ইন্দ্রাণী সরকার








মানসী - ১




চাঁদনী নিঝুম রাতে
জোছনার সিঁড়িপথে
মানসী নেমে আসে
আমায় ভরিয়ে দিতে |
স্বচ্ছ কোমল শরীর
সুগন্ধে ভরা এলোচুল
আয় মানসী আজ তোর
চুল বেঁধে দিই ----
তার চোখ দুটি বোজা
পদ্ম পাপড়ি ঠোঁট কাঁপে
মৃদু , থরথর, লালিমা
মাধুরী আঁকা প্রস্ফুটিত |
আঁচল বিছিয়ে দেয় সে
সবুজ স্নিগ্ধ মাঠের বুকে |
একরাশ ফুল আমি ঢেলে
দিই তার আঁচলে .....
মানসী কুড়িয়ে নেয়
মালা গাঁথে বিনিসুতোয়
আমার হাতে তুলে দেয়
হাতে হাতে ছোঁয়া .....
মানসী তুমি যেও না |
ও হাসে, মাথায় নরম
হাত বুলিয়ে দেয় |
আমি ঘুমিয়ে পড়ি |
আহা, কি মধুর সে ঘুম !
স্বপ্ন চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে |
আমি যেন শুয়ে আছি
মানসীর কোলের 'পরে |
ঘুম ভাঙে, চেয়ে দেখি
সে নেই, চলে গেছে,
খালি রেখে গেছে
বিনি সুতোর মালা |





মানসী - ২




ঘুম ভাঙা অনেক ভোরে
চেয়ে দেখি কেমন করে
মানসী তাকিয়ে আছে
আমারি মুখের 'পরে |
আয় মানসী আজ তোকে
কাজল পরিয়ে দিই---
মানসী লাজুক হাসে
কি জানি কি যেন ভাবে !
পিঠের ওপর একরাশ চুল
ভুরুর ওপর লুটিয়ে
গুচ্ছ গুচ্ছ চুলের থোকা |
চোখের তারায় স্বপ্ন ভাসে |

আমি কাজল এঁকে দিই |
কাজল কালো চোখে
মানসী আমায় দেখে |
আমি হতবাক চেয়ে রই |
সারা শরীরে জড়িয়ে আছে
বনহরিনীর অমোঘ মায়া,
এলোচুলে কাজল পরে
মানসী আমায় দিল ভরে |
মানসী তুমি যেও না ছেড়ে
আমি যে বড় একা |
সে যেন মুচকি হাসে
যেমন হাসে ছন্দটি বাঁকা |
শরীর থেকে জুঁইয়ের সুবাস
আঁচল খসে এলিয়ে পরে,
শুভ্র দুটি হাঁসের গ্রীবা
চোখের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে |
আমি চোখ বুজে নি
উথাল পাথাল পরান আমার
বুক ঢিপঢিপ হারিয়ে গেলাম
সাগরের অথৈ জলে |



মানসী -





সূর্য ডোবা মিষ্টি বিকেল
কমলারঙা আকাশ
মানসী আমার সামনে আসে
অঙ্গে মেখে সুবাস |
আয় মানসী, তোকে আজ
টিপ পরিয়ে দিই ....
সে হাসে, পদ্ম পলাশ
ঠোঁটে মুক্ত রাশি রাশি |
কপালে দিই কুমকুম টিপ
লাল লাল লাল লালিমা,
ঝুমকোলতায় কাঁপন লাগে
মানসী মোর প্রতিমা |
গোলাপী ঠোঁটে চিলতে হাসি
মনকে বলে ভালোবাসি,
কেমন পেলব মোমের পুতুল
মানসী যে পূর্ণমাসী |
কলসি ভরে জলকে চলে
ছন্দে মৃদু অঙ্গ দোলে,
চুলের রাশি ঢেউ খেলে যায়
পরান আমার যায় যে গলে |
ময়ুরকন্ঠী শাড়ির পেখম
দুলছে কানের দুল
কেমনে ও যায় হেঁটে যায়
ভেবে হলাম আকুল |
শিমুল রাঙা পলাশ রাঙা
রাঙা ঐ প্রিয়ার ঠোঁট,
মৌ বনেতে দোল দিয়ে যায়
মৌমাছিরা বাঁধে জোট |
শুধুই ভরো আমার হিয়া
মধু সম সিক্ত পিয়া
মানসী তুমি থাকবে বলো
দুজনায় বাইবো খেয়া ||




