
" এক জীবনের গল্প "
অন্তঃশিলার অন্তলীলায় বেঁচে আছেন লীলাবতী
বার্ধক্যের ভারে কাঁপনে কাতরায় প্রহরে প্রহর
চশমার স্ক্রু'টা বার বার আলগা হয়ে যায়
সুতোর বাঁধনে বাঁধা কানের মঞ্জুরি টানায়।
বারে বারে স্মৃতির পট হাতড়ে বেড়ায়,
একমাত্র সন্তান জন্ম নেয় বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে;
কষ্টপীড়নে নির্মুল জোছনার প্লাবন বয়ে-
পিতার আশার আলোকে "জন্ম" নামকরণেই
সেদিনের শিশুটি ঘাত প্রতিঘাতের মাঝেই বড় হয়,
পট পরিবর্তনে পরিনত হয় যোদ্ধায়।
"জন্ম" নামেই যেন বীর-বীরত্বের স্বার্থকতা।
আঠারো'তে যৌবনের যৌক্তিকতায় বাবা মজিদ মাষ্টার-
বন্ধুকন্যা ভূমি'র বন্ধনে বেঁধে দিলেন প্রজাপতি।
'চৌদ্দ' স্বয়ংম্বরা ভূমি লজ্জাবিরাজে সঙ্কুচিত সংকোচে-
বাবা-মার সান্নিধ্যে কাটায় বন্ধনে জুড়ি।
"জন্ম"-রক্ত নেশার ডাকে একাত্তরে বীরযুদ্ধে করে গমন।
প্রেয়সীর হাতে হাত রাখি যুদ্ধকে করে বরণ,
আশার অভিলাসে লীলাবতীর কাটে দিন;
"জন্ম" তার বুকের মানিক আসলে ফিরে-
দেখবে বুঝি সোনামুখি ভূমি'র শুভ দিন।
একটানা নয় মাস যুদ্ধ হল যে শেষ, আসছে স্বয়ংম্বর;
শুভবার্তায় দেশের মাটিতে চলছে মাস ডিসেম্বর
লীলাবতী'র অপেক্ষার প্রহর ফুরায়না রহে জনমভর।
নতুন অতিথি এল জোড়া বেঁধে নিবাস-
ষোল ডিসেম্বর বিজয় মিছিলে মুক্তির আবাস,
নামকরণে লীলাবতী দু’চোখে প্লাবন ঝরায়-
"মুক্তি" নামে ডাকে অগ্রজে'রে, অনুজের নাম "বিজয়"।
রাজাকার, হায়নার রক্ত বেড়ে উঠে-
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বীর বীরাত্ত্বাধিকার সূত্র সমাদরে
লীলাবতী সঙ্গটানে লীলার ঘোর কান্তারে।
জন্মসূত্রে 'পিতা-যোদ্ধা', 'মা জন্ম দিয়েই নিথরবাসে-
বীরযোদ্ধার শেষ চিহ্ন বক্তৃতায় বাহাদুরে রহে অনিমেষ,
মুক্তির দেশ, বিজয়ের দেশ, সুজলা-সুফলা-
শষ্য শ্যামলা-সোনার বাংলাদেশ,
চিরদিনের জন্য হায়নার বংশ হোক নিঃশেষ।।

" নিমগ্নতায় কৌতুহলী চিত্ত "
পৃথিবীর অজানা রহস্যের পরিমন্ডল-
ঘুরে দেখার বড্ড স্বাধ ছিল,
উপভোগ করার ইচ্ছে ছিল এর রূপ-রস-গন্ধ।
অগোচরে দেখার স্বাধ'টা-
অতিমাত্রায় উৎসাহিত করেছিল আমায় !
দেখলাম প্রকৃতি'র প্রসিদ্ধতা, আরও দেখলাম
মুখ থুবড়ে পড়া মোহাচ্ছন্ন মায়াজাল,
যতোটা তাচ্ছিল্যতা'য় ভাবাবেগ নিয়ে আমরা সঙ্কিত
ঠিক ততোটা অশুদ্ধ নয় অজানা রহস্যের মতোভেদ।
চঞ্চলতা ভীষন ভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করতো আমায়
সঙ্কিত হতাম'ও অন্তরালে, তবু কৌতুহল-
উত্তরে জানাতো ভয় নেই, ভয় নেই !
শব্দের ভেদ সঞ্চয়ে কৌতুহল'ই তোমায় উজ্জীবিত রাখবে
জানবে অজানাকে, দেখবে রহস্য উন্মোচনে শব্দের সমৃদ্ধি।
দেখেছি তারা ভরা আকাশের আঁধারে সংলাপ !
কতোটা সমবেদনায় সৌহার্দ্যসঙ্গী হয়ে সাথ দেয় বিরহী অন্তঃবিলাপ,
দেখেছি কতটা নগ্নতায় প্রখরতার রবি চাঁদকে দেয় কলঙ্ক
আরো দেখেছি সৌদামিনী'দের আহাজারীতে-
কি করে নিয়ন্ত্রন রাখে সূর্য নিজ অস্তিত্ব অবকাঠামো উদয়-অস্ত রাগিনীতে।
যখন সপ্তর্ষিমন্ডল পার করে তোমার চোখে চোখ রাখলাম
নিমিষেই চিনে ফেলেছো আমার কাজল কালো চোখ !
তোমার সান্নিধ্যে এসেছিলাম ইচ্ছের আকাশে ভর করেই
কেন জানো ? দেখতে চেয়েছিলাম তোমার উপলব্ধির প্রখরতা !
তুমি যেভাবে আমায় চিনতে পারলে, আমি'ও ঠিক একই ভাবেই–
তোমাকে চিনেছি আমার অনুভূতিকুঞ্জ বিলাপের অনুরণনে।
তুমি রুদ্র প্রখরতায় দিনান্ত আঁধারে চন্দ্র'দীপে সমুজ্জ্বলিত সম্ভারে-
শান্তির সুশীতল অভিমূল বিরহ উত্তাপে স্বয়ংবর নীল,
সোনার আংটি বাঁকা হলে'ও দামী, সমসমানে নিষ্কলুষ;
চীর নিয়মের নারীত্ব বন্ধনে তাইতো 'তোমাতে-আমাতে' বহু গড়মিল।
নারীর আত্মত্যাগ স্ব-মহিমায় ইতিহাস-ধর্মের স্বরূপে'ও বিদ্যমান
যে ভাবেই যেমন পথপ্রদর্শ'কে চলছি পথ, নারী-পুরুষের সমীকরণে !
এই বিভেদ যেন চীরন্তন নিয়মের সত্যের ধারায় চলে স্রোতের ন্যায় বহমান।
বার বার হই কলঙ্ক কালিমায় তোমাতেই নতজানু
আমার শব্দের ভেদে জেগে উঠে তোমার পথ প্রদর্শনের জয়ধ্বনি,
যে দিকে যে ভাবেই তাকাই, তুমি আমার একান্ত তপস্যায়;
বিশ্বব্রহ্মান্ড ঘুরে ঘুরে পেলাম অবর্ণনীয় তিরস্কারের কলঙ্ক
আর সে কলঙ্ক পুঁজি করেই সাজালাম শব্দের বিশুদ্ধ পান্ডুলিপি
যা তুমি লালন করো সযতনে, সৃষ্টিতে মোহময় কবিতার স্বরলিপি।।
চট্টগ্রাম ।
সুচিন্তিত মতামত দিন