
ছোট গল্প
সুকৃতি

সুকৃতি বটানিতে এম এস সি।ওর কলেজেই গেষ্ট লেকচারার।স্কুল সার্ভিসে নন্ বিএডের লাস্ট চান্সটা ওর সামনে এখন মস্তবড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক আর নানা কম্পিটেটিভ পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও ভীষণ ব্যস্ত।বাড়ীর বড় ছেলে নেই বলে বড় ছেলের দায়িত্বগুলোও ওর।মা বাবা আর ছোটবোনর কথা ভাবতে গিয়ে নিজের জন্যে ভাবনার সময়ই মেলেনা বেচারীর।তাড়াতাড়ি একটা রোজগারের বন্দোবস্তের নেশায় ওর মেয়েবেলাটা চুরি হতে দেখে কেন জানিনা বড় মায়ায় পড়ে গেলাম।এত তাড়াতাড়ি কেউ আপন হবে ভাবিনি কখনও।দূরে থাকলেও প্রতি মূহূর্তের চিন্তার আনেকটাই কেড়ে নিল যাকে একবারও চোখেই দেখিনি।জানি তোমরা অনেকেই একথা বিশ্বাস করতে পরছ না।
কি আর করতে পারতাম আমি।দূরে থেকেও ওকে পাশে থাকার আশ্বাস জোগাতে চেয়েছিলাম।দুদিনের এই সামান্য পরিচয়েই আমরা নিজেদের পরিবার আর জীবন যন্ত্রণার কাহিনী বিনিময় করেও বসেছি।অসম বয়সী আমি তবু বন্ধুত্বের স্বীকৃতি পেয়ে ওর উপরে দেখভালের খবরদারীও ফলিয়েছি।কখন বড় আপন হয়ে গেছে মেয়েটা আমার জানার সুযোগই হয়নি।
কদিন আগে ব্যাঙ্কের পরীক্ষার মক টেষ্ট ছিল ওর।স্যারের বাড়ী ফেরৎ খিদের জ্বালায় প্যাটিস্ খেয়ে অ্যাসিডিটি বাধিয়ে সাররাত নাকি যন্ত্রণায় ককিয়েছে।জানতামনা তাই সন্ধ্যে থেকে কোন খবর না পেয়ে একটা নির্ঘুম রাতের কষ্ট ভোগ করলাম।পরের দিন একা একাই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল তাই ফেরার খবর না পাওয়া তক শান্তি পাইনি।বাড়ী ফিরে ক্লান্তিতেই হয়তো মুঠোফোনের সুইচ অফ্ করেছে। কিন্তু চিন্তায় আর একটা নির্ঘুম রাত আমার উপহার।
পরদিন সকালেই মেসেজের পর মেসেজের জবাব না পেয়ে কল্ করতেই কেটে দিল।মাথায় আমার টর্নেডো ঘুরপাক দিচ্ছে।জ্ঞানগম্য হারিয়ে ওর বাবার সাথে কথায় জানলাম বোনের উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্ট ভাল হয়নি তাই বাড়ীর সবার মনে অশান্তি।একবুক ব্যথায় আমি মেসেজে বোনের পাশের খবরের জন্য খাওয়ানোর মজা করে মন হাল্কা করার চেষ্টা করলাম।কোন জবাব এল না।
তারপর দশটা নিরুত্তর মেসেজে রাগ অভিমান হয়তো বেশীই জানিয়ে ফেলেছি।আমাকে পাগল বলে তিরস্কার জানিয়ে মুখে যা আসে মেসেজে বোঝাতে চাইল আমার বন্ধন এরমধ্যেই নাকি অসহ্য আর ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে ওর কাছে ।ও চায়না আমি ওর জন্য ভাবি।কোন বন্ধন, কারও কেয়ার করাতে ওর নাকি দমবন্ধ হয়ে আসে। পালাতে ইচ্ছে করে ওর।ওর এই অবুঝপনার মানে আমি বুঝিনি এখনও।
বোঝানোর চেষ্টাতে ও আরও অপমানিত বোধ করলো।আমি ছাড়া আর সবার সাথেই ওকে স্বচ্ছন্দ দেখে খুব কষ্ট হল আমার।একরাশ কান্নাতে ছটফট করছি যখন তখন আবার ওর ভুলও স্বীকার করে মেসেজ দিল।আমি আবার রাতভর ঘুমোলাম সব ভুলে।
পরদিন আবার শুরু হল পুরানো অধ্যায়।বড় কষ্টে আর অভিমানে ওকে সহজ করার চেষ্টায় আবার ভুল বুঝলো আমাকে।আচ্ছা ওকি কোন কারনে আমাকে –আমার সত্তাকে ভয় পেল। এরপর যোগাযোগের পথ সব রুদ্ধ করে আমাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ওকি পালিয়ে বাঁচল। কে বাঁচল কে জানে- ও না আমি।
আজ খুব হাল্কা লাগছে আমার।
কলকাতা ।
সুচিন্তিত মতামত দিন