমত: মিষ্টি ও তেলে ভাজা খাবেন না। ভাত খাবেন পরিমাপ মতো ( চোখের খিধে পরিহার )।
দ্বিতীয়ত: প্রতিদিন জীবনযাপনে যাই ঘটুক নিজে নিজে একটু ব্যায়াম করে নেবেন। সেটা হাটা,সাঁতার বা ফ্রি হ্যান্ড যাই আপনার পছন্দ। এ দু’টি হলো জিমে না গিয়ে ওজন কমানোর প্রাথমিক ও অন্যতম শর্ত।
মোটা ও ওজন বৃদ্ধির কিছু কারন -
•ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ প্রয়জনের অতিরিক্ত খাওয়া।
• শরীরে খাবারের প্রয়োজন নেই, অথচ ভালো খাবার দেখলে খেতে ইচ্ছে করে বলে অনেকে সারাদিন খান। এতে শরীরে মেদ জমে
• সারাদিন শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে ওজন বাড়ে ।
• বংশগত কারণে মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকে। খাবার যখন কম থাকে, জিন শরীরে ফ্যাটের স্টোরেজ বাড়িয়ে দেয়। এরপর খাবার বেশি খেলে এবং শক্তি ক্ষয় কম হলে ওজন বেড়ে যায় ।
স্বাভাবিক উপায়ে ওজন কমানো:
ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায় হলো-এমন ডায়েট মেনে চলুন যাতে বেশি পরিমাণে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার আছে, মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন আছে এবং কম পরিমাণে ফ্যাট আছে। যারা অফিসে যান তারা ব্রেকফাস্টটা খেয়ে দুপুরের খাবার অফিসে যাওয়ার সময় লাঞ্চ হিসেবে নিয়ে যান।
মনে রাখতে হবে অধিক পরিমানে ঘাস পাতা খেলেই বা খাওয়া কমিয়ে দিলেই যেমন করিনা কাপুর হওয়া যায় না তদ্রুপ সারাদিন লোহা লক্কর টানাটানি করে গোঁফ নামিয়ে সালমান খান হওয়া যায় না ।
প্রতিটি বিষয়ের উপর থাকা চাই - অধ্যাবসায় ও বিশ্বাস ।
ডায়েট টিপস:
• আলু, কুমড়ো, কাঁচা কলা খাবেন না
• ছাঁকা তেলে ভাজা কিছু খাবেন না; তা সে বেগুন হোক বা পটল ভাজা হোক
• অ্যালকোহল, এনার্জি ড্রিংকস, হেলথ ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস খাবেন না
• চিনি একেবারেই খাবেন না, প্রয়োজনে সুইটনার চলতে পারে
• গরু, খাসির মাংস ও চিংড়ি মাছ মোটেই খাবেন না
• আপনার পছন্দ-অপছন্দের খাবার, বর্তমান খাদ্যাভ্যাস ও বাজেটের ওপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট তৈরি করুন
• কোন ধরনের কাজের সঙ্গে আপনি যুক্ত তার ওপর নির্ভর করবে আপনার পারফেক্ট ডায়েট
• আপনার ডায়েটে যাতে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন
• প্রতিদিনের ডায়েটে হোলমিল এবং বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য রাখুন, কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, যেমন-হোলহুইট ব্রেড, রাইস, ওটস মিল, হোল মিল পাস্তা, বার্লি, ব্রাউন রাইস খান প্রয়োজন মতো
• ওবেসিটি কমিয়ে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে ফল ও শাক সবজি খান
অসময়ে খিদে পেলে করণীয়:
>অসময়ে খিদে পেলে হেলদি স্ন্যাক্স খান। লাঞ্চ এবং ডিনারের মাঝে ৩/৪ ঘন্টা পর পর হেলদি স্ন্যাক্স খেতে পারেন। খুব খিদে পেলে শুকনো রুটি বা টোস্ট বিস্কুট খান। ফলও খেতে পারেন। লাউ বা অন্য সবজির রস বা সিদ্ধ শাক সবজি খেতে পারেন। বেশি রাতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাবেন।
বিশেষ সতর্কতা:
• কোমল পানীয় একেবারেই খাবেন না। কোল্ড ড্রিংস মোটা হওয়ার আশঙ্কা ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়