মানসী  - ৪





নিদাঘ ঘন তপ্ত দুপুর
নিকষ কালো ছায়া,
মানসী মোর সামনে আসে
চোখে করুন মায়া |
আয় মানসী, তোকে আজ
ঠোঁট রাঙিয়ে দিই,
মানসী চোখ বুজে নেয়
গাল দুটি হয় লাল |
লাল তুলিতে ঠোঁট এঁকে দিই
ভেজা দুটি পাপড়ি,
মৃদু কাঁপে আমার ছোঁয়ায়
মন গেল মোর চুরি |
সলজ্জ মধুর চিলতে হাসি
আকুল করে ডাকে,
পাগল আমি ঠোঁট ছুঁয়ে দিই
মৌ মহুয়ার শাখে |
আকাশ বাতাস ছন্নছাড়া
ছন্নছাড়া মন,
বিহঙ্গ হয়ে উড়ে যেতে চাই
প্রতি অনুক্ষণ |
পায়ে বাজে মল রুনু ঝুনু ঝুনু
হাতে কাঁকনের রাশি,
প্রিয় মুখখানি হাতে তুলে নিই
মুখে শতদল হাসি |
মেহেদী রাঙানো হাতের তালু
ফুলেল সুবাসী গা,
মেঘের বরণ চুলের রাশি
আলতা রাঙানো পা |
মানসী, তুমি শুধুই আমার
আবেগী পরশ দাও,
মনের সোহাগ উজাড় করে
আমায় টেনে নাও |






বৃষ্টি না মেঘ ?



জোনাক জ্বলা মধুর এই চাঁদনী রাত |
রূপোলি চাঁদের সাথে মেঘেদের লুকোচুরি খেলা |
সুদূর নীহারিকায় তারারা চায় মিটিমিটি |
রূপার কিংখাবে মোড়া রাতটাকে খুলতেই
আকাশের তারাগুলো ইলশেগুড়ি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ল|
আমি সেই বৃষ্টির অঝোর ধারায় ভিজে গেলাম |
ক্রমে রাত গড়িয়ে সকাল হলো |
পুবের আকাশে সুর্য্যের রক্তিম আভা ভেসে উঠলো |
সোনালী আলোয় ভরে গেল চারিদিক |
সোনার কিংখাবে মোড়া সকালটাকে খুলতেই
মনের সাদা পায়রাগুলো মেঘ হয়ে আকাশে উড়ে গেল |
আমি রাজহংসী হয়ে তাদের দলে মিশে গেলাম |
তুমি কী হতে চাও?
বৃষ্টি না মেঘ ?



তোমার ভাবনা



আজও যখন হাসনুহানা ফোটে
মনে হয় তোমার চেনা গন্ধ
যেন নাকে এসে লাগছে |
যখন তুমি ক্লান্ত হয়ে আমার কোলে
মাথা রেখে ঘুমিয়ে যেতে
সেই স্মৃতি কেন জাগছে !
হঠাত যখন বৃষ্টি ঝরে টাপুর টুপুর
সোঁদা গন্ধ নাকে আসে
আমার মন তোমায় ভাবছে |
পথে যেতে যেতে হঠাৎ ফিরে চাই
তুমি কী ডাকলে আমায় ?
ফিরে দেখি শুন্যতা হাসছে |
তবে তুমি কী কখনো ছিলে না !
কে তবে চেয়ে থাকতো ?
তোমার দৃষ্টি অপলকে কেন চাইছে ?
আজ শুধু চারিদিকে ঘাসফুল ছড়ানো
আঙ্গিনায় বকুল ঝরে টুপটাপ
তোমার ভাবনায় মন আমার মাতছে ||





। ইউ এস এ ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. অপুর্ব ! প্রথমে বলি মানসী র কথা, চার পর্য্যায় লেখা এই কবিতা মন ভরে দিয়েছে । খুব সুন্দর ভাবে তৈরী হয়েছে সেই কল্পনার মানসী। একটি সম্পূর্ন মানসী কে আস্থে আস্থে রূপ পেয়েছে এই চার পর্য্যায়এ, কাছে আসার,চোখে দেখার, ভালবাসার তাকে আরো সুন্দর করার। কাল্পানা বাস্তবে রুপ নিয়েছে। নিশ্চয় মনে একটি মিষ্টি মধুর ছাপ ছেডে গেছে ।
    বৃষ্টি ও মেঘ যেন এসে মনটাকে ভিজিয়ে দিয়ে গেল। শেষে হাস্নু-হানা, বকুল মিস্টি গন্ধের ভাবনায় চোখ বুঝে নিলাম ।
    আশা রাখি আরও অনেক কিছু পাব লেখনীতে ।
    শুভেচ্ছা জানাই ।
    সুভাষ

    উত্তরমুছুন
  2. ইন্দ্রানীর একগুচ্ছ কবিতা পড়ে ভালো লাগলো খুব।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. বাঃ ! খুব ভাল লাগল। প্রথমে বলি মনসী সমন্ধ্যে , কবিতাটি চার পর্যয়ে যে ছবি এঁকেছে মনে, তাই বিশেষ করে তাকে সামনে এনেছে নামিয়ে সুন্দর করে । একটি সুন্দর মূর্তি তৈরি করে,তাকে মনের মত করে সাজিয়ে ,তাকে ভালবাসার আসনে বসিয়ে নিজের কাছে রাখা সত্যই মন কেডে নেয় । সেই কল্পনা খুব সুন্দর করে ছন্দে তুলে ধরা হয়েছে। বৃষ্টি না মেঘের সৌন্দয়্য মনে ঘন ছায়া ফেলে মনের মধ্য,তোমার ভাবনা মিষ্টি হাসনুহানা ও বকুলের গন্ধে সুবাসিত হয়ে আছে।
      হাঁ আরও চাই এই লেখনী থেকে। আরও সুন্দর হয়ে উঠুক কলমের আচড গুলো , এই আশা রাখি ।
      অপেক্ষায় রইলাম।
      সুভাষ বসু ।

      মুছুন
  3. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  4. বাঃ ! খুব ভাল লাগল। প্রথমে বলি মনসী সমন্ধ্যে , কবিতাটি চার পর্যয়ে যে ছবি এঁকেছে মনে, তাই বিশেষ করে তাকে সামনে এনেছে নামিয়ে সুন্দর করে । একটি সুন্দর মূর্তি তৈরি করে,তাকে মনের মত করে সাজিয়ে ,তাকে ভালবাসার আসনে বসিয়ে নিজের কাছে রাখা সত্যই মন কেডে নেয় । সেই কল্পনা খুব সুন্দর করে ছন্দে তুলে ধরা হয়েছে। বৃষ্টি না মেঘের সৌন্দয়্য মনে ঘন ছায়া ফেলে মনের মধ্য,তোমার ভাবনা মিষ্টি হাসনুহানা ও বকুলের গন্ধে সুবাসিত হয়ে আছে।
    হাঁ আরও চাই এই লেখনী থেকে। আরও সুন্দর হয়ে উঠুক কলমের আচড গুলো , এই আশা রাখি ।
    অপেক্ষায় রইলাম।
    সুভাষ বসু ।

    উত্তরমুছুন

সুচিন্তিত মতামত দিন