শিবেন মণ্ডল


                                                                               ছোট গল্প 



বাসন্তী
~~~~~~~~~~~





গ্রামের এক কোনে বাঁশ আর ধুতুরা জঙ্গলের ভিতর ওর ছোট্ট একচালা মাটির ঘর ,ওদিকে কেউ যায় না সচরাচর ।ঘরের চারদিক নোংরা ,উঠন বলতে কিছু নেই ।দীনতা এতো বেশি যে প্রকাশ করার মত কিছু নেই ।সে বার বর্ষায় দেয়ালের একদিক কিছুটা পরে গেছে ,রাতে হু হু করে বাতাস ঢুকে ঘরে ।ওর মাটিতেই বিছানা পাতা ,মোটা করে খর বিছিয়ে তার উপর চটের বস্তা পাতা ।দু এক দিন পর পর ওর চুলায় ধোঁয়া উঠতে দেখা যায় ,ওখানে কি রান্না হয় আর সে কি খেয়ে বাঁচে সে খবর গ্রামের কেউ রাখে না ।

অপুষ্টি আর রক্ত শূন্যতায় ভুগে ভুগে শরীরের হাড় গুলি প্রতিবাদ করে চামড়া ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায় ।চোখ দুটি কিছুটা ঢুকে গেছে মাথার খুলির ভেতরে ।স্নান আর যত্নের অভাবে চুলে জট-পাকিয়ে গেছে ।লজ্জা ঢাকতে যে কাপড় দরকার সেটুকুই শুধু আছে তবু মাঝে মাঝে কয়েক জায়গায় ছেঁড়া ,গ্রামের লোকদের নজরে পরলে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নেয় ।পৃথিবীর যতো ময়লা সব এসে লেগেছে ওর গায়ে তাই বুঝি আসল গায়ের রং কি তা চেনা যায় না ।বয়সটা ২০ নাকি ৩০ তা অনুমান করার উপায় নেই ।গ্রামের সবাই ওকে বাসন্তী পাগলী বলে ডাকে ।

কিছু দিন ধরে গ্রামের লোকেরা বলাবলি করছে যে ,বসন্তী পাগলী আর বেশি দিন বাঁচবে না ,ওর পেটে বড় টিউমার গোছের কিছু একটা হয়েছে বলে সবাই ধারনা করছে ,দিন দিন ওর পেট কেমন বড় হয়ে যাচ্ছে ।

সেদিন সকালে গ্রামের লোকেদের অবাক করে দিয়ে খবর রটে গেল,বাসন্তী পাগলী মেয়ে সন্তান প্রসব করেছে ।সবার মাঝে শুরু হয়ে গেল আলোচনা সমালোচনা ,ছি ছি করেতে শুরু করলো সবাই ,হাসি ঠাট্টায় কে কোন দিকে কল্পনায় ধারনা করে গড়িয়ে নিয়ে গেল বাসন্তী পাগলীর সদ্যজাত মেয়ের জন্মের ইতিহাস তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই ।দারুণ মজার এক বিনোদনের রসদ হয়ে উঠলো বাসন্তী ও তার মেয়ে আর এই বিনোদন প্রেমীদের রক্তে কোন পাগলামীর বীজ ছিলো না,এবং এই সমাজেরই কোন এক জন বাসন্তীর গর্ভে বপন করে দিয়েছিলো আধুনিকতা ।

কয়েক জন সমাজ সেবী এসে বাসন্তিকে প্রশ্ন করলো ,তোর মেয়ের বাবা কে?চিনিস তাকে ,মনে আছে তোর ?কি নাম ?বল ।
বাসন্তী ঐ ও বাড়ির মেজো ছেলের নাম বললো ,বার বার বললো ।
পরদিন বিকেলে স্কুল মাঠে অনেক লোক জমা হল ।কয়েক গ্রামের প্রধানেরা ডেকে পাঠাল সেই ছেলে আর বাসন্তী পাগলীকে ।
বাসন্তীকে প্রশ্ন করলো ,তোর মেয়ের বাবা কে ?
বাসন্তী আঙ্গুল তুলে সেই ছেলেটিকে দেখিয়ে দিলো ।
এবার ওরা কয়েকটি প্রশ্ন একসাথে করলো বাসন্তিকে ,কবে ?কখন?কিভাবে ? ।ইত্যাদি ।

থই থই করা এতো লোকের মাঝে লজ্জায় বাসন্তী মাটির সাথে মিশে যেতে লাগল ,দুর্বল লিকলিকে শরীর কেঁপেকেঁপে গেল সাথে দুলে উঠল মাথার জট বাঁধা চুল ,বসে যাওয়া চোখ থেকে ঝরঝর করে গড়িয়ে পড়লো জল ,সে তার মেয়েকে আরো শক্ত করে বুকের মাঝে জরিয়ে ধরল ,মাথা নিচু করে সভ্য মানুষের ভিড় ঠেলে বেরিয়ে গেলো পাগলী ।
কদিন পর শোনা গেল যে ,সেই ছেলেটি গ্রাম প্রধানদের অনেক টাকা দিয়েছিল ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

সুচিন্তিত মতামত দিন