
স্বাধীনতা
==========
একটি শব্দ এখনো শব্দ হয়ে রয়ে গেছে আজ একচল্লিশ বছরেও আমরা এই শব্দের অর্থকে অর্থবহ করে তুলতে পারলাম কই ? কেবল-তুমি শুধু রবিঠাকুরের অজরকবিতা আর নজরুলের ঝাঁকড়া চুলে অথবা পিতার রঙিন জায়নামাজে, চাখানায় মজুর-যুবার ঘামেই আটকে গেলে ।
তুমি এলেনা এসিডে ঝলসানো নীরব কান্না মাখা ওই মেয়ে মানুষটির আশে-পাশে । তুমি আজ ও এলেনা টিফিনবাটি হাতে সেই ভোর বিয়ানবেলা ছুটে চলা সেলাই দিদিমনিদের ঘরের একচিলতে ফাঁক-

ফোকর কিন্তু কেনো বলতে পারো ? আরো একজায়গায় তোমার কৃপণতার বেশ আবেশ তা হলো -ভারী ভেলবেডের আড়ালে ঝাড়বাতি মোড়ানো অস্পষ্ট বাড়িগুলোর অসহায় মেয়েমানুষদের সাথে । আসোলে দেখতে লাগে সুখী কিন্তু ওরা বড্ড অসুখী ।আজ প্রায় বাইশ বছর ধরে পালা ক্রমে দু'ই মহিলা শাসন করছে এই স্বাধীন ভূখণ্ড অথচ কি করুণ এখনো এদেশের মেয়ে মানুষের স্বাধীনতা !
৭১ এর যুদ্ধে যে সকল নারী যুদ্ধ করেছিলো একেবারে সরাসরি সমরাস্ত্র নিয়ে তাদের চেয়ে বরং বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে বীরংগনাদের কথা (যদি ও বীরংগনা শব্দটিতে আপত্তি আছে আমার ) । বীরংগনাদের এতে কি সম্মান দেয়া হয়েছে নাকি ... ? এই নাম দেবার কি খুব দরকার ছিলো বা এভাবে চিন্নহিত করবার খুব কি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো ? কি জানি হয়তো হা হয়তো না ,আরো একটু ভেবে দেখা যেতে পারতো !সবাই যদি মুক্তিযোদ্ধা হত ক্ষতি কি ছিলো ?
এখনো এই বিংশ শতাব্দিতে এই স্বাধীন দেশে একই সিলেবাস ,একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা শেষ করে নারী-পুরুষ যখন কাজে যোগ দেয় আর সেই কাজে যদি নারী সহকর্মীটির কাজের উন্নতি হয় পুরুষ সহকর্মীরা অন্যভাবে তার বহিপ্রকাশ করে ।এখনো এই দেশে পিতা-মাতা সন্তান হিসেবে ছেলে-মেয়েকে ভিন্ন চোখে দেখে ।এই কিছুদিন আগে মেয়ে সন্তান আর ছেলে সন্তান পিতার সম্পত্তি সমান কেনো পাবেনা এই প্রশ্নে ব্যাপক ঝড় উঠেছিলো আর তাতে দেখেছি অনেক শিক্ষিত বাবাদের ও বলতে শুনেছি " মেয়েদের সম্পত্তি লাগবে কেনো ওরা তো স্বামীর সম্পত্তি পায় " ! উত্তর দিয়েছিলাম "স্বামীর যদি সম্পত্তি না থাকে বা না দেয় " ?
সবামী ও তো স্ত্রীর সম্পত্তি ভোগ করে পায় ব্যাপারটা তো এক রকম ই তাহলে সে কেনো পিতার সম্পত্তির বেশী ভাগ পাবে ?আর জন্ম থেকেই যখন একজন শিশু জানে সে তার ভাইটির থেকে আলাদা মানের আলাদা মাপের তাহলে সেই অবুঝ মেয়েবেলা থেকেই তার ভেতরে যে হীনমন্যতা বাস করতে শুরু করে তার প্রতিচ্ছায়া এসে কি বাস্তব জীবনে না পড়ে পারবে ? অথচ সেই মেয়েটিকেই একদিন কারো বাড়ির বউ হয়ে সবার মন রক্ষা করে চলতে হয় , কারো স্ত্রী হয়ে উদারতা দেখাতে হয় , মা হয়ে সকল স্বার্থত্যাগের মহিমা দেখিয়ে যেতে হয় । এমন সব কঠিন পরিক্ষা দিতে দিতে সেই মানুষটি নিজের পরিচয় ,নাম সব ভুলে যায় একদিন পরিণত হয় এক অন্য মানুষে যা সে কনোদিন কল্পনায় ও আনেনি ।
ভার্চুয়াল জগতের কথায় একটু আসি এবারে --
এখানেও স্বাধীনতা ভাগ করে দেয়া হয় । এখানে কোনো নারী বা মেয়ে যদি তার অবসর সময় কাটাতে আসে বা যার কিছুই করার ছিলোনা রান্না আর ঘরের কাজ ছাড়া ,যাকে এক খন্ড সময় কেউ দিতোনা সারা বছরে , জানতে ও চাইতোনা কেমন করে তার সময়গুলো কাটে ?সেই নারী বা মেয়ে যখন নিজের একটা জগত এই ভার্চুয়াল খোলা মাঠে করে নেয় সেখানেও বিপত্তি আসে , প্রশ্ন উঠে সুখী কেনো এই নারী! যেনো নারীকে কিছু নিয়ে সুখী থাকতে নেই । অথচ এক ই ঘরে পুরুষ বা ছেলে একি কাজ করছে রাত্রি-দিন সেখানে প্রশ্ন উঠছেনা ।
আবার এমন ও শুনেছি আমি নিজে জনৈক প্রগতিশীল মানুষ বলেই জানি কারণ মিডিয়াতে নাটক বানিয়ে সমাজ পাল্টে দেবার কথা বলে অথচ- আমাকেই তিনি একদিন রাত ১১ তা হবে প্রশ্ন করে বসলেন "এতো রাতে আপনি" ?
আমি বললাম কেনো কতো রাত হয়েছে ? আর রাত হলেই কি ? এটা কি বাংলাদেশের রাস্তা যে এতো রাতে একজন নারী যেতে পারবেনা ? অথবা কই আমি তো জানতে চাইনি আপনি কেনো এতো রাতে ? এমন অনেক প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় এই বিংশ শতাব্দীর স্বাধীন দেশের মেয়ে বা নারীদের ।
স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয় কিন্তু আবার স্বাধীনতা এও নয় যে একজন পরুষের জন্যে রাষ্ট্র এক আইন করবে আর নারীর জন্য ভিন্ন আইন ! একজন পুরুষ ইচ্ছে হলেই রাত যতো হোক রাস্তায় যেতে পারবে আর নারী গেলেই সে খারাপ নারী হিসেবে চিন্নহিত হয়ে যাবে । নারী শুধু মানুষ হতে চায় আর কিছুনা ।
সেই নারী আপনার মেয়ে ,বোন ,স্ত্রী, বন্ধু এবং অবশেষে আপনার ই মা । তারা ভিন্ন কোনো গ্রহ থেকে আসেনি বা চলেও যাবেনা
মৃত্যুর পরে এক মাটিতেই আমাদের প্রস্থান সেখানে কনো ভিন্নতা নেই ভিন্নতা নিয়ে এসেছে মানুষ আর তা এই মাটির উপরের পৃথিবীতে !স্বাধীনতার এই একচল্লিশ বছরের প্রথম সকালে এই কামনা করতে চাই--- দ্রুত আমাদের আপনাদের পাশে মানুষ হয়ে বাঁচতে দিন , একটু নিঃশ্বাস নিতে দিন ।
( অতিথি লেখক )
সুচিন্তিত মতামত দিন