এ বি এম সোহেল রশিদ







ভেঙ্গে ফেলো এইসব দিন রাত্রি!

ভাঙ্গতে চাও ভাঙ্গ, ভেঙ্গে ফেলো এইসব দিন রাত্রি
টিকে থাকার জন্য বাঁচা নয় কুসংস্কার মুক্ত হয়ে বাঁচো
রাতের অকৃপন শিশির, জ্যোৎস্না বৃষ্টি আর কামিনীর সুবাস
জাগিয়ে তুলে কায়া, উসকে দেয় ভিতরের শীতল আগুন!
সবই তুচ্ছ!কামনা-বাসনা সে তো প্রাণীকুলের সহজাত প্রবৃত্তি
আর নয় চিৎকার! মানুষ হতে চাই মর্যাদাপূর্ণ অধিকার!
কাব্যরস সিঞ্চনে শব্দে শব্দে সজ্জিত করা যায় স্তুতি বাক্য
গ্রীষ্মের তাপাবাহ কে ভাবা যায় উষ্ণতা কাতর রণরঙ্গিণী
সম্ভোগের সুখশৈলীকে ভাবা যায় এলামেলো কালবৈশাখী ঝড়!
মেঘের শাড়িতে বর্ষা হতে পারে অপেক্ষমাণ লাস্যময়ী বালিকা
শরত ষোড়শীর অভ্রনীলে ভেসে বেড়ায় একটুকরো দুঃখ মেঘ!
হেমন্তের নবান্নের আনন্দায়োজনে মৃদু হাসে হেম নন্দনী মুরতি
তাপসীর সম্মতিতে ঝরা পাতায় উড্ডিণ সব ক্লেশ-কুসংস্কার
ভ্রমাণ্ডের সব রঙে বিকশিত হয় ফুল! ছড়ায় কামনাবার্তা
গুঞ্জরিত মধুকরের প্রত্যাশার প্রলেপ দেয় বসন্তের বাসন্তিকা
সবই জীবনের জন্য প্রবাহিত নদীর জন্য সুনীল আকাশের জন্য
সবই আগামীর জন্য! প্রজন্মান্তরে পাপ মোচনের জন্য
ভাঙ্গতে চাও ভাঙ্গ, ভেঙ্গে ফেলো এইসব দিন রাত্রি!



শব্দের মিছিল

কল্পদ্রুমের নির্ঘুম পাতায় স্বপ্নমাখা সোনালী আলোর ঝিলিক 
বিকেলে নুয়ে পড়া সূর্যের রক্তাভ আলো বর্ষণে হই নতজানু 
মার্জনা চেয়ে নিম্নমুখী অনিমিখ চোখে বিদ্রূপের ধূলিময় হাসি!
নির্ধারিত দৃষ্টির সীমানা অতিক্রম করে ছুটে আসে নিষিদ্ধ আলো 
বর্ণমালার নৃত্যে সংক্রমিত ছন্দময় সুর!কাটে বিহঙ্গের নিঃসঙ্গতা 
নতুন নতুন শব্দমালায় নির্মিত হয় মুক্ত কবিতার শরীর। 
কবিতার উপর কবিতা দিয়ে বিনির্মাণ করি কাব্যপ্রাচীর
অর্জিত সব কষ্ট, সব দু:খ, সব বিরহ পুঞ্জিভূত আবেগে বন্দী 
পাঠকের পঠন বিমুখতা ভাবায় না, ভাবায় শব্দের মিছিল! 
জানি পৌঁছাবেনা কাঙ্ক্ষিতার কর্ণগোচরে শব্দমালার স্লোগান! 
হঠাৎ যদি ছন্দ পতন ঘটে! উঠে ঝড়, নামে অঝোরে বৃষ্টি 
হঠাৎ যদি শুরু হয় প্লাবন, বিমূঢ় দৃষ্টিতে আঘাত করে উর্মি 
কবিতা তখন অবলম্বন! দারুণ বিস্ময়! অসমাপ্ত জীবনের আশ্রয়
অপেক্ষায় অপেক্ষায় ধৈর্যশীল অবহেলিত কবিতা! সার্থক কবি! 
জীবনস্রোত থেকে কুড়িয়ে নেয়া নুড়ি দেয়ে অলংকৃত বাক্য 
কৈশোর আর যৌবনের প্রেম আর অবহেলায় সঞ্চিত অভিজ্ঞতা 
অনুচ্চারিত কৃতদাসী আবেগ! উপস্থাপিত হোক কবিতার বিজ্ঞাপন!




নূপুর

(আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কবিতা)

মা, মনে পড়ে? হারিয়ে যাবার ভয়ে নূপুর দিয়েছিলে পায়ে
টং টাং শব্দে জানান দিয়ে হাঁটতাম সারা উঠোন জুড়ে
হারিয়ে যাইনি! ভুলে যাইনি সেই শব্দ! খুলিনি নূপুর!
কোরাসে অধিকারের স্লোগান তুলে এখনও বেজেই চলছে!
মনে পড়ে মা, দেশ মাকে রক্ষার করিয়েছিলে রক্ত শপথ!
বলে ছিলে, “শতছিদ্র কাপড়ের আড়ালে যে মায়ের সম্ভ্রম আক্রান্ত
তার সন্তানের জীবনে যেন কোনদিন সূর্যোদয় না ঘটে।”
জানো মা, কয়েকটা শকুন রক্তাক্ত করতে চায় মায়ের আঁচল
অস্তিত্বকে করতে চায় শৃঙ্খলিত! বিজয়ের পতাকা ভূলুণ্ঠিত!
মা তোমার সেই নূপুর বাজে প্রতিবাদের ঝংকার তুলে
সংকটে এখনও ছন্দে ছন্দে তারুণ্যের ঘুম ভাঙ্গায়
মায়ের কণ্ঠ ছাড়া উত্তাল হয়না জন সমুদ্র! জমে না স্লোগান!
সূর্যোদয় হয়েছে! জেগেছে কোটি সন্তান! তারুণ্যে আগুনরোদ!
ঝলসে যাবে সব! শকুনের ডানা, হিংস্র ঠোট, ধারালো নখ
আঁতাতের হাত, শপথ ভঙ্গকারীর অস্তিত্ব, পিশাচের আবাসস্থল
সোনালী রঙে ভেসে যাবে অবিচার! ঝলকে উঠবে ন্যায় দণ্ড!
মায়ের সম্মানের প্রতিটি ভাঁজে জমা রেখেছি জীবনের রঙ
মায়ের জন্য নদীর পাড়ে সবুজ শাড়ি, বোনের মুখে সূর্যের হাসি
সারথির বুকে শতভাগ বিশ্বাস আর কন্যার হাতে পতাকা দিয়ে
নিজেকে সাজাবো রঙধনুর বর্ণিল সাজে। তখনও নূপুরটা থাকবে!
প্রতিটি অনিয়মে প্রতিবাদের ঘণ্টা হয়ে বাজবে!টুং-টাং টুং-টাং!

ঢাকা ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.