প্রিয়দীপ










ফিরে এলাম ( ১ )


সে দিন এক পরম শুভানুধ্যায়ী 'র সাথে আলাপ।
অনেক দিন পর - অনেক সময় নিয়ে
রঙ বে রঙের নানান প্রলাপ ।

শিক্ষা জগতের উচ্ছৃঙ্খলতা , অপশাসনের চাপ পেড়িয়ে
গলদ ঘর্মে নেমে আসা ৪১/২ যান চক্র থেকে ,
ক্ষণিক বিলম্বে আঁকতে শিখতে যাওয়া , সমাজের বিচিত্র মুখ -
বাড়িতে ফিরে’ই গোগ্রাসে দুমুঠো ঠেসে ঠুসে ।

এরপরও আছে স্বজন হারানো অগুছানো সংসার
স্নেহ- ভালোবাসা আর দায়িত্ব বোধ ,
কতটুকু’ই বা বয়স বলো আমার
শখ আহ্লাদ যেন প্রতি পদে পদে অবরোধ ।

ভদ্রতা সৌজন্য’তা একা হাতে , একা একা পথে সুনন্যা
এক নাগাড়ে যেন ওর পেট - উগলে দেই সব ক্ষোভ,
ঘরে একাকী পূজনীয় পিতা ,আকস্মিক মায়ের চলে যাওয়া
যেন সেও স্তুপাকৃত পাথর- একাকী এবং নীরব ।

হ্যাঁ - সুনন্যা । মায়ের দেওয়া ওর আদরের নাম
হুম , বুঝি তারও একটি জীবন আছে – একান্তই নিজের ,
আকাঙ্ক্ষা আছে - অনুভব আছে – রঙিন স্বপ্ন আছে
আর - আছে সাতপাঁকে বাঁধা সুখ সাচ্ছন্দের ।

সুনন্যা চেয়ে আছে এক পানে , এক প্রানে মধুর তন্ময়তায়
গোধূলির ক্লান্ত সূর্য যেন হেলে পড়েছে দূর আকাশের মাদকতায় ,
মনে কি ওর প্রিয়তম’র কথা , কেন ঠোঁটে ঠোঁট চাপা দিয়ে লুকানো হাসি
রবির মায়াবী আলো ঠিকরে পড়েছে ওর আদ্র ঠোঁটে , নীরব নির্জনতায় ।

আচ্ছা সৌম্য একটা কথা বলব - বিষয়টা একান্তই ব্যাক্তিগত
মন চায় তবুও শুনি , অন্তত খারাপ ভাবলেও একবার শুনি -
এতে বিনয়ের কি আছে সুনন্যা , -হুম ! বলতে পারো অনায়াসে
-বেশ তবে বলো, তোমার জীবনে কখনো কি আসেনি প্রেমের সূর ধ্বনি ?


ঈষৎ লজ্জায় গোধূলি মিশে আসে ক্রমশঃ আঁধারে , আঁধারে ঘনীভূত আমার মুখ
অজানায় ভারাক্রান্ত আমার হৃদয় -আমার সকল চাওয়া - না পাওয়া ,
নাগরিক কোলাহলে ব্যাস্ত যানের ভিড়ে মিশে যায় সুনন্যা , পরবর্তী গন্তব্যে
ভেসে আসে ক্ষীণ কণ্ঠ ভালো থেকো সৌম্য , লড়াইয়ে নেমেছি তাই আজ ফিরে যাওয়া ।





ফিরে এলাম  ( শেষ পর্ব )


কৃষ্ণ চুড়ার পাতা গলিয়ে নুইয়ে পরা অভিমানী রোঁদ
দহনে নগরায়ন , আঁকা বাঁকা পথ মারিয়ে অভিমুখ দৃষ্টি ,
মধাহ্নে ঘুমে সাড়ি সাড়ি সবুজ সেনা , পিচের মোড়াম বেঁয়ে
খুঁজে পাওয়া কাঙ্ক্ষিত গৃহের কুষ্ঠি ।

উঠোনে লজ্জায় মাথা নোয়ানো ডালিয়া , সগৌরবে গাঁদা
বেদীতে লক লকে তুলসি - আল্পনায় লক্ষ্মীর পা ,
পায়ে পায়ে এগুনো সদ্য রাঙ্গানো বনেদি বাড়ি
বহনে পরিচয় - খোঁদায়ে ‘ স্নেহময়ী মা ‘ ।

ছুঁয়ে দেওয়া ঘণ্টা ধ্বনি - ধ্বনিতে চৌকাঠে - সুনন্যা
মুখে এক গাল হাসি ,আদ্র ঠোঁটে যা আজ বড়ই বাড়ন্ত ,
হলদে লাল আভারনে আঁচলে বেঁয়ে ওঠা যৌবনে
ম্লান চৈত্র দাবদহ , চোখের অস্থিরতা - যেন স্নিগ্ধ কোমল বসন্ত ।

