ভীমরুল অয়ালা


      সৌজন্য প্রথম আলো 







ও বউ, বিয়ে কারে কয় ?



বিয়ের আগে প্রেমিকারা জন্মদিন, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, হ্যাপি নিউ ইয়ারসহ যত আজাইড়া দিবস আছে—সব দিবসেই প্রেমিককে করে শোষণ। বিয়ের পর বউ হয়ে শোষণের সঙ্গে যোগ করে ভাষণ। রাজনীতিবিদরা যেমন মাইক পেলেই বেহুদা ভাষণ শুরু করে দেয়, বউজাতিও স্বামীকে সামনে পেলেই ভাষণের নামে শুরু করে দেয় ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান।
না জানি লেট করে ফেরার জন্য আজ কপালে কী আছে। দরজায় চাবি ঢুকিয়ে বেশ কয়েকবার ঘোরানোর পরও খুলল না। ভেতর থেকে ছিটকানি দেয়া। সাহস করে ডোরবেল চাপ দিতে না দিতেই দরজা খুলে গেল। টিভির রিমোট হাতে বউ দাঁড়িয়ে।
—তোমার সামনে একটা মেয়ে বিপদে পড়লে কী করবে?
নিশ্চিত ভয়ানক কিছু হয়েছে। না হয় দেরিতে বাসায় ফেরার কৈফিয়ত না চেয়ে এমন প্রশ্ন করার স্বভাব বউজাতির না। দায়িত্বহীন (?) হিসেবে সবসময় খোঁচা দেয়া বউয়ের কাছে নিজেকে দায়িত্ববান প্রমাণ করতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললাম, মেয়েটিকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
—তারপর কী করবে?
—বাসায় পৌঁছে দেব।
—এবং আসার সময় মেয়েটির মোবাইল নাম্বার নিয়ে আসবে। লুকিয়ে লুকিয়ে চলবে বাকবাকুম। সহজ-সরল মেয়েটাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলবে। আমাকে অফিস ট্যুরের বাহানা দিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ঘুরতে যাবে। পৃথিবীর সব পুরুষের একই স্বভাব। মেয়ে হলেই কাত!
—কী হয়েছে বল তো?
—সিরিয়ালে দেখেছি।
—কী দেখেছ?
—সুন্দরী একটি মেয়েকে রাস্তায় সন্ত্রাসীরা অ্যাটাক করে। এরপর নায়ক এসে উদ্ধার করে বাসায় দিয়ে আসে। মোবাইল নাম্বার বিনিময় হয়। এক সপ্তাহ না যেতেই প্রেম। বউকে ফাঁকি দিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে...।
—হয়েছে, আর বলতে হবে না। সারাদিন বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল না গিললে কি হয় না?
—কী বললে? সারাদিন বসে সিরিয়াল গিলি? বসে থাকলে কাজ করে কে? বাসায় ফিরে যে গরম গরম ভাত, কয়েক পদের রান্না গিল, এগুলো কে করে শুনি? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দাসীর মতো খেটে খেটে আমার দুধে-আলতা গায়ের রঙের কী হাল হয়েছে, একবারও কি তাকিয়ে দেখেছ? দেখবাই কেন? পুরান হয়ে গেছি যে!
অভিজ্ঞতা বলে, নীরব থাকাই শ্রেয়। তাই কিছু না বলে কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে ফ্রিজ থেকে তরকারি বের করে গরম করে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। প্যানপ্যান থেকে বাঁচতে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, টেরই পেলাম না।
—অ্যাই জান, জানরে, উঠবে না? ১০টা বাজে তো!
ছুটির দিনে এমন আদুরে সুরে ঘুম ভাঙানোর মধুর আহ্বান। আহা! মনে রোমান্টিকতার ঢেউ আছড়ে পড়ল। চোখ না খুলেই বউয়ের হাত ধরে বললাম, কী হয়েছ সুইটি?
—কতদিন পর আদর করে ‘সুইটি’ ডাকলে! তোমার বউটা অনেক পচা হয়ে গেছে তাই না?
—মোটেই না। আমার বউটা অনেক অনেক লক্ষ্মী। পৃথিবীর সেরা বউ।
—হুঁ হুঁ, এবার লক্ষ্মী পিচ্চিদের মতো চোখ খোলো।
ভাবলাম বউ বুঝি বেশ সাজুগুজু করে আছে। ব্যাপক আশা নিয়ে চোখ খুলে দেখি বউয়ের হাতে মাসিক ফ্যাশন ম্যাগাজিন! ম্যাগাজিনের পাতা উল্টিয়ে একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল, এই শাড়িটা পরলে তোমার ‘সুইটি’কে অনেক সুইট দেখাবে, তাই না গো??
হায়রে কপাল! কত কী না ভেবেছি আদুরে সুর শুনে! আসল রহস্য শাড়ি দেখে মেজাজটাই গেল বিলা হয়ে।
—দাম কেমন?
—বেশি না। আগে ছিল ১৫ হাজার টাকা।
—অ্যাঁ! বল কী!
—আমাকে কী ভাবো বল তো! ১৫ হাজার টাকা হলে কী কিনতে চাইতাম?
—তাহলে?
—আরে বুদ্ধু, বাণিজ্যমেলায় এটা ৪০% ডিসকাউন্ট দিয়েছে। ১০ হাজার টাকাতেই কেনা যাবে।
রোমান্টিকতা হাইপ্রেসারে গিয়ে ঠেকল। শালীর বিয়েতে খরচের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই আবার ১০ হাজার টাকার শাড়ি!
—তোমার তো অনেক শাড়ি আছে। হাজার তিনেক টাকার মধ্যে একটা কিনলে হয় না?
—হাজার তিনেক! যত অভাব শুধু আমার বেলায়। তোমার বোন চাইলে তো মানিব্যাগসহ দিয়ে দাও।
—বোনকে কখনও ৫ হাজার টাকা দামের শাড়ি কিনে দিতে দেখেছ?
—লুকিয়ে লুকিয়ে দিলে দেখব কী করে? ভাইকে কম্পিউটার, বোনের জামাইকে যে মোবাইল কিনে দাও, আমি কি বুঝি না?
—বাজে বকবা না।
—সত্য বললেই, বাজে বকবা না! তোমাকে বিয়ে করে কী পেয়েছি? সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে কাজ করি, সে সময়টা মানুষের বাসায় ছুটা বুয়াগিরি করলেও মাসে এরকম দুইটা শাড়ি কিনতে পারতাম।
ঘ্যানঘ্যানের সঙ্গে মুখে আঁচল গুঁজে মেয়েলি কান্না শুরু করে দিতেই মানিব্যাগ বের করে ১২ হাজার টাকা দিলাম। নে বাবা, যা আছে সবই দিয়ে দিলাম। আরও লাগলে দরকার হলে ধার করে দেব।
—লাগবে না তোমার টাকা। আরেকটা বিয়ে করার জন্য টাকা জমাও।
—আমাকে কি পাগলা কুত্তা কামড়িয়েছে?
—বুঝি, সবই বুঝি। টাকা থাকলে এতদিনে সতীন হাজির করতা।
‘এজন্যই বুঝি টাকা জমাতে দাও না’—বলতে গিয়েও বলা হলো না। প্রেসার আরও হাই হবে শুধু শুধু। বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসতেই নাস্তা দিয়ে উপরতলার শ্রেয়া ভাবীকে নিয়ে চলে গেল বাণিজ্যমেলায়। একটু পরই শ্রেয়া ভাবীর বর সিয়াম হাজির। চেহারায় মানিব্যাগ খালি হওয়ার শোক!
—বিয়ে কারে কয়?
—ভাবীরে জিজ্ঞাসা করেননি?
—ভয় করে। যদি খুন্তি নিয়ে ধাওয়া করে?
—এখন তো সামনে নেই। এসএমএস দিয়ে দেখতে পারেন।
—অত সাহস নেই। আপনি পাঠান।
বউকে এসএমএস পাঠালাম, ‘ও বউ, বিয়ে কারে কয়?’ মিনিটের মধ্যে রিপ্লাই, সন্ধ্যায় বাসায় এসে যদি দেখি দুপুরের খাবার খেয়ে সব গুছিয়ে রাখনি, ড্রয়িংরুম, বেডরুম এলোমেলো করে রেখেছ—তখন দৌড়ানি দিলে বুঝবে বিয়ে কারে কয়! 


ঢাকা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.