ইন্দ্রাণী সরকার










ঠাকুরমার ঝুলি 

স্বপ্ন-নীল ও স্বপ্ন-নীল 
চোখের মাঝে অতল ঝিল |
ডুবকি দিয়ে ঝিলের মাঝে 
রাজার কুমার মুক্ত খোঁজে ||
চাঁদের আলো উছলে পড়ে 
ঝিলের 'পরে আলস ভরে |
রাজার কুমার হন্যে হয়ে 
মুক্ত খোঁজে দুহাত দিয়ে ||
হঠাৎ পেয়ে মুক্ত - ছোঁয়া 
রাজকুমারের অবাক হওয়া |
অবাক চোখ তুললো যখন 
সামনে দেখে দাঁড়িয়ে জীবন |
বাড়ায়ে হাত সে হাস্যমুখী 
খুশির আলোয় ভাসছে আঁখি ||
মুক্ত লুকোনো তারই চোখে 
কুমার হল অবাক দেখে |
ভালোবাসার মুক্ত ভরা 
সেই চোখে সে পড়ল ধরা ||
মনের মিলন সুখ আলাপন
স্বপ্নে ভরে দোঁহার জীবন |
ঝুলির মুখ এবার বন্ধ হল 
ঠাকুরমা তুমি ঘরে চল ||


আমার বুলবুলির গল্প 

শোন বন্ধু শোন -----
আজকে বলি চুপিচুপি 
আমার বুলবুলিটার গল্প .....
অনেক আগে যখন আমি 
ইস্কুলেতে যেতাম 
বাচ্ছা বুলি পড়ল খসে 
মাটির 'পরে ধপাঙ |
মা আমার কুড়িয়ে নিল
ছোট্ট বুলি টাকে 
পলতে করে দুধ খাওয়াত 
যত্নে তারে রেখে |
যেমনি আমি যেতাম ঘরে 
অমনি উড়ে এসে 
কাঁধেড় উপর বসত সে যে 
পরম ভালোবেসে |
ঘাড় ঘুড়িয়ে চোখ নাচিয়ে 
বলত মনের কথা |
কী সুন্দর গাইতো যে গান 
দুলিয়ে ছোট্ট মাথা |
একদিন ওই বুলির গায় 
হলো একটা ক্ষত ,
তার পরেতেই বুলি আমার 
চুপটি করেই যেত |
কোথায় গেল ঘাড় ঘোরানো 
কোথায় গেল গান ,
একদিন সে চলে গেল 
নিয়ে ছোট্ট প্রাণ |
ও বুলিরে এখনো তোকে 
ভুলতে পারি না যে |
চোখের জল অমনি পড়ে 
মন লাগে না কাজে ||



হাঁদা আর ভোঁদার ঝগড়া 


ভোঁদা কয় হাঁদারে - ওরে মোর হাঁদা ভাই 
তোর মত মাথা মোটা কভু আর দেখি নাই |
যে কাজেই দিস হাত করে দিস ভন্ডুল 
যদিও ভাবিস মনে সব কিছু নির্ভুল ||
গাছে জল দিতে গিয়ে ভাঙিস জলের পাইপ 
বাড়াবাড়ি সবেতে, সবেতেই হাইপ |
সেদিন যেমন সারাতে গিয়ে ইলেকট্রিকের আলো 
শর্ট সার্কিট করলি শেষে কী যে বাজে হলো ||
অন্ধকারে বন্দী হয়ে চক্ষু হলো ঝাপসা 
ইলেকত্রিসিয়ান আসবে কখন সেই ত' শেষ ভরসা |
ঐ ত' সেদিন মাছি মারতে ভাংলি জলের গ্লাস 
পা পিছলে আলুর দম আমিই হলাম ধপাস ||
আর কী বলি, বলার কী আর শেষ আছে কী ছাই 
নিত্য নুতন খেয়ালে চলিস আমার হাঁদা ভাই ||
শুনে হাঁদা কয় ভোঁদারে - ওরে ছুঁচো পাজি 
খেয়েখেয়ে খালি মোটাই হস্ আর দেখাস ভোজবাজি |
নিজেকে ভাবিস বড্ড চালাক কাজের বেলায় ফক্কা 
আসলে তোর মাথায় গোবর , মোটকা ভোঁদা ডবক়া ||
তোর কাজে তে খুশি হয়ে দিলেন বাবা টাকা 
একাই খেলি সব খাওয়াটাই পকেট করে ফাঁকা |
কপাল ভালো তাই পেয়ে যাস সব কাজেতে খ্যাতি 
নয়ত কী আর জানিনা তুই মস্ত একটা হাতি ||



প্যাঁচা আর প্যাঁচানি


প্যাঁচা কয়, "প্যাঁচানি,
ওরে আমার সোনামণি,
দেখে তোর মুখখানি 
ভরে আমার প্রাণ |
যখন তাকাস্ যে ওরে 
আমার দিকেতে ফিরে 
ট্যারা চোখের তীরে 
হারাই আমি জ্ঞান |"
শুনে বলে প্যাঁচানি,
"মেলা শুধু চেঁচাস্ নি 
বড্ড তোর ন্যাকামি 
ঝালাপালা হয় কান |
কাজের সময় নেই হদিস্ 
বড্ড বেশি বাক্যবাগিস 
মিথ্যে মিথ্যে কেন করিস 
ভালোবাসার ভান |




টুনটুনি 


টুনটুনি যে নামটি তার
মাথায় কালো চুল |
নরম নরম গাল দুটি
আদুরী তুল তুল ||
চোখের কোনে দুষ্টু হাসি
ঠোঁটটি টেপা লাল |
ছটফটানি এদিক ওদিক
টক মিষ্টি ঝাল ||
অবুঝ ছোট পা দুটি তার
লাফিয়ে লাফিয়ে চলে |
মাথা নাড়িয়ে চোখ নাচিয়ে
কতই কথা বলে ||
মুন্নি তার নাম রেখেছি
অনেক আদর করে |
সোনামনি মুন্নি বাবু
মনটি রাখে ভরে ||


লালকমল আর নীলকমল 


শোন শোন বন্ধুরা
আজকে বলব চুপিচুপি
লালকমল আর নীলকমলের গল্প ....
অজিত আর কুসুম
হচ্ছে দুটি ভাই ...
কুসুমের মা মানুষী
আর অজিতের মা রাক্ষুসী
দুজনে কিন্তু খুব মিল ....
রাক্ষুসী রানী রাগেতে
করে দাঁত কড়মড়
ওরে দেখরে আপন পেটের পুত্তুর
হলো কী না আমার শত্তুর ....
খাবো খাবো খাবো ....
আমি কুসুমকে খাবো....
রাক্ষুসী রানী রোজ শোবার আগে
বিছানার তলায় পাটকাঠি রাখে |
যেই না রাজা আসে সে
রাক্ষুসী এ পাশ ওপাশ করে
আর পাটকাঠি ভাঙে ...
রাজা বলে রানী তোমার
কী হয়েছে ?
রানী বলে উরি বাবা রে
আমার হাড় মটমটি
ব্যারাম হয়েছে...
রাজা ভয়ে পালান ....
তখন জানো রাক্ষুসী
মাঝ রাতে উঠে
হাতিশালে হাতি
ঘোড়াসালে ঘোড়া
গিলে খায় গপাত |
রোজ রোজ রাজা
দেখে এ কী - সবার
গালে হাত !
ভারী আশ্চর্য ?
একদিন বদমাইস রানী
করল কী, রাত্রে উঠে
ঘুমন্ত কুসুম আর
অজিত কে ফেলল
গিলে গপাত ...
ওরে বাবা তারপরে
রানীর কী পেট ব্যথা ...
রানী হাউ হাউ করে
কেঁদে সব উগরে
বার করে দিলো...
এদিকে কী হলো
অজিত আর কুসুম
দুটো ছোট্ট ডিম হয়ে গেল ...
পরদিন সকালে এক চাষী
দেখে মাঠের উপর ছোট্ট
দুটি ডিম ....চাষী অবাক ....
বলে - হাট্টি মাটিম টিম
দেখি মাঠে দুটো ডিম
একটার রঙ লাল
আর একটার রঙ নীল
লালকমল আর নীলকমলের
বড্ড দেখি মিল ....
যেই না বলা অমনি
ডিম ফেটে বেড়িয়ে এলো
রাজার দুই ছেলে....
লালকমল আর নীলকমল |
তারা শুনলো এই গ্রামেতে
এসেছে এক খোক্কসের দল
তারা সব লোক খেয়ে নিচ্ছে |
লালকমল আর নীলকমল
এই না শুনে রাতের বেলায়
অন্ধকারে বসে থাকে
খোক্কসদের বাড়িতে ....
তারপর একে একে সব
খোক্কস মেরে তারা হল
ওই দেশের রাজা ...
সেই দেশের দুই
রাজকন্যের সঙ্গে ধুমধাম
করে বিয়ে হয়ে গেল ....
এ দিকে একদিন আগের
রাজা মশাইকে প্রহরী
খবর দিলো যে ছোট রানী
রাত্রে রাক্ষুসী হয়ে
সব হাতি ঘোড়া গেলে|
এই না শুনে রাজা মশাই
লালকমল আর নীলকমলকে
ডাক দিলেন ....
লালকমল নীলকমল
ব্যঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী
পাখির কাছে জানতে
পারল রাক্ষুসীর প্রাণ
আছে কুয়োর নীচে
এক ভোমরার পেটে
একটা কৌটোর মধ্যে |
এই না শুনে নীলকমল
দিল জলে এক ডুব
অমনি পৌঁছে গেল
জলের তলায় যেখানে
কৌটোতে ভোমরা আছে
তারপর সে কৌটো খুলে
হাতে চেপে ভোমরাটা
মেরে ফেলল ....
অমনি রাক্ষুসী রানী
হাঁউমাউ করে অক্কা |
এখন আমার গল্প শেষ ....
লাগল কী বেশ ?


ঝিল পরী 


ঝিল পরী ও ঝিল পরী
মনমাতানো রঙ ধরি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
রূপের আগুন যায় ঝরি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
বেয়ে চল গানের তরী |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
অস্তরাগের স্বপ্ন ভরি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
ঝরাও চিতে শান্তি বারি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
মনটা আমার নেয় হরি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
কোথা যাও আমায় ছাড়ি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
পড়াই তোমায় হাতকড়ি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
তোমার বীনায় গান করি |
ঝিল পরী ও ঝিল পরী
রাখব তোরে হৃদমাঝারি ||


হেঁচো আর হেঁপো

হেঁচো আর হেঁপো বাবু
চলেন ট্রেনে চড়ে
হঠাৎ করে হেঁচোবাবুর
সর্দি এলে তেড়ে |
হ্যাঁচ্ছ করে হেঁচোবাবু
বলেন তেড়েমেড়ে
জানলাটা বন্ধ কর
সর্দি লাগে যে রে |
এই না বলে হেঁচোবাবু
শার্সি ধরে নামান
তাই না দেখে হেঁপোবাবুর
বাড়ল হাঁপের টান |
হাঁপিয়ে বলেন হেঁপোবাবু,
তোমার পায়ে পড়ি,
জানলাটা একটু খোলো
শ্বাস না নিয়ে যে মরি !
অমনি বলে দড়াম করে
জানলা টেনে নামান
বলেন তিনি হাস্যমুখে ,
আঃ, কী যে আরাম !
তারপরেতে কী যে হল
ভেবেই পাই না কূল
শুধুই শুনি দড়াম দড়াম
চোখেতে সর্ষে ফুল |
অবশেষে বলি আমি,
থামুন দেখি মশাই
দেখছেন কী জানলাটিতে
কাঁচ -ই কোন যে নাই !
শুধু শুধুই এই ঝামেলা
করেন যে ভায়ারা
নাক নিয়েছে কোন্ কাকেতে
ভেবেই হলেন সারা ?







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.