ওহ ! গুলিয়ে যাচ্ছি । আচ্ছা , আমারও তো চোখ আছে
আছে আগুন টানা কিঞ্চিত ধোঁয়াটে ঠোঁট ,
সদ্য কালোয় উঁকি দেওয়া সাদায় বিক্ষিপ্ত দাড়ি
কৃষ্ণ বর্ণ কারে মেদ ঝরা সুঠামো অবয়ব ।

টুং টাং শব্দে সম্বিতে ফিরে আসে সুনন্যা
আপ্যায়নের বাহুতে ফিকে যাওয়া বাহারি মেহেন্দি ,
লকলকে আঙ্গুলে আগত ধোঁয়া ওঠা সুদৃশ্য কাপ
সব মিলিয়ে সুন্দর – মন মাতানো এক মাদকি সুগন্ধি ।

-সৌম্য-তুমি তো জানো , জীবনটা পাথর হয়ে যাচ্ছিল পাথর
বার্ধক্যে বাবা , একার হাতে সব - যেন রুগ্ন এই জীবন ,
ক্রমশ দুঃসহ হয়ে আসা জীবনের এই পথ , যেন একা এবং একা
মাঘে , বাবার প্রচেষ্টায় – আমারও ছিল বৈকি ,অভি’কেই সাত পাঁকে বরণ ।

পত্রে, আশায় ছিলাম তুমি আসবে সন্ধি ক্ষণে
এহেন ভরসায় বিশ্বাস ছিল মন প্রানে
অন্তত ক্ষণিকে সাক্ষী থাকতে , হুল্লোড় করতে
পাগলী এই বন্ধুর , মহার্ঘ সিঁদুর দানে ।

-ধোঁয়া ওঠা কাপে হটাৎ’ই ম্লান হয়ে আসে উষ্ণতা
অবলা চোখে মিলিয়ে যেতে চায় বুদ বুদে ধোঁয়া
চৈত্রীর হলদে দুপুর যেন , ঝরতে চায় শ্রাবণে
ভেসে যেতে চায় – বিসর্জনে বয়সন্ধির চাওয়া পাওয়া ।

-কি ভাবছো সৌম্য ? এই তো প্রথম এলে - ফেরার তাড়া ?
সম্পাদকের চাপ , নাকি ইন্টেরিয়র - প্রচ্ছদ ডিজাইন ,
তোমাকে বোঝা বড় দায় – সত্যি বড় দায়
কিছুই আর শেয়ার করো না ইদানীং ।

সেদিনের কথায় রেগে আছো আজও
শেষ বাস টি এলো বলেই অমন উঠে গেলাম ,
আচ্ছা , সত্যি’ই কি তোমার জীবনে প্রেম আসেনি
এই যে মিস্টার , প্রশ্ন’টা এবারও তোমায় দিলাম ।

-কি বলি সুনন্যা , তুমি তো অনেকটাই জানো
আমার জন্ম , লতা পাতার আতুর ঘর
এতিম খানার ক্ষুধার জ্বালা
এমন কি শৈশব থেকে কৈশোর ।

জানতে , পদবী বিহীনে বিতাড়িত শিক্ষাঙ্গন
ভ্রূণের কটাক্ষে - বিদ্রূপে ঘুনে ধরা সমাজ
নিজেকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে সৃষ্টির নেশায় ,
শুধু দুদণ্ড মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আজ ।

আর, প্রেম ! সেতো আছেই জীবনের প্রতি পদে পদে
নাই বা মেতে রইল বয়সন্ধি’র উঠোন ,
চিরজীবী হয়ে থাক আমার অনন্ত বাসনা
সলতের আগুন নিত্য যাহার বহন ।

আমার সহনশীলতা আমার ধৈর্য ... অবলা আবেগ
আঁধারের হরেক ব্যাথা জিজ্ঞাসা’টির শব্দে সাজিয়ে দিলাম,
সুনন্যা , ঠোঁট চাপিয়ে মুচকি হাসে , কষ্টের না সুখের
আমি জানতেও চাইনি , দুয়ারে প্রজ্জলিত হয়ে আমি ফিরে এলাম ।

উত্তরবঙ্গ ।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. আর, প্রেম ! সেতো আছেই জীবনের প্রতি পদে পদে
    নাই বা মেতে রইল বয়সন্ধি’র উঠোন ,
    চিরজীবী হয়ে থাক আমার অনন্ত বাসনা
    সলতের আগুন নিত্য যাহার বহন ।
    === কি যে অপূর্ব লিখেছেন কবি, প্রকাশ করার ভাষা নেই। এক কথায় - অসাধারণ। অনবদ্য।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব সুন্দর লিখেছেন ------- গল্পের আকারে জীবন এঁকেছেন ----- অপূর্ব

    উত্তরমুছুন

সুচিন্তিত মতামত দিন