• কখনো স্টার্ভেশন ডায়েট করবেন না। এই পদ্ধতিতে দ্রুত রোগা হওয়া গেলেও শরীর প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে নানা সমস্যা দেখা দেয়।
পর্যাপ্ত ঘুম
~~~~~~~~
ঘুম আমাদের জীবনেরই অংশ। সজাগ থাকার পর ঘুম আসবে এটাই নিয়ম। মাঝেমধ্যে ঘুমে ব্যাঘাত সবারই হয়। বিশেষ করে দুশ্চিন্তা বা মনোকষ্টের কারণে কয়েক দিন ঘুম না হওয়ার পর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমরা স্বাভাবিক ঘুমে ফিরে যাই। কিন্তু কখনো যদি ঘুম না হওয়ার ব্যাপারটি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তাহলে আমরা মুষড়ে পড়ি, ডাক্তারের কাছে দৌড়াই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘুম না হওয়ার কারণগুলো খুব সাধারণ এবং প্রতিকারযোগ্য।
ঘুমের রকমফের
রাতের বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন ধরনের ঘুম ঘুমিয়ে থাকি। সেগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধরন হলো দ্রুত চক্ষু সঞ্চালন ঘুম। এ ধরনের ঘুম এই আসে, এই যায়। আমাদের মোট ঘুমের এক-পঞ্চমাংশ এ ধরনের ঘুম। এই ঘুমের সময় আমাদের মস্তিস্ক খুব সচল থাকে, চোখ দুটি এপাশ-ওপাশ দ্রুত সঞ্চালিত হয় এবং আমরা স্বপ্ন দেখি।
ঘুমের বাকি চার-পঞ্চমাংশ দ্রুত চক্ষু সঞ্চালনবিহীন ঘুম। এই ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষক থাকে খুব নিথর। এ সময় বিভিন্ন হরমোন নিঃসৃত হয়ে তা রক্তে মেশে। সারাদিনের কাজে ক্ষয়প্রাপ্ত শরীরের বিভিন্ন অংশ সারিয়ে তোলে এসব হরমোন।
কতটুকু ঘুম দরকার
আমরা কতটুকু ঘুমাব তা মূলত নির্ভর করে আমাদের বয়স ও পরিশ্রমের মাত্রার ওপর। শিশুরা দিনে প্রায় ১৭ ঘণ্টা ঘুমায়। কিন্তু একটু বড় বাচ্চারা রাতে ৯-১০ ঘণ্টা ঘুমায়। রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যথেষ্ট। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের প্রয়োজন কিছুটা কমে যায়। তাছাড়া দিনের বেলায় ঘুমালে রাতে ঘুম আসবে না-এটাই স্বাভাবিক।
ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ঘুমের পরিমাণে বেশ তফাত দেখা যায়। কেউ কেউ রাতে মাত্র ৩ ঘণ্টা ঘুমিয়েই চলতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা পারে না। পরপর কয়েক দিন না ঘুমালে অধিকাংশ মানুষই সারাক্ষণ ঘুম ঘুম বোধ করে, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না।
ঘুম না হলে আপনি কষ্ট পাবেন-এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝেমধ্যে দু-এক রাত ঘুম না এলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মাঝে দু-এক রাত ঘুম না হলে তা আমাদের শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের খুব বড় ক্ষতি করে না। তবে যে কোনো কারণে লাগাতার বেশ কিছুদিন ঘুম না হলে সারাক্ষণ ঘুম ঘুম লাগে এবং কোনো কিছুতে মনোযোগ দেয়া যায় না, সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দেয় আর বিষণ্নবোধ হয়। এ সময় গাড়ি চালানো বা ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করা খুব বড় বিপদের কারণ হতে পারে। গাড়ি চালানোর সময় ক্ষণিকের জন্য ড্রাইভারের ঘুমিয়ে পড়াটা অনেক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।
অনিদ্রা
যাদের ঘুম সমস্যা আছে, তারা প্রায়ই অভিযোগ করে, তাদের যথেষ্ট ঘুম হচ্ছে না বা ঘুমিয়ে তৃপ্তি হচ্ছে না, যদিও সময় হিসাব করলে দেখা যাবে, ঘণ্টার হিসাবে তারা বেশ অনেকক্ষণ ঘুমাচ্ছেন। তবুও এই অভিযোগের কারণ, ঘুম ভেঙে ভেঙে যাওয়া। ঘুমের মধ্যে জেগে যাওয়ার অল্প সময়টুকু অনেক লম্বা মনে হয়। প্রতিদিন অনেক সাধারণ বিষয় আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে যেমন-হয়তো শোয়ার ঘরটায় আওয়াজ বেশি, ঘরের তাপমাত্রা বেশি অথবা কম, বিছানা আরামদায়ক নয়, ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট রুটিন মানা হচ্ছে না বা যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করা হচ্ছে না। রাতে খুব বেশি খেলে ঘুম আসতে চায় না আবার পেটে বেশি ক্ষুধা থাকলে ঘুম ভেঙে যায়। সিগারেট, অ্যালকোহল এবং ক্যাফিনযুক্ত খাবার যেমন-চা, কফি ইত্যাদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। শরীরের কোথাও ব্যথা বা গায়ে জ্বর থাকলেও ঘুম ঠিকমতো হয় না। তবে যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা চলতেই থাকে তাহলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। কারণ তা অধিকাংশ সময়ই মারাত্মক কিছুর ইঙ্গিত দেয়-হতে পারে তা ব্যক্তিগত অথবা কর্মক্ষেত্রের কোনো ইমোশনাল সমস্যা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা বিষণ্নতা।
ওষুধে কাজ হয়
অনেকেই ঘুমের সমস্যার জন্য ঘুমের বড়ি খান। দীর্ঘদিন একটানা ঘুমের বড়ি খাওয়া উচিত নয়। এতে আপনি অবসন্নবোধ করবেন, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে বড়ির পরিমাণ না বাড়ালে আগের মতো ভালো ঘুম হবে না। ফলে আপনি বড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। তাই ঘুমের বড়ি যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। ঘুমের বড়ির মতো অ্যালকোহলও ঘুমের সমস্যা করে। এই দুটোকেও পরিহার করুন। ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য যেমন-হেরোইন, কোকেইন, অ্যামফিটামিন ইত্যাদিও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমের সমস্যা সমাধানের জন্য অনিদ্রার মূল কারণের চিকিৎসা করাতে হবে।
ঘুমের সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু সহজ টিপস দেয়া হলো। ঘুমের সাধারণ সমস্যা সমাধানে এগুলো খুবই কার্যকর।
* শোয়ার ঘর যথেষ্ট আরামদায়ক কি-না নিশ্চিত হোন। ঘরে যেন খুব বেশি আওয়াজ, গরম বা ঠাণ্ডা না থাকে।
* বিছানা আরামদায়ক কি-না নিশ্চিত হোন। বিছানা বেশি শক্ত হলে কোমর ও কাঁধে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, বেশি নরম হলে শরীর খুব বেশি দেবে যায়। ফলে ভালো ঘুম হয় না।
* প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করুন। অনেকেই নিয়মিত ব্যায়াম না করে হঠাৎ ব্যায়াম করেন। এটা ঠিক নয়।
* চা-কফি-অ্যালকোহল পান কমিয়ে দিন। সম্ভব হলে একেবারে বন্ধ করে দিন। বিশেষ করে বিকেলের পর চা-কফি খাবেন না। এ সময় দুগ্ধজাত পানীয় খেতে পারেন।
* বেশি রাত করে খাবেন না। যতটা সম্ভব প্রথম রাতের দিকেই খাবার সেরে নিন। রাতে অতিরিক্ত পরিমাণ খাবেন না।
* রাতে ঘুম ভালো না হলে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য পরদিন দিনে ঘুমাতে ইচ্ছা করতে পারে। এটা করবেন না। তাহলে আবার রাতে ঘুমের সমস্যা হবে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান।
* ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু সময় রিলাক্স মুডে থাকুন। হাল্কা বই পড়ুন, গান শুনুন।
* কোনো বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে ঘুম আসতে চায় না। এক্ষেত্রে একটা কাগজে আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়টি পরিষকারভাবে লিখে ফেলুন। বিষয়টি সম্পর্কে আপনি কী করতে চাচ্ছেন এবং কখন থেকে তা করবেন পষ্ট করে লিখুন। বিষয়টি সমাধানযোগ্য না হলে এর পরিণতি কী কী তা লিখুন। কোন পরিণতি আপনার জন্য ‘মন্দের ভালো’ হবে তা লিখুন এবং সেই বিষয়ে কী করবেন, লিখে ফেলুন। এতে দুশ্চিন্তা কমবে, ঘুম হবে।
*ঘুম না এলে ‘কেন ঘুম হচ্ছে না’ শুয়ে শুয়ে ভাববেন না। বরং উঠে পড়ুন, যা করতে ভালো লাগে করুন-বই পড়ুন, টিভি দেখুন, হালকা গান শুনুন। কিছুক্ষণ পর ঘুম আসার মতো যথেষ্ট ক্লান্তি বোধ করলে বিছানায় যান।
ওপরের সব টিপস চেষ্টা করার পরেও যদি ঘুম না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিনি অনিদ্রার শারীরিক ও মানসিক কারণ নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা দেবেন।
আজকের জ্ঞাণ বিতরণে ঘুম একটা সহজ হলেও জটিল বিষয় । অন্তত যারা অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন ঘুম না আসায় , তারা প্রাথমিকে সুস্থ্য সবল মনে হলেও ধিরে ধিরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন ।
সামাজিক , পারিবারিক বিভিন্ন চিন্তা ভাবনাই এর মূল কারন , এঁকে প্রতিহিত করতে না পারলে আয়ু নির্ঘাত ক্ষয়ে যাবে ।
পরিশেষে , সকলের সূ- স্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনায় জ্ঞান বিতরণ শেষ করছি ।
সূত্র - ডাকাবুকো ডাক্তার
উত্তরবঙ্গ ।
ঘুমের ব্যাপারে একটি কথা বলা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো , সেটি হল অতিরিক্ত মাত্রায় নিকোটিন সেবনের ফলে ঘুমের পরিমান অধিকতর ভাবে হ্রাস পায় , এবং এটি কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য --
উত্তরমুছুনঠিক বলেছেন অনেকটাই । আসলে কোন ধরনের নেশা আসক্তি 'ই মানব জীবনে ক্ষতিকর , এর পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেওয়া হাস্যকর ।
মুছুনযদিও আমরা বুঝি জীবন অনেক কঠিন । নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমরা প্রবাহিত । মানুষ সাময়িক ভাবেই বিভিন্ন উদ্দেশ্য থেকে একটু রিলিফের জন্য আবার মন সংযোগ করার জন্য বিভিন্ন নেশায় আসক্তি হন ।
হয়তো সামাজিক ব্যাধি আক্রান্ত , নয়তো পারিবারিক আবার হয়তো কর্মে চাপ ।
সব মিলিয়ে এই নিকোটিন শরীরের ক্ষতি ছাড়া উপকারে আসে না জন্যও আমাদের রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েও ( তামাকে ক্যানসার ) উল্লেখিত মারণ কোম্পানি গুলি বন্ধ করতে পারছেন না ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে - খুব সাবলীল ,সহজ ও অত গুরুত্ব পূর্ণ তথ্যর জন্য ।
দারুন বিষয়ের উপস্থাপনা করেছেন । বিভিন্ন তথ্য সমৃদ্ধ লেখা প্রকাশ পেলে অনেকেই আমরা উপকৃত হতে থাকবো ।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো বিস্তারিত অবগত হয়েছেন জেনে । ঠিক এইভাবেই প্রকৃত তথ্য সমৃদ্ধ উপযোগী বিভিন্ন বিষয় আগামিতেও তুলে ধরব। ধন্যবাদ আপনাকে । সাথে থাকুন শব্দের মিছিলে ।
মুